শিরোনাম
সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বইমেলায় ব্যস্ততা

ইকবাল খন্দকার

বইমেলায় ব্যস্ততা

♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই বলল, বইমেলার সময় যে শীত থাকে, এটা বিরাট একটা প্লাস পয়েন্ট। যদি এই মেলা গরমের সময় হতো, তাহলে ম্যালা বিপদে পড়ে যেতাম। আমি বললাম, একদম ঠিক বলেছিস। আসলে গরমের সময় যে পরিমাণ বৃষ্টিবাদল হয়, তখন মেলা হলে পুরো মেলা বৃষ্টির পানিতে ভেসে যেত। ছোটভাই বলল, আপনার কথা সত্য। তবে আমি যে অ্যাঙ্গেলে কথাটা বলেছি, আপনি তা ধরতে পারেননি। আমি বললাম, তোর অ্যাঙ্গেলটা এমন কোন অধরা অ্যাঙ্গেল, যেটা ধরা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি? ছোট ভাই বলল, না, মানে বলছিলাম কী, বইমেলায় আমার প্রতিবছরই একটা করে মোটিভেশনাল বই বের হয় তো! এ জন্য হতাশাগ্রস্ত তরুণ-তরুণীদের কাছে আমার বইয়ের ব্যাপক চাহিদা। তারা করে কী, আমি বইমেলায় গেলেই আমাকে ঘিরে ধরে অটোগ্রাফের জন্য। আর আমি অটোগ্রাফ দেওয়া নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি, এ ব্যস্ততার চোটে আমার ঘাম ছুটে যায়। যদি বইমেলাটা গরমকালে হতো, তাহলে তো ঘাম সীমার মধ্যে থাকত না। মানে প্রচুর ঘামতে হতো। তখন একদম বেইজ্জতি হয়ে যেত। আমি জানতে চাইলাম, বেইজ্জতি কেন হতো? ছোটভাই বলল, বেইজ্জতি হতো এই জন্য, যেহেতু আমি মেলায় যাই মেকআপ নিয়ে। তাও ভারী মেকআপ। গরম বেশি হলে মানে ঘামটা বেশি হলে মেকআপ গলে যায় তো! ওই যে কিছুদিন আগেই যখন অতিব্যস্ততার কারণে বেশি ঘেমে গেলাম, তখন মেকআপ সমেত একটু করে ঘাম পড়ে গেল বইয়ের প্রচ্ছদে। ভাগ্যিস, প্রচ্ছদটা রংচঙা ছিল। তাই মেকআপের ফোঁটাটা পড়লেও সেভাবে দেখা যায়নি। প্রচ্ছদ শিল্পীকে ধন্যবাদ প্রচ্ছদটা সাদা না বানিয়ে রংচঙা বানানোর জন্য। এই লোকের কালার-সেন্স ভালো। আমি ছোটভাইয়ের এই লম্বা বয়ানে বিরক্ত হলাম। বললাম, ছোট একটা বিষয়কে টেনেটুনে এভাবে লম্বা বানানোর দরকার ছিল না। ছোটভাই বলল, ছোট বিষয়কে আপনি টেনেটুনে লম্বা বানানোটাই দেখলেন। বইমেলা ঘিরে আমার যে ব্যস্ততা, তা আর অনুভব করলেন না। আমি তার কথার জবাবে কিছু একটা বলতে যাব, এমন সময় কেউ একজন আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকাতেই দেখি ১৫-১৬ বছরের এক কিশোর। আর সে তাকিয়ে আছে ছোটভাইয়ের মুখের দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে একটা প্রশ্নও ছুড়ে দিল, ভাইজান মেলার কোন দিক দিয়া থাকেন? ছেলেটার কথায় ছোটভাই খানিকটা চমকে উঠল। ছেলেটা তা বুঝতে পেরে বলল, না মানে আপনের কথা শুইনা বুঝলাম মেলায় আপনে খুব ব্যস্ত থাকেন। এইদিকে আমিও ব্যস্ত থাকি। এ জন্য আমার মনে হইল আমি যেই কাজ করি, আপনেও সেই কাজই করেন। কিন্তু আফসোস, দুজনে একই কাজ করি, অথচ একদিনও দেখা হইল না। এ জন্য জিগাইলাম আপনে মেলার কোনদিকে থাকেন। আপনের সঙ্গে এখন পর্যন্ত আমার দেখা কী জন্য হইল না! আমি এবার ছেলেটাকে আরেকটু কাছে ডাকলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কী কাজ কর? ছেলেটা বলল, বাদাম বেচি। উনারে একটু জিগান না উনি মেলার কোন সাইড দিয়া বেচে? কোনোদিন সামনে পড়ে নাই কী জন্য? আমি ছেলেটাকে বিদায় দিলাম। এর মধ্যেই ফোন এলো আমার। আমি মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে দেখি আমার এক বন্ধু ফোন করেছে। আমি মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে কল রিসিভ করতেই সে বলল মেলা নিয়ে সে ম্যালা ব্যস্ত সময় পার করছে। আমি জানতে চাইলাম এত ব্যস্ততা কী কারণে। বন্ধু বলল, আমার সব ব্যস্ততা বই বের করা নিয়ে। আমি জানতে চাইলাম সে প্রকাশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ কবে করল। বন্ধু বলল, তুই যা মনে করছিস, তা না। আমি বই বের করা নিয়ে ব্যস্ত মানে কিন্তু আমি প্রকাশক না। আমি একটা স্টলে কাজ করি। তো প্রতিদিন স্টল মালিক আমাকে বলে বইগুলো কার্টনে  ঢুকিয়ে রেখে যাওয়ার জন্য। যেহেতু বৃষ্টি হতে পারে। তো আমি রাতে একবার বইগুলো কার্টনে ঢুকাই, আর মেলা খোলার পর কার্টন থেকে ‘বের করি’। এই হলো আমার বই বের করার ব্যস্ততা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর