সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

টাকার খবর

ভালো হয় সব মাসকেই ফেব্রুয়ারির মতো আটাশ দিনের মাস বানিয়ে দিতে পারলে। তাতে হতো কি, পরের মাসের বেতনের টাকাটা আগে আগে পাওয়া যেত আরকি...

ইকবাল খন্দকার

টাকার খবর

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড় ভাই বললেন, অনেকেই আছে, যারা বউয়ের কথার বাইরে একটা পা পর্যন্ত ফেলে না। আমি আবার এমন না। আমি বউয়ের কথায় চলি, সেটা ঠিক আছে। তবে সবসময় চলি না। মোটকথা, আমি মাসের কিছুদিন চলি বউয়ের কথায়, কিছুদিন চলি নিজের ইচ্ছায়। বড় ভাইয়ের কথায় আমি খানিকটা অবাকই হলাম বটে। তাই কোনো কথা না বলে থ মেরে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। তিনি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন, তুই হয়তো আমার কথা বুঝতে পারিসনি। শোন, আমার বউ সময় সময় বলে ভিড় যাতে এড়িয়ে চলি। অর্থাৎ ভিড়ের মধ্যে যেন না যাই। আমি তার এই কথাটা মেনে চলি। তবে সেটা মাসের শুরুর দিকে। যেহেতু তখন মানিব্যাগে টাকা থাকে। আর ভিড়ের মধ্যে গেলে পকেটমারের খপ্পরে পড়ার ভয় আছে। তবে মাসের শেষ দিকে বউয়ের আদেশ অমান্য করেই আমি ভিড়ের মধ্যে যাই। মানিব্যাগে যেখানে টাকাই থাকে না, সেখানে পকেটমারারও ভয় থাকে না। বিস্তর শান্তি।

আমার এক বন্ধু বললো, প্রতি মাসের শেষ দিকে আমি একটা বুদ্ধি খাটাই। কী করি জানিস? হাতে একটা লাঠি রাখি। এতে সবাই মনে করে আমার মাথা গরম আছে। অতএব টাকা চাওয়া যাবে না। চাইলে যদি বাড়ি মারি! বিশ্বাস করবি না, এই সময়টায় আমার বউ পর্যন্ত আমার ধারেকাছে আসার সাহস পায় না। শপিংয়ের টাকা চাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। তাই বলে হাতে লাঠি রাখাটা একটু কেমন যেন লাগে। তাছাড়া... বন্ধু আমাকে কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়ে বললো, আরে শোন, হাতে লাঠি রাখার আরেকটা উদ্দেশ্য আছে। সবাই মাস শেষে এসে বলে না ‘হাত খালি’? হাতে লাঠিটা থাকলে ‘হাত খালি’ বলার চান্স থাকে না। আরে বাপু, হাত খালি কোথায়? হাতে লাঠি আছে না?

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আদিম যুগের মানুষরা হয়তো কাপড়চোপড় পরতো না। গাছের লতাপাতা বা বাকল পরতো। তবে কথা সেটা না। কথা হচ্ছে, তারা খুবই বুদ্ধিমানের একটা কাজ করতো। সেটা হচ্ছে, তারা গুহায় থাকতো। আমি মনে করি, তারা যে গাছের লতাপাতা বা বাকল পরতো, এই বিষয়টাকে অনুসরণ না করলেও গুহায় থাকার ব্যাপারটাকে অনুসরণ করা যেতে পারে। সবসময় অনুসরণ না করলেও মাঝে মাঝে আরকি। এতে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। আমি বললাম, এই যুগে এসে গুহায় থাকতে বলছেন? কিন্তু কেন? প্রতিবেশী বললেন- কারণ একটাই। মাসের শেষ দিকে এসে পকেট ফাঁকা থাকা, হাত খালি থাকা। তো হাত খালির এই কয়টা দিন যদি গুহায় লুকিয়ে থাকা যেত, তাহলে পাওনাদারের যন্ত্রণা থেকে সুরক্ষা বা নিরাপত্তা মিলতো আরকি। একটা কথা আছে না? নিরাপত্তাই প্রথম।

আমার এক ভাবি বললেন, দেশে কত কিছু পরিবর্তন হয়। অথচ একটা ব্যাপারে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কেউ এদিকে নজরই দিচ্ছে না। আমি মনে করি, এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নইলে আমাদের খুব ঝামেলা হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন, তাহলে উপকৃত হতাম আরকি। ভাবি বললেন, কত কিছুই তো পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু যে মাসগুলো একত্রিশ দিনে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি? কিন্তু নেওয়া উচিত। ভালো হয় সব মাসকেই ফেব্রুয়ারির মতো আটাশ দিনের মাস বানিয়ে দিতে পারলে। তাতে হতো কি, পরের মাসের বেতনের টাকাটা আগে আগে পাওয়া যেত আরকি। আমার এক চাচা বললেন, শুনতেছি মাসের এখন শেষ, এই জন্য নাকি সবার হাত খালি। কিন্তু এইটা তো ঠিক না! আরে মাসে পয়লা কী আর শেষ কী? হাত খালি থাকবে কেন? হাতে কি ঠান্ডা লাগে না? এই জন্য হাত খালি না রেখে আমার মতো হাতমোজা পরার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কথা পরিষ্কার?  

সর্বশেষ খবর