আমার এক ছোটভাই বলল, দেশে তো অনেক কবিই আছে। বিদেশেও আছে। আছে না শুধু, ছিল এবং থাকবে। তবে আমি মনে করি, জীবনানন্দ দাশ যে কোনো কবির চেয়ে ব্যতিক্রম। আসলে কারও সঙ্গে তাঁর কোনো তুলনা চলে না। আমি সহমত পোষণ করে বললাম, তুলনা কীভাবে চলবে? তিনি রূপসী বাংলার কবি না? বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, এটা আর কোনো কবির পক্ষে সম্ভব হয়নি। ছোটভাই বলল, আপনার কথা ঠিক আছে। তবে প্রসঙ্গ ঠিক নেই। আসলে আমি জীবনানন্দকে ব্যতিক্রম বলছি অন্য কারণে। কারণটা হচ্ছে, কবিদের মধ্যে একমাত্র তিনিই মানুষকে আলোচনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর আপনাকে কিন্তু মানতেই হবে, আলোচনা জিনিসটা অত্যন্ত ভালো একটা জিনিস। কারণ, এই আলোচনার মাধ্যমে অনেক জটিল সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হয়। আমি বললাম, তোর কথা আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এই যে বললি জীবনানন্দ নাকি মানুষকে আলোচনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন, সেটা ঠিক বুঝলাম না। ছোটভাই বলল, না বোঝার কী আছে? জীবনানন্দ কী বলেছেন? বলেছেন, ‘থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার...।’ এই যে ‘মুখোমুখি বসিবার’ কথাটা তিনি বললেন, এটাই কিন্তু আলোচনার ইঙ্গিত। কারণ, মুখোমুখি বসেই মানুষ কথা বলার জন্য, আলোচনা করার জন্য। কিলাকিলি করার জন্য কেউ মুখোমুখি বসে না।
আমার এক বন্ধু বলল, জীবনে যদি মিতব্যয়ী হতে চাস, তাহলে সবক্ষেত্রেই মিতব্যয়ী হতে হবে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে মিতব্যয়ী হওয়ার কোনো বিকল্পও নেই। জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে! এ ছাড়া বিদ্যুতের দাম বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গেছে। এ জন্য আমি মনে করি কী, অন্যান্য কাজের সময় লাইট জ্বালিয়ে রাখলেও কেউ যখন কারও সঙ্গে আলোচনায় বসবে, তখন লাইট নিভিয়ে রাখা উচিত। খামোখা বিদ্যুৎ অপচয়ের তো কোনো মানে হয় না। বন্ধুর কথায় বিরক্ত হয়ে আমি বললাম, তোর কি মাথা নষ্ট হয়ে গেল? মানুষ আলোচনা করবে অন্ধকারে বসে? লাইট নিভিয়ে? বন্ধু এবার তার পোকায় খাওয়া দাঁতসহ ৩২টার কাছাকাছি সংখ্যক দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল, কেন, লাইট বন্ধ করে বসে আলোচনা করলে সমস্যা কী? আলোচনার মধ্যেই তো ‘আলো’ আছে। আলো-চনা। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আমি মনে করি সব বিষয়েই আলোচনা হওয়া ভালো। তবে আলোচনাটা অফলাইনে না হয়ে অনলাইনে হলে ভালো হয়। কারণ, নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে। আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। দেশে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেল, তখন জুম মিটিং তথা অনলাইন আলোচনার সিস্টেম চালু করা হলো। কেন চালু করা হলো? নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। যেহেতু করোনা একটা ছোঁয়াচে রোগ। তবে এখন কিন্তু করোনা নেই। অথচ এখন জুম মিটিং তথা অনলাইন আলোচনার কোনো দরকার নেই। প্রতিবেশী আমার কথার তীব্র বিরোধিতা জানিয়ে বললেন, আছে, দরকার আছে। কারণ, আপনার ভাবির সঙ্গে যতবারই আমি অফলাইন আলোচনায় বসেছি, ততবারই আমার চশমার ডান্ডি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মতের অমিল হলে তিনি আবার আক্রমণাত্মক হয়ে যান!