সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চাঁদবিষয়ক আলাপ

ইকবাল খন্দকার

চাঁদবিষয়ক আলাপ

• আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ • কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বড়ভাই বললেন, এখন সবকিছু কত সহজ হয়ে গেছে! অথচ আগে কত কঠিন ছিল। ভালো, খুবই ভালো। আমি বললাম, এমন সংক্ষেপে না বলে একটু বিস্তারিত বললে ভালো হতো। মানে আগে কী কঠিন ছিল, এখন কী সহজ হলো, এ বিষয়টা আরকি। বড়ভাই বললেন, বিষয় খুবই সহজ। অতএব এত বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। ছোটবেলায় আমরা কী করেছি? ‘আয় আয় চাঁদ মামা’ বলে চাঁদকে ডাকতে ডাকতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছি। কিন্তু চাঁদ মামা আসেনি। যে কারণে চাঁদ মামার সঙ্গে দেখাও হয়নি। অথচ এখন চাঁদ মামা আসলো কি আসলো না ওইসব নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। আমরাই চলে যেতে পারি চাঁদ মামার কাছে। কত সহজ হয়ে গেল না বিষয়টা? ডাকাডাকির দরকার পড়ল না। তবে আরও সহজ হতো, যদি চাঁদ মামার কাছে যেতে চন্দ্রযান না লাগতো। যদি রিকশায় যাওয়া যেত। ভাড়া না হয় একটু বেশি নিত, সমস্যা কী! আমার এক বন্ধু বলল, চাঁদে  মানুষ গিয়েছে। এটা আনন্দের। তবে একটা বিষয় কোনোভাবেই আমার মাথায় ঢুকছে না। প্রতিটা মানুষ সেলফিবাজ। মানে সেলফি তোলার জন্য পাগল। অথচ দীর্ঘদিন ধরে চাঁদে বসবাস করছে যে মানুষটা, তার সঙ্গে এখন পর্যন্ত কেউই সেলফি তুলল না। তাহলে কি চাঁদে সেলফি তোলার মতো পরিবেশ নেই? যদি না থাকে, তাহলে বলবে তো! বললেই তো সুন্দর করে একটা সেলফি জোন বানিয়ে দেওয়া হয়। আমি বললাম, সবই বুঝলাম। তুই কার সঙ্গে সেলফি তোলার কথা বলছিস? মানে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদে কে বসবাস করছে? বন্ধু বলল, কে আবার, চাঁদের বুড়ি। আচ্ছা, তুই-ই বল তো, এখন পর্যন্ত যারা চাঁদে গিয়েছে তুই কি কাউকে চাঁদের বুড়ির সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখেছিস? চাঁদের একজন সিনিয়র সিটিজেনের প্রতি এমন অবহেলা, কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমার এক ছোটভাই বলল, চাঁদে এর আগে মানুষ গিয়েছে, ফেরতও চলে আসছে। এমন একদিন আসবে যখন মানুষ চাঁদে বসবাস করবে। কিন্তু সেটা একটু বেশিই ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। চাঁদের পরিবর্তে সূর্যে বসবাস করতে পারলে অবশ্য এত খরচ লাগত না। আমি বললাম, খরচটা কীসের? আর চাঁদে বসবাস করলে অনেক খরচ লাগবে, সূর্যে বসবাস করলে লাগবে না- কারণ কী? ছোটভাই বলল, খরচটা বিদ্যুতের। আমি মনে করি চাঁদে বসবাস করতে গেলে বিদ্যুৎ খরচের পেছনেই চলে যাবে ম্যালা টাকা। কারণ, চাঁদের নিজের কোনো আলো নেই। আলোর জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হবে বিদ্যুতের ওপর। এদিকে বিদ্যুতের দামও চড়া। অথচ চাঁদের নিজস্ব আলো না থাকলেও সূর্যের নিজস্ব আলো আছে। সুবিধাটা কোন জায়গায়, এবার বুঝতে পেরেছেন? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, মানুষ আজকাল খালি গ্রুপিং করে। যেখানে যায়, সেখানেই কমিটি-উপকমিটি বানাতে চায়। নিজে সভাপতি হতে চায়, সেক্রেটারি হতে চায়। এর জন্য আবার পোস্টারিংও করে। সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা জানায়। আমি চিন্তা করছি, ভবিষ্যতে যখন আরও বেশি সংখ্যক মানুষ চাঁদে যাবে তখন তো সেখানে কমিটি না হোক, অন্তত একটা উপকমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। কিন্তু প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা কীভাবে চালাবে? আমি বললাম, কেন? প্রচার-প্রচারণা চালাতে সমস্যা কোথায়? প্রতিবেশী বললেন, সমস্যা আছেরে ভাই! আমি এখন পর্যন্ত চাঁদের যত ছবি দেখেছি, কোনোটাতেই কোনো গাছ দেখিনি। গাছ না থাকলে ব্যানার কোথায় ঝুলাবে? বাড়িঘর বা দেয়ালও দেখিনি। তাহলে পোস্টার সাঁটাবে কোথায়?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর