সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফেসবুকে রাত-দিন

ইকবাল খন্দকার

ফেসবুকে রাত-দিন

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই বলল, এই যে আমরা সারা দিন ফেসবুকে পড়ে থাকি, এটা কিন্তু ঠিক না। কারণ, আমি চিন্তা করে দেখেছি, ফেসবুক জিনিসটা আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। মোটকথা, ফেসবুকের কারণে আমরা শুধু হারিয়েছি। ফেসবুক আমাদের কিছুই দেয়নি। এবার এই ছোটভাইয়ের বন্ধু বলে উঠল, তোর কথাটা ঠিক নয়। ফেসবুক আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, এটা সত্য। তবে ফেসবুকের কারণে আমরা কিছু জিনিস পেয়েছিও। অন্যদের কথা জানি না। মানে অন্যরা পেয়েছে কিনা বলতে পারব না। আমি নিজে পেয়েছি। আমি এবার অতি কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলাম ফেসবুকের কারণে সে কী পেয়েছে। ছোটভাইয়ের বন্ধু এবার চোখ থেকে চশমা খুলে আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল, এই যে, এই চশমা পেয়েছি। আগে যখন ফেসবুক চালাতাম না, তখন চোখের পাওয়ার ভালোই ছিল। তারপর যখন ফেসবুক চালাতে শুরু করলাম আর দিন-রাত কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগলাম, তখন এমনভাবে চোখের পাওয়ারের বারোটা বাজল যে, জরুরি ভিত্তিতে চশমা নিতে হলো। অতএব, ফেসবুক শুধু সব কিছু কেড়েই নেয় না, চশমার মতো কিছু জিনিস গিফটও করে।

কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু বলল, মানুষ সারা দিন ফেসবুকে কী করে, আমার বুঝে আসে না। তবে বুঝে আসার দরকার আছে। আমি তার সঙ্গে একমত পোষণ করলাম। সেই বন্ধুর সঙ্গে গতকাল আবার দেখা হলো। আমি জানতে চাইলাম সে এখন কী নিয়ে ব্যস্ত। যেহেতু আজকাল তাকে আগের মতো দেখা যায় না, পাওয়া যায় না। বন্ধু বলল, ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। এখন বলতে গেলে সারা দিনই ফেসবুকে থাকি। আমি অবাক হয়ে বললাম, তুই না কিছুদিন আগে বললি মানুষ সারা দিন ফেসবুকে কী করে তা তোর বুঝে আসে না? তাহলে এখন তুই সারা দিন ফেসবুকে কেন থাকিস? বন্ধু বলল, মানুষ সারা দিন ফেসবুকে কী করে, তা বোঝার জন্য আমি সারা দিন ফেসবুকে থাকি। যে জিনিসটা বুঝে আসছিল না, তা বুঝে আসার দরকার আছে না?

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, কিছু একটা হলেই যে মানুষ ফেসবুক লাইভে চলে আসে, এ জিনিসটা আমার ঠিক পছন্দ নয়। আমি মনে করি, এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। যখন মানুষ পুরোপুরি সচেতন হয়ে যাবে, তখন আর হুটহাট লাইভে চলে আসবে না। আমি বললাম, আপনার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু এই যে বললেন সচেতনতা বাড়াতে হবে, এটা কীভাবে সম্ভব? অর্থাৎ আমি জানতে চাচ্ছি, কোন কোন উপায়ে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে। প্রতিবেশী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন। আমি জানতে চাইলাম, কোথায় যাচ্ছেন? প্রতিবেশী বললেন, যাই, বাসায় গিয়ে অল্প সময়ের জন্য একটু লাইভে আসি। লাইভে ঢুকে ভালো করে মোটিভেশনাল স্পিচ দিলেই সচেতনতা বেড়ে যাবে।

আমার এক ভাবি বললেন, আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তাহলে আজকেই ফেসবুক বন্ধ করে দিতাম। আচ্ছা, বিদ্যুতের যেমন মেইন সুইচ থাকে, ফেসবুকের কি এই ধরনের কোনো মেইন সুইচ নেই? যেটা অফ করলে সারা দেশের ফেসবুক বন্ধ হয়ে যাবে? আমি বললাম, কী হয়েছে, যদি একটু বলতেন। না বললে তো আসলে বোঝা সম্ভব নয় আপনি কেন ফেসবুকের ওপর ক্ষ্যাপা। ভাবি বললেন, ক্ষ্যাপার একটাই কারণ, আপনার ভাই সারা দিন ফেসবুকে পড়ে থাকে। পড়ে থাকুক, ভালো কথা। কে কোন খাবারের ছবি পোস্ট করল, ওইসব দেখতে হবে কেন? কেন এই বলে খোঁটা দিতে হবে, মানুষ কত ভালো ভালো তরকারি রান্না করে তুমি কিচ্ছু পার না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর