সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্ধু তুমি শত্রু তুমি

মনে মনে চাই তুই যাতে আউট হোস। যাতে আমি ব্যাট করার সুযোগ পাই। কিন্তু তোর উইকেট পড়ে না। ফলে আমার ব্যাটিং করার আশা অপূর্ণই থেকে যায়...

ইকবাল খন্দকার

বন্ধু তুমি শত্রু তুমি

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই বলল, বন্ধু ছাড়া জীবনে চলা যায় না। তাই সবার জীবনে বন্ধুর দরকার আছে। তবে এটাও সত্য, বেশি বেশি বন্ধু থাকলে রাতে ঘুমানো যায় না। ঘুমের খুব ডিস্টার্ব হয়। অনেক সময় জামা-কাপড়ও ছিঁড়ে যায়। আমি অবাক হয়ে বললাম, তোর কথাবার্তা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। বেশি বেশি বন্ধু থাকলে কেন ঘুমের ডিস্টার্ব হবে? আর জামা-কাপড়ইবা ছিঁড়ে যাবে কেন? ছোটভাই বলল, বেশি বেশি বন্ধু থাকলে কোনো না কোনো বন্ধু আপনার জামা-কাপড় ধার চাইবেই। বিশেষ করে ভার্সিটির হলে বা মেসে থাকা অবস্থায়। তো আপনি যখন বন্ধুকে জামা-কাপড় ধার দেবেন এবং কয়েকদিন পরার পর বন্ধু সেই জামা-কাপড় ফেরত দেবে আর আপনি সেগুলো পরবেন, তখন বন্ধুর শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকলে সেটা আপনার গায়ে আসবেই। আর শুরু হবে চুলকানি। রাত-বিরাতে চুলকানি শুরু হয়ে গেলে কীসের ঘুম আর কীসের কী! আর চুলকানির সময় কত জামার যে সেলাই ছুটে আর কত প্যান্টের যে পকেট ছিঁড়ে!

আমার এক বড় ভাই বললেন, বন্ধু যদি বন্ধু থাকে তাহলে সবকিছু ঠিকঠাকই চলে। কিন্তু বন্ধু কোনো কারণে শত্রু হয়ে গেলে সব শেষ। তখন দেখা যায় বউ ঝাড়ু নিয়ে দরজার কাছে বসে থাকে। আরে সারা দিন অফিস করে এমনিতেই তো শরীর ক্লান্ত থাকে। এ অবস্থায় বাসায় ফিরে যদি ঝাড়ুওয়ালীর সামনে পড়ে দৌড়ানি খেতে হয় তাহলে ক্লান্ত শরীরে কতটুকুইবা দৌড়ানো যায়? আমি বললাম, একদমই দৌড়ানো যায় না। এখন বলেন বন্ধু শত্রু হয়ে যাওয়ার সঙ্গে এসব ঝাড়ু বা দৌড়াদৌড়ির কী সম্পর্ক। বড় ভাই বললেন, হয়েছে কী, বন্ধুর সঙ্গে কিন্তু আমরা সব শেয়ার করি। অর্থাৎ গোপনীয় বিষয়-আশয়। আর সেই বন্ধু শত্রু হয়ে গেলে সব গোপন ফাঁস করে দেয়। এই যেমন ধর, গতকাল এক সুন্দরী কলিগের সঙ্গে লাঞ্চ করেছিলাম, আর সেটা এক বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। কিন্তু এই বন্ধু যে ফোন করে আমার বউয়ের কাছে সব বলে দেবে এটা কি আর জানতাম? অতঃপর ঝাড়ু হাতে বউয়ের অবস্থান, ম্যারাথন গতিতে দৌড়ানো ইত্যাদি ইত্যাদি আরকি। আশা করি ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে সক্ষম হয়েছিস।

আমার এক বন্ধু বলল, বন্ধুত্ব নিঃসন্দেহে ভালো জিনিস। তবে পাড়ায় যদি ক্রিকেট খেলার মাঠ থাকে তাহলে এ বন্ধুত্বই কাল হয়ে দাঁড়ায়। আমি বললাম, কী রকম? বন্ধু বলল, কী রকম সেটা তুই খুব ভালো করেই জানিস। কেন, তুই বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে প্রতিবার আগে ব্যাট করতে নামিস না? আমিও ‘না’ করতে পারি না। শত হলেও তুই আমার বন্ধু। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় আমার আর ব্যাট করাই হয় না। মনে মনে চাই তুই যাতে আউট হোস। যাতে আমি ব্যাট করার সুযোগ পাই। কিন্তু তোর উইকেট পড়ে না। ফলে আমার ব্যাটিং করার আশা অপূর্ণই থেকে যায়। আর আমাকে এ গান গাইতে গাইতে মাঠ ছাড়তে হয়, ‘আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল...’।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, কী যে দিনকাল এলো! বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আজকাল আর টিকেই থাকছে না। এ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী? আমি বললাম, একটাই করণীয়। একটু সময় নিয়ে ফেসবুকে বসা। তারপর পাঁচ হাজার বন্ধুকে কমাতে কমাতে দুই-তিন শতে নামিয়ে নিয়ে আসা। হাজার হাজার বেহুদা বন্ধু থাকার চেয়ে দুই-তিন শ খাঁটি বন্ধু থাকা অনেক ভালো। এতে হুটহাট বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিটা কমে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর