সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চিঠি চালাচালি

ইকবাল খন্দকার

চিঠি চালাচালি

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই বললো, চিঠি চালাচালির বিষয়টা অত্যধিক সুন্দর। একজন আরেকজনকে চিঠি দেয়, আবার সেই চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় থাকে। এই অপেক্ষার মধ্যে অন্যরকম একটা ব্যাপার আছে। যাকে বলে টানটান উত্তেজনা। আর আমি যখন চিঠি চালাচালি করতাম, তখন টানটান উত্তেজনার বিষয়টা আরও বেশি প্রকট থাকতো। সহজ ভাষায় বললে, তখন আরও বেশি টানটান উত্তেজনা ছিল আর কি। আমি বললাম- কারণ কী? ছোটভাই বললো, কারণ একটাই। হাতের লেখা। হাতের লেখা অত্যন্ত জঘন্য মানের ছিল তো! এই জন্য চিঠি দেওয়ার পরই টেনশনে থাকতাম, চিঠিটা সে পড়তে পারছে তো? নাকি অন্যের সাহায্য নিয়ে পড়তে গিয়ে অমুক তমুককে দেখাচ্ছে! না, মানে একবার পড়তে না পেরে তার বাবাকে দেখিয়েছিল তো! আব্বা, দেখেন তো এইটা কী লিখছে! আমার এক বড় ভাই বললেন, চিঠি চালাচালি করে আসলে বিশেষ কোনো লাভ হয় না। সেই তুলনায় মেসেজ চালাচালিতে ম্যালা লাভ। অতএব, আমি মনে করি চিঠি চালাচালি থেকে বের হয়ে এসে সবারই উচিত মেসেজ চালাচালিতে মনোযোগ দেওয়া। আমি বললাম, চিঠি চালাচালিতে কী এমন লস আর মেসেজ চালাচালিতে কী এমন লাভ? বড় ভাই বললেন, মাঝে মধ্যে মোবাইল কোম্পানিগুলো মেসেজ ফ্রি অফার দেয়। কিন্তু জীবনে শুনেছিস কোনো কাগজ বা কলম কোম্পানি কাগজ-কলম ফ্রি দিয়েছে? তার মানে কাগজ-কলম নিজে কিনে তারপর চিঠি লিখতে হয়, চালাচালি করতে হয়। আবার ইনভেলাপের খরচ আছে। যদি ইনভেলাপের মাধ্যমে না দিয়ে হাতে হাতে দিতে চাস, সেখানেও খরচ আছে। ওই লোক চিঠি খুলে পড়তে পড়তে মুখস্থ করে ফেলতে পারে। প্রেমিকার চিঠি দিয়ে ফেলতে পারে প্রেমিকার খালার হাতে। বোঝ তাহলে চিঠি চালাচালি কত ঝামেলার কত ব্যয়বহুল! আমার এক প্রতিবেশী বললেন, চিঠি চালাচালি করা ভালো। তবে সেটা যাতে হাতে হাতে হয়। অন্য কোনো পদ্ধতিতে হলে কিন্তু সমস্যা। তখন দেখা যাবে দাঁতের ডাক্তারের কাছে দৌড়াতে হবে। যেভাবে দৌড়াতে হয়েছিল আমার এক বন্ধুকে। আমি বললাম, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। চিঠি চালাচালি হাতে হাতে না করে অন্য কোনো উপায়ে যে করা যায়, আমার জানা ছিল না। আর দাঁতের ডাক্তারের কাছে কেন দৌড়াতে হবে, সেটাও তো বুঝতে পারছি না। প্রতিবেশী বললেন, আসলে হয়েছে কী, আমার এক বন্ধু তার পাশের ফ্ল্যাটের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতো। তখনো মোবাইলের যুগ আসেনি। তাই একজন আরেকজনকে চিঠি পাঠাতো। আর চিঠিটা কীভাবে পাঠাতো জানেন? চিঠির ভিতরে শক্ত কিছু দিয়ে অর্থাৎ চিঠি দিয়ে সেই শক্ত জিনিসটা প্যাঁচিয়ে তারপর ঢিল ছুড়তো। যেমন ধরেন আপেল বা এই জাতীয় কিছু। একদিন মারলো ঢিল। ঠিক এই মুহূর্তে প্রেমিকার পেছনে এসে দাঁড়ালো তার মা। ব্যস, আপেল প্যাঁচানো ছুড়ে মারা মার নাকের নিচে লেগে দুটা দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেল। সে এক বিশাল ইতিহাস। অন্যদিন বলবো নে। আমার এক ভাবি বললেন, আমাদের যুগে আমরা যখন চিঠি চালাচালি করেছি, তখন অন্যরকম একটা ব্যাপার ছিল। সেই ব্যাপারটা এখন নেই। আমি বললাম, এই যে অন্যরকম ব্যাপারে কথা বললেন, সেটা আসলে কী বা কেমন? ভাবি বললেন, না, মানে তখন চিঠি লেখার উসিলায় অন্তত কলমটা হাতের কাছে থাকতো। এখন সারা বাসা খুঁজেও কলম পাওয়া যায় না। এই দেখেন, সকাল থেকে কান চুলকানোর জন্য কলমের মাথাটা খুঁজছি। কলমই পাই না, কলমের মাথা পাবো কোত্থেকে? আমার এক বন্ধু বললো, চিঠি চালাচালি করে নাকি তেমন কোনো লাভ হয় না। কথাটা অনেকে বলে। আমি বলি কী, লাভ অবশ্যই আছে। আমি জানতে চাইলাম, কী ধরনের লাভ? বন্ধু বললো, কার হাতের লেখা কতটা খারাপ, সেটা বোঝা যায়। মেসেজ বা ফেসবুকের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে কিন্তু সেটা বোঝার উপায় থাকে না।

সর্বশেষ খবর