সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পিঁয়াজের গরম

ইকবাল খন্দকার

পিঁয়াজের গরম

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড়ভাই বললেন, এই ক’দিনে ভালোই ঠান্ডা পড়েছে। অথচ পিঁয়াজের গরম বেড়েই চলেছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচার উপায় কী? আমি বললাম, বাঁচার কোনো উপায় নেই। পিঁয়াজের গরম থাকবেই। কেন থাকবে জানেন? কারণ, পিঁয়াজ অন্যরকম একটা জিনিস। যেটা আলু-পটলের মতো না। আলু-পটলের খোসা কয়টা থাকে? মাত্র একটা। অথচ পিঁয়াজের খোসার কোনো শেষ নেই। একটা খুললে আরেকটা বের হয়। আরেকটা খুললে আরেকটা। তো অনেকগুলো কাপড় পরলে যেমন গা গরম থাকে, ঠিক তেমনি অনেকগুলো খোসা পরার কারণে পিঁয়াজের গরম গরম অবস্থা। আমার কথা শুনে বড়ভাই আমার দিকে এমন গরম চোখে তাকালেন, আমার মনে হলো তার চোখ দুইটা ঠিক চোখ না। বরং দুইটা মাঝারি আকারের পিঁয়াজ। বোঝেন তাহলে উনি আমার দিকে কত গরম চোখে তাকিয়েছিলেন!

আমার এক ছোট ভাই বললো, পিঁয়াজের বাজারে যে আগুন লাগলো, এই আগুন নেভানোর কি কোনো উপায় নেই? আমি বললাম, এই আগুন নেভানোর একটাই উপায়। সেটা হচ্ছে, চুলার আগুন নিভিয়ে ফেলা। মোটকথা, রান্নাবান্না কমিয়ে দিতে পারলে মানে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিতে পারলেই পিঁয়াজের বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এবার ছোটভাই বললো, আপনি হয়তো জানেন না ভাই, রান্না ছাড়াও পিঁয়াজ খাওয়া হয়। পাবলিক খায় সিঙ্গাড়ার সঙ্গে। কচকচ করে চিবায়। আমি নিজে এই কচকচ আওয়াজ শুনেছি ভাই।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন- সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। কারণ, আমি আমার বাচ্চদের পুরনো ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলাম। কিছুদিন সেই অনুযায়ী কাজও করেছিলাম। কিন্তু এখন সেটা বন্ধ আছে। কবে যে পিঁয়াজের দাম কমবে! আমি বললাম, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না ভাই। পুরনো ঐতিহ্য, পিঁয়াজ এসব কী? একটু বুঝিয়ে বলেন। প্রতিবেশী বললেন, বুঝিয়ে বলার আসলে কিছু নেই। আবার আছেও। তাই বলছি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটা জিনিস হচ্ছে গুলতি। যেটা দিয়ে আমরা ছোটবেলায় খেলতাম। তখন অবশ্য মাটির ছোট ছোট ঢেলা দিয়ে গুলতি ছুড়তাম। কিছুদিন আগে করলাম কী, একটা গুলতি বানালাম আমার বাচ্চাদের জন্য। কিন্তু শহরের বাড়িতে যেহেতু মাটির ঢেলা পাওয়া দুষ্কর, তাই পিঁয়াজ দিয়ে শুরু করলাম গুলতি ছোড়া। বাচ্চারা মজা পেয়ে গেল। কিন্তু পিঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় গুলতি ছোড়াও বন্ধ, সব মজা মাটি।

আমার এক ভাবি বললেন, আমি খেয়াল করেছি, বাজারে গল্প-উপন্যাসের বই প্রচুর থাকলেও রান্নাবিষয়ক বই সেভাবে নেই। আমি বিস্ময় প্রকাশ করে বললাম, এটা আপনি কী বলছেন ভাবি? রান্নাবিষয়ক বই সেভাবে নেই মানে? বাজারে এ ধরনের বই প্রচুর আছে। এবার ভাবি সুর পাল্টে বললেন, থাকলেও দরকারি বইটা নেই। বিশেষ করে সময়োপযোগী বই। আমি জানতে চাইলাম, সময়োপযোগী বই আবার কোনটা? ভাবি বললেন, এই যে এখন পিঁয়াজের দাম চড়া, সেই অনুযায়ী কিন্তু রান্নার বই রচিত হয়নি। আপনি এমন একটা বইও পাবেন না, যেখানে পিঁয়াজ ছাড়া রান্না করার কথা লেখা আছে। আমি বললাম, আমার খোঁজে এমন বই বহু আছে, যেখানে পিঁয়াজ ছাড়াই রান্না করার কথা লেখা আছে। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার রান্না করার কথা আর কি। এই ধরেন পায়েস, সেমাই, ফিরনি ইত্যাদি। বিশ্বাস করেন, এসব রাঁধতে একদমই পিঁয়াজ লাগে না। আমার এক বন্ধু বললো, আমি হলাম পজিটিভ মানুষ। সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করি। এই যে মানুষ পিঁয়াজের দাম নিয়ে হাহুতাশ করে, আমি কিন্তু করি না। আমি পিঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টাকে পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখি। আমি বললাম, এ বিষয়টাকে পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখার আদৌ কোনো সুযোগ আছে কি? বন্ধু বললো, অবশ্যই সুযোগ আছে। আরে পিঁয়াজের দাম বাড়তি বলেই তো মানুষের চোখের পানি শুকিয়েছে। আগে বেশি বেশি পিঁয়াজ কাটতে গিয়ে মানুষের চোখ থেকে কত বেশি বেশি পানি ঝরতো মনে আছে? একবার তো চোখের পানিতে আমার সর্দিই লেগে গেল। সে এক বিরাট ইতিহাস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর