সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাইরে ঠান্ডা বাজারে গরম

এত শীত পড়ল, এই যে আমরা পানির কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকছি, ১৫ দিনেও একবার গোসল করছি না, অথচ মাছেরা কিন্তু তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি...

ইকবাল খন্দকার

বাইরে ঠান্ডা বাজারে গরম

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড় ভাই বললেন, আগে না বুঝে কত কাজ করেছি! এখন সেগুলোর জন্য আফসোস হয়। তখন যদি একটু বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতাম তাহলে আজ শ্বাসকষ্টে ভুগতে হতো না। বড় ভাইয়ের কথা শুনে আমি হালকা ভয় পেলাম। জানতে চাইলাম শ্বাসকষ্ট খুব বেশি কি না। বড় ভাই বললেন, বেশি তো অবশ্যই। তবে এটা আমার বোকামি। আর বোকামির জন্য দন্ড পেতে হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। ইস, কেন যে বুঝেশুনে সিদ্ধান্তটা নিলাম না! এবার আমি জানতে চাইলাম কীসের সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছে। আর আফসোসটাই বা কীসের। বড় ভাই বললেন, তাহলে তোকে খুলেই বলি। আমি আগে যে বিল্ডিংয়ে থাকতাম, সেই বিল্ডিংয়ের পরিচালনা কমিটি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিল বিল্ডিংয়ের নিচতলাটা আবাসিক ভবন হিসেবে ভাড়া না দিয়ে কমার্শিয়াল স্পেস হিসেবে ভাড়া দেবে। এককথায় যদি বলি, বাজার হিসেবে ভাড়া দেবে। অনেকটা সুপার শপের মতো। এটা শুনে আমি ওই বাসাই ছেড়ে দিলাম। বললাম, যে বিল্ডিংয়ের নিচতলায় বাজার থাকবে, সেই বিল্ডিংয়ে আমি থাকব না। অথচ এখন যদি আমি সেই বিল্ডিংয়ে থাকতাম, তাহলে এবার যে পরিমাণ শীত পড়েছে, তাতে একদম আরামে থাকতে পারতাম। বাড়তি কম্বল ব্যবহার করতে হতো না, শীতে শ্বাসকষ্টও হতো না। যেহেতু কবি বলেছেন, বাজার মানেই গরম, অল্প না, চরম।

আমার এক ছোট ভাই বলল, পাখিদের আসলে বুদ্ধিসুদ্ধি নেই। যদি থাকত তাহলে শীতের চোটে সাইবেরিয়া থেকে এসে শীতেই কষ্ট পেত না। মানে আমি বলতে চাচ্ছি, খালে বিলে তো প্রচুর শীত। তো যে পাখিগুলো সাইবেরিয়া থেকে আসে মূলত একটু আরামের জন্য, সেখানে যদি শীতেই কষ্ট পায়, তাহলে আসার সার্থকতা কোথায়? আমি বললাম, তোর কথা বুঝতে পেরেছি। এখন বল করণীয় কী। ছোট ভাই বলল- না, মানে পাখিদের যদি জ্ঞান-বুদ্ধি থাকত, তাহলে খালেবিলে না গিয়ে বাজারে ঢুকত। অর্থাৎ ঢোকা উচিত ছিল। জায়গাটা বেশ গরম তো! আরাম পেত আরকি।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, সবাই কিন্তু নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারে না। তবে একটা প্রাণী এদিক থেকে আলাদা। তারা এ প্রচন্ড শীতেও নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখেছে, আগে যেই অবস্থানে ছিল, সেই অবস্থানেই থাকছে। আরে অন্য কোনো প্রাণী হলে তো অন্তত দুয়েকবার আগুন পোহানোর চেষ্টা করত। আমি জানতে চাইলাম তিনি কোন প্রাণীর কথা বলছেন। এবার প্রতিবেশী বললেন, আমি বলছি মাছের কথা। আপনি খেয়াল করেছেন, এই যে এত শীত পড়ল, এই যে আমরা পানির কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকছি, ১৫ দিনেও একবার গোসল করছি না, অথচ মাছেরা কিন্তু তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। ঠিকই তারা পানিতে থাকছে। আপনি কি কোনো মাছকে দেখেছেন শীতের চোটে পানি থেকে উঠে এসে আগুন পোহাচ্ছে বা রাস্তাঘাটে রিকশা বা পাবলিক বাস দিয়ে চলাচল করছে?

আমার এক বন্ধু বলল, শীত না কমলে তো আমার ঝুঁকিও কমছে না। কবে যে আমার বউ আমার বড় কোনো ক্ষতি করে ফেলে! আমি বললাম, কী হয়েছে? কোনো সমস্যা? বন্ধু বলল, সমস্যা মানে! গুরুতর সমস্যা। আমার বউ কিছু একটা হলেই আমার দিকে এটা সেটা ছুড়ে মারে। কিন্তু আমি যেহেতু ক্রিকেট খেলতাম, ভালো ক্যাচ ধরে অভ্যস্ত, তাই যা-ই ছুড়ে মারত, ধরে ফেলতাম। বড় কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে সমস্যা হবে। কবে যে তার ছুড়ে মারা জিনিসের আঘাতে নাক মুখ ফেটে যাবে! আমি বললাম, বড়ই বিপদের কথা। তো তুই এখন তার ছুড়ে মারা জিনিস ধরতে পারিস না কেন? ক্যাচ ধরা ভুলে গেলি? বন্ধু বলল, আরে না! এখন ধরতে পারি না, কারণ ম্যালা শীত পড়েছে। আর এমন শীতে সবসময় আমি প্যান্ট বা ট্রাউজার বা জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাখি তো! তো হাত যদি পকেটে থাকে, ক্যাচ ধরব কীভাবে?

সর্বশেষ খবর