সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডিম কাহিনি...

ইকবাল খন্দকার

ডিম কাহিনি...

♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই বলল, অবস্থা যা তাতে মনে হচ্ছে অযোগ্যরা এগিয়ে যাবে। মোটকথা তারা যে অযোগ্য এটা বোঝানোর আর কোনো উপায় থাকল না। অথচ আগে কত সহজে বুঝিয়ে দেওয়া যেত। এখন সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। আমি বললাম, তুই কীসের কথা বলছিস, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু বুঝিয়ে বল। ছোটভাই বলল, বেসুরো গানের প্রচলন আগেও ছিল এখনো আছে; কিন্তু আগে মঞ্চে উঠে কেউ বেসুরো গান গাইলে আমরা পচা ডিম ছুড়ে মারতাম। পর্যাপ্ত পচা ডিম না পেলে ভালো ডিমও ছুড়তাম। অনেক সময় এমনও হতো ডিম দেখলেই সেই বেসুরো শিল্পী ভয়ে মঞ্চ থেকে নেমে পড়ত। কারণ সে ধরেই নিত ডিমগুলো পচা। এখন ডিমের দাম এতই বেড়ে গেছে যে, ছোড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডিম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ডিম এখন পচারই সুযোগ পাচ্ছে না। আর ভালো ডিম ছোড়ার কথা তো চিন্তাও করা যায় না। এতে হবে কি বেসুরো শিল্পীরা সাহস পেয়ে যাবে। তারা মঞ্চ থেকে নামতে চাইবে না। ডিম ছোড়ার ভয় দেখাবেন? তাতে তারা আরও দ্বিগুণ উৎসাহ পাবে। কারণ ডিমটা যদি ভালো হয় আর একটা ডিম যদি ‘ক্যাচ’ ধরে ফেলতে পারে তাহলে কতগুলো টাকা একবার চিন্তা করেন।

আমার এক বড়ভাই বললেন, আর হলো না। হতে গিয়েও হলো না। এভাবে একটা রাস্তা হাতছাড়া হয়ে যাবে এটা চিন্তা করা যায় না। আমি বললাম, কীসের কথা বলছেন? কীসের রাস্তা? বড়ভাই বললেন, শান্তির রাস্তা। বলতে পারিস শান্তির উপায়। শান্তির উপায়টা হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমি জানতে চাইলাম, কেন? কীভাবে? বড়ভাই বললেন, আগে তোর ভাবি প্রায়ই খোঁটা দিত, সংসারের হাঁড়ি ঠেলতে ঠেলতে নাকি তার জীবন শেষ। এটা নিয়ে সে ভালোই চিল্লাফাল্লা করত। আমি তখন বলতাম কি, আরে সংসারের হাঁড়ি ঠেলা কি কঠিন কোনো কাজ। এটা যে কঠিন কোনো কাজ না বরং সহজ কাজ, সেটা প্রমাণ করে দিচ্ছি। এটা বলে আমি ডিম ভাজি করে ফেলতাম, তোর ভাবিকে আর হাঁড়ি না ঠেললেও চলত। এতে সংসারে শান্তি বিরাজ করত। কিন্তু এখন ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তো সেই শান্তির পথটাও বন্ধ হয়ে গেল রে। এখন তো চাইলেই হুট করে ডিম ভাজি করে ফেলতে পারছি না। করি কী? আমি বললাম, কী আর করবেন, আপাতত করলা ভাজি করা শিখে নেন। কারণ যতদূর জানতে পেরেছি করলার দাম সম্প্রতি বাড়েনি। অবশ্য আমার জানাটা সঠিক না-ও হতে পারে। আমার এক বন্ধু বলল, বুদ্ধি থাকলে যে কোনো সংকটই কাটিয়ে ওঠা যায়। সবাই বলছে ডিমের দাম নাকি ম্যালা। এ জন্য ডিম খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে কেউ কেউ। কিন্তু আমার বুদ্ধি আছে। এ জন্য এ সংকটকে কোনো সংকটই মনে করছি না। সমানে ডিম খেয়ে যাচ্ছি। এক বসায়ই শত শত ডিম খেয়ে ফেলছি। আমি অবাক হয়ে বললাম, বলিস কী! এক বসায় তুই শত শত ডিম খাচ্ছিস? বন্ধু বলল, শত শত ডিম তো খাচ্ছিই, হাজারও হতে পারে। মাছের ডিম তো! আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভালোই সুবিধা হয়েছে। এখন ডাক্তারের সঙ্গে আমার আর কোনো বিরোধ হচ্ছে না। আমি বললাম, আগে কী ধরনের বিরোধ হতো? প্রতিবেশী বললেন, হরেক কিসিমের বিরোধ। ডাক্তার বলত ডিমের কুসুম নাকি খাওয়া যাবে না। আবার বলত বেশি সিদ্ধ করা যাবে না। এতসব নিয়ম-কানুন মনে রাখতে গিয়ে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাওয়ার দশা হয়েছিল। ডাক্তারের সঙ্গেও প্রায়ই তর্ক হতো। এখন ডাক্তার ডিমের এটা খাওয়া যাবে না ওটা খাওয়া যাবে না বললেই বলি- যান, ডিমই খামু না। ব্যস, শান্তি আর শান্তি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর