সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাজার ফেরত

ইকবাল খন্দকার

বাজার ফেরত

► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ  ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বড়ভাই বললেন, কী দিনকাল যে আসল! আগে রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে কী দারুণ একটা সম্পর্ক ছিল! অথচ এখন তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। কবে যে এই অবস্থার উন্নতি হবে! আমি বললাম, উন্নতি অবনতি পরের ব্যাপার। আগে বলেন রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণ কী। বড়ভাই বললেন, কারণ একটাই, রিকশায় উঠি না। কেন উঠি না জানিস? কারণ, আগে যখন বাজারে যেতাম, হেঁটে হেঁটে যেতাম। যেহেতু বাজার বাসার কাছেই। তবে বাজার থেকে ফিরতাম রিকশায় করে। কারণ, হাতে বিরাট বাজারের ব্যাগ থাকত। ওজনদার ব্যাগ। আর এখন জিনিসপত্রের দাম এত বেশি বেড়ে গেছে যে, এখন বাজারে গেলে প্রায় খালি হাতে ফিরতে হয়। বাজার-সদাই কিছু করলেও তার ওজন কোনোভাবেই দুই-তিন কেজির বেশি হয় না। ফলে রিকশায় ওঠার দরকারই পড়ে না। এভাবেই রিকশাওয়ালার সঙ্গে দূরত্ব বেড়েই যাচ্ছে। আবার হাতে ভারী ব্যাগ নিলে মাসলের যে ব্যায়ামটা হতো, তাও এখন আর হচ্ছে না। একদম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছি। কী যে করি!

আমার এক বন্ধু বলল, আমরা যখন বিয়েশাদি করেছি, তখন ‘বিলেতফেরত’ পাত্রের সাংঘাতিক ডিমান্ড ছিল। বিলেতফেরত মানেই বিশেষ কিছু। আর এখন বিলেতফেরতের চেয়ে বাজার ফেরত কথাটাই বেশি প্রচলিত। আফসোসের বিষয় হচ্ছে, বিলেতফেরত ছেলেকে সবাই মাথায় তুলে নাচলেও বাজার ফেরত স্বামীকে কোনো বউ মাথায় তুলে নাচে না। বরং আছাড় মারার চেষ্টা করে। এ জন্যই হয়তো কবি বলেছেন, এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না! আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বুঝলেন ভাই সাহেব, সংসারে মান-সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে বুদ্ধি থাকতে হবে। বুদ্ধি না থাকলে খুব বিপদ। আমার বুদ্ধি আছে। আর সেই বুদ্ধি আমি সময়মতো খাটাচ্ছি বলে নিরাপদে আছি, শান্তিতে আছি। আমি জানতে চাইলাম সম্প্রতি তিনি কী ধরনের বুদ্ধি খাটিয়েছেন। প্রতিবেশী বললেন, আমার বউ আমার বাজার করা নিয়ে বেশ কদিন ধরেই গোস্সা প্রকাশ করছিল। কারণ, আমি বড় মাছের পরিবর্তে ছোট মাছ আনছি। আমি বললাম, এটা তো অবশ্যই সংসারে অশান্তির কারণ। রান্নাবান্নার কাজে বউরা প্রয়োজনীয় জিনিস না পেলে ঝামেলা বাধাবে না? প্রতিবেশী হেসে বললেন, আরে নারে ভাই, কোনো অশান্তি নেই। কারণ, সেইরকম বুদ্ধি খাটিয়েছি। আমি জানতে চাইলাম কী ধরনের বুদ্ধি। প্রতিবেশী বললেন, আমার বউয়ের চোখের পাওয়ারে খানিকটা সমস্যা আছে। যে কারণে ডাক্তার তাকে চশমা নিতে বলেছিল। আমি তাকে চশমা কিনে দেওয়ার পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্যবর্ধক খাবার খাওয়ার ব্যাপারে জোর মনোযোগ দিয়েছি। বড় মাছের বদলে ছোট মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। বড় মাছের কথা উঠলেই বলে দিচ্ছি, ‘ছোটমাছ তো চোখের জন্য ভালো।’ ফলে বউ একদমই হাউকাউ করে না। সংসারে পর্যাপ্ত শান্তি বিরাজমান।

আমার এক ভাবি বললেন, যা বুঝলাম, আপনার ভাইকে ধরে গাছের সঙ্গে একটা বাড়ি মারতে হবে। তাতে যদি তার স্মৃতিশক্তি স্বাভাবিক হয়। বাংলা সিনেমায় এ ধরনের বাড়ি মারা বা বাড়ি খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায় তো!  আমি বললাম, কথা সত্য। কিন্তু ভাইয়ের মধ্যে তো        অস্বাভাবিক কিছু দেখি না। তাহলে বাড়ি মারার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কেন? ভাবি বললেন, কে বলেছে আপনার ভাইয়ের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই? আপনি জানেন, তাকে দশটা সদাইয়ের কথা বলে বাজারে পাঠালে ২টা বা ৩টা নিয়ে ফিরে আসে। বাকিগুলোর কথা নাকি মনে থাকে না। আমি এবার মনে মনে বললাম, এই সমস্যা তো আজকাল সব স্বামীর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সব স্বামীর স্মৃতিশক্তি স্বাভাবিক করতে যে গাছে বাড়ি মারবেন, এত গাছ পাবেন কই?

সর্বশেষ খবর