সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বইমেলায় খোঁজাখুঁজি

আমি কিন্তু বইমেলায় সেলফি স্টিক কিনতে যাব না। যাব সেলফি স্টিক পছন্দ করার জন্য। মানে কোন ডিজাইনটা, কোন মডেলটা ভালো, তা দেখার জন্য, সিলেক্ট করার জন্য...

ইকবাল খন্দকার

বইমেলায় খোঁজাখুঁজি

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই বলল, আজকে বইমেলায় যেতেই হবে। কারণ, বইমেলার কল্যাণে অনেকেই অনেক সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। অথচ আমি বঞ্চিত হচ্ছি। এটা আর হতে দেওয়া যায় না। তাই মেলায় যাওয়াটা জরুরি। আমি গুরুগম্ভীর গলায় বললাম, বইমেলা হচ্ছে বইয়ের মেলা। আর বইয়ের মেলা মানেই জ্ঞানের মেলা, জ্ঞানীর মেলা। অতএব সেখানে যেতে হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এবার ছোটভাই বলল, ভাই, আপনি যে অ্যাঙ্গেল থেকে বিষয়টা দেখছেন, আমি কিন্তু সেই অ্যাঙ্গেল থেকে কথাটা বলিনি। আমি বইমেলায় যেতে চাচ্ছি অন্য একটা সুবিধা পাওয়ার জন্য। আমি জানতে চাইলাম, কী সুবিধা? ছোটভাই বলল, সবাই কিছু না কিছু খুঁজতে বইমেলায় যাচ্ছে। যেমন কেউ যাচ্ছে বই খুঁজতে, কেউ বউ খুঁজতে, কেউ ক্যামেরা খুঁজতে, কেউ ভাইরাল তারকা খুঁজতে। মোটকথা, খোঁজাখুঁজি সংক্রান্ত সুবিধা সবাই কম বেশি পাচ্ছে। আর এই জন্যই আমি খুঁজতে যাচ্ছি রোগী। আমার এক আত্মীয় নতুন ডাক্তার হয়েছে তো! আমি বললাম, বইমেলা তো স্বাস্থ্যকর জায়গা। এখানে রোগী পাবা কোথায়? ছোটভাই বলল, বইমেলা স্বাস্থ্যকর জায়গা, এটা আমি মানি। বইমেলায় নিয়মিত পানি ছিটানো হয়, সেটাও জানি। তবু ভিড়ের দিনগুলোতে কিন্তু ধুলা ওড়ে। আর এই ধুলা নাকে-মুখে ঢুকলে অনেকেই হাঁচি দেয়। আর বোঝেনই তো, হাঁচি দিতে দিতে সর্দি লেগে গেলে এই রোগ, সেই রোগ হতেই পারে। তাই আমার টার্গেট হচ্ছে, এই হাঁচিদেনেওয়ালাদের শনাক্ত করে আত্মীয় ডাক্তারের কার্ড ধরিয়ে দেওয়া।

আমার এক বন্ধু বলল, বইমেলায় অন্য সবার মতো আমিও একটা কিছু খুঁজতে যাব। তবে আগে থেকে জানাব বোধ হয় হবে না। জানালে হবে কী, আমার খোঁজাখুঁজিটাই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। আমি জানতে চাইলাম সে কী খুঁজতে যাবে। বন্ধু বলল, তাহলে তোকে বলি। তুই আবার কাউকে বলে দিবি না যেন। আমি কথা দিলাম, কাউকে বলব না। বন্ধু তাই বলল, আমি গত কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছি, বইমেলায় আমার পরিচিত কিছু লোক যাচ্ছে। কীভাবে পরিচিত, একটু পরে বলছি। তো এই লোকগুলোর মুখে যখন সাংবাদিকরা মাইক্রোফোন ধরছেন, তখন তারা ভালো ভালো কথা বলছেন। বই পড়া উচিত, বই পড়লে একজন মানুষ সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠে- এ ধরনের আরও কত কথা! আমি এই মানুষগুলোকেই ধরতে যাচ্ছি, খুঁজতে যাচ্ছি। কেন জানিস? কারণ, তাদের কাছে আমি টাকা পাই। আমার টাকা মেরে দেওয়ার তালে আছে এরা, অথচ টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বড় বড় কথা বলে, আমি তো এটা মেনে নিতে পারি না। এই জন্য তারা যখন লাইভে কথা বলতে থাকবে, আমি সোজা সেখানে ঢুকে যাব। আর বলব আমার টাকা দেওয়ার জন্য। দেখি আমার টাকা না দিয়ে যায় কোথায়! আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বইমেলায় নাকি অনেকেই অনেক কিছু খুঁজতে যায়। আমিও একটা জিনিস খুঁজতে যাব। জানি না পাব কি না। পেলে খুবই উপকার হয়। না পেলে তো আসলে কিছু করার নেই। আমি জানতে চাইলাম জিনিসটা কী। প্রতিবেশী বললেন, না, তেমন কিছু না। একটা সেলফি স্টিক আরকি। আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনার কেন মনে হলো বইমেলায় সেলফি স্টিক কিনতে পাওয়া যায়? এটা কি সেলফি স্টিক কেনাবেচার জায়গা? প্রতিবেশী বললেন, আপনি মনে হয় আমার কথাটা বুঝতে পারেননি। অথবা আমিই বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি কিন্তু বইমেলায় সেলফি স্টিক কিনতে যাব না। যাব সেলফি স্টিক পছন্দ করার জন্য। মানে কোন ডিজাইনটা, কোন মডেলটা ভালো, তা দেখার জন্য, সিলেক্ট করার জন্য। বইমেলায় ম্যালা কিসিমের সেলফি স্টিকের সমাগম হয় তো!

সর্বশেষ খবর