সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খেলা নিয়ে ম্যালা কথা

ইকবাল খন্দকার

খেলা নিয়ে ম্যালা কথা

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড় ভাই বললেন, তোর ভাবি সারা দিন আমার পেছনে লেগে থাকে। আমি মোবাইলে কী দেখি, কার সঙ্গে চ্যাট করি, সব সে ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে দেখার তালে থাকে। কতবার তাকে বলেছি, গোয়েন্দাগিরি ছাড়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কথায় আছে না, চোরের দশদিন, গেরস্থের একদিন। আমার পেছনে লেগে থাকার শাস্তি সে এমনভাবে পেয়েছে, একদম খবর হয়ে গেছে। ধন্যবাদ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। বড় ভাইয়ের কথা শুনে আমি অবাক হলাম। তাকে বললাম বুঝিয়ে বলার জন্য। বড় ভাই বললেন, আমি যখন ক্রিকেট খেলা দেখি, তখনো তোর ভাবি আমার ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ তার সন্দেহ, খেলার ফাঁকে ফাঁকে আমি সুন্দরীদের সঙ্গে মোবাইলে চ্যাট করতে পারি। এদিকে আমি ডুবে থাকি খেলার মধ্যে। তারপর যেই দেখি আমার প্রিয় দল ছক্কা মেরেছে, অমনি ‘ছক্কা’ বলে লাফিয়ে উঠি। এদিকে তোর  ভাবি যে ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেদিকে খেয়ালই থাকে না। ব্যস, ‘ছক্কা’ বলে লাফিয়ে উঠলে আমার মাথা বাড়ি খায় তার নাকে অথবা থুঁতনিতে। বোঝ তাহলে শাস্তিটা সে কীভাবে পায়!

আমার এক ছোটভাই বলল, রাস্তার পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে কী যে এক বিপদে পড়লাম! গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। শার্ট খুললে দেখতে পারতেন কী পরিমাণ ঘামাচি যে উঠেছে। আমি বললাম, গরমে সিদ্ধ তো হতেই হবে। সেটা রাস্তার পাশের বাসা হোক আর গলির ভিতরের বাসাই হোক। ছোটভাই বলল, বিশ্বকাপ খেলা চলছে জানেন তো? আমার বাসাটা রাস্তার পাশে হওয়ায় রাস্তা দিয়ে যারা যায়, তারা খেলার স্কোর জানার জন্য জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারে। এতে সারা দিন আমাকে শার্ট গায়ে দিয়ে থাকতে হয়। নইলে স্কোর দেখতে গিয়ে পাবলিক যদি আমার কঙ্কালসার বডি দেখে ফেলে, তাহলে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারব? তো যেখানে খালি গায়েই গরমের জন্য টেকা যায় না, সেখানে খেলা-সংক্রান্ত পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমাকে সারা দিন হাতাওয়ালা শার্ট পরে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গায়ে ঘামাচি উঠবে না তো উঠবেটা কী? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আমার মতে এবারের বিশ্বকাপটা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত বিশ্বকাপ। আমি অবাক হয়ে বললাম, স্বাস্থ্যসম্মত বিশ্বকাপ আবার কী জিনিস? একটু কি বুঝিয়ে বলা যাবে? প্রতিবেশী বললেন, বলা যাবে মানে! অবশ্যই বলা যাবে। অন্যান্য বিশ্বকাপে একেকটা দলের সঙ্গে একেকটা দলের এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে যে, কোন দল জিতবে, কোন দল হারবে, এটা নিয়ে টেনশন করতে করতে আমার হার্টের বারোটা বেজে যেত। কিন্তু এবার বড় বড় দলের খেলা দেখেছি। কেমন যেন নিরুত্তাপ। উত্তেজনাবিহীন। বিশাল বিশাল ব্যবধানে জয় বা পরাজয়। মোটকথা, টানটান উত্তেজনাও নেই, হার্টের ওপর চাপও নেই। এর চেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিষয় আর কী হতে পারে? আমার এক ভাবি বললেন, আপনার ভাইকে নিয়ে আর পারি না। এমনিতেই দিনের বেলা নানা ঝামেলায় থাকতে হয়। ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু রাতে যে একটু ঘুমাবো, সেই উপায় নেই। এই ক্রিকেট জিনিসটা নিয়ে আর পারি না। আমি বললাম, এবার তো বিশ্বকাপ হচ্ছে দিনের বেলা। তাহলে ভাই আপনাকে রাতের বেলা কেন ডিস্টার্ব করবে? খেলাটা যদি রাতে হতো, তাহলে ধরে নিতাম টিভি দেখা নিয়ে প্রবলেম হচ্ছে। কিন্তু এখন তো কোনো প্রবলেম দেখছি না। ভাবি বললেন, আপনি প্রবলেম না দেখলে কী হবে, আমি তো দেখছি। আপনার ভাই করে কী জানেন? সারা দিন খেলা দেখে। তারপর রাতে সেটা নিয়ে আলোচনা করে। আর আলোচনাটা কোন অবস্থায় করে জানেন? ঘুমের মধ্যে। মানে স্বপ্নে। এবার আপনিই বলেন, কানের পাশে কেউ যদি ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করতেই থাকে, করতেই থাকে, তাহলে ঘুমাবো কীভাবে? এত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রেখে ঘুমানো যায়?

সর্বশেষ খবর