সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফেসবুক না থাকলে

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ফেসবুক না থাকলে পৃথিবীর অবস্থা যে কী হবে! একদম ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীটা...

ইকবাল খন্দকার

ফেসবুক না থাকলে

► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

এক ছোটভাই বলল, বিপদ বলে কয়ে কিংবা মেসেজ দিয়ে আসে না। বিপদ আসে একদম চুপচাপ। এই যেমন হুট করে ফেসবুক হাওয়া। ইস, কী একটা বিপদ! আমি বললাম, ফেসবুক নানা কারণে হাওয়া হতেই পারে। আগেও বিভিন্ন সময়ে এমন হয়েছে। কিন্তু তুই যে বললি বিপদের কথা, এখানে বিপদের কী আছে? ছোটভাই বলল, বিপদের কী আছে মানে? পুরাটাই তো বিপদ। আপনি জানেন না, ফেসবুক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমার প্রেমের সম্পর্ক ভেঙেই গিয়েছিল প্রায়। যদি ফেসবুক ফিরে না আসত, তাহলে আজকে আমি থাকতাম একদিকে, আমার প্রেমিকা থাকত আরেকদিকে। মানে আমি আরেকজনের জামাই, আর সে আরেকজনের বউ হয়ে যেতে পারত। আমি বললাম, কেন? কীভাবে? ছোটভাই বলল, একটা মেসেজের কারণে। আমি মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। আর সেটা অসম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু বাটনে চাপ লেগে সেন্ড হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে ফেসবুকই গেল হাওয়া হয়ে। ব্যস, সে একটা ভুল মেসেজ পেয়ে আমাকে ভুল বুঝল। ফেসবুক না থাকায় আমি যে তাকে বোঝাব, সেই সুযোগও পাচ্ছিলাম না। যেহেতু সে রাগ করে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি বললাম, এমন কী মেসেজ পাঠিয়েছিলি, যার কারণে এমন অঘটন ঘটল? ছোটভাই বলল, আসলে তেমন কিছু না। আমি ইনবক্সে লিখেছিলাম ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি না’। ব্যস, যা হওয়ার তাই হলো। আমি বললাম, ভালোবাসি না বললে তো এমন হবেই। ছোটভাই বলল, কিন্তু এটা তো ছিল একটা অসম্পূর্ণ মেসেজ। আমি আসলে লিখতে চেয়েছিলাম, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি না, এটা তুমি ভাবলে কীভাবে?’ কিন্তু পুরোটা লেখার আগে যদি ফেসবুক গায়েব হয়ে যায়, তাহলে কেমন লাগে? আমার এক ভাবি বললেন, আমার ভাইকে নিয়ে ওইদিন কী যে মুশকিলে পড়েছিলাম! কোনদিনের কথা বলছি বুঝতে পেরেছেন তো? আমি বললাম, অবশ্যই বুঝতে পেরেছি। যেদিন ফেসবুক লাপাত্তা হয়ে গেল। কিন্তু কী মুশকিলে পড়েছিলেন, সেটা তো বুঝতে পারলাম না। ভাবি বললেন, বলতে লজ্জা লাগছে, তবু বলি। আপনার ভাই ফেসবুক ছাড়া এক মুহূর্তও চলতে পারে না। সে সাধারণত বাথরুমে গেলেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যায়, ‘বন্ধুরা, বাথরুমে গেলাম।’ আর খেতে যাওয়ার আগে তো স্ট্যাটাস দেয়ই। এমনকি ওষুধ খাওয়ার আগেও, ‘বন্ধুরা, ওষুধ খাচ্ছি।’ তো ওইদিন এমনিতেই তার প্রেশারটা বাড়তি ছিল। দরকার ছিল ওষুধ খাওয়ার। কিন্তু ফেসবুক না থাকায় সে স্ট্যাটাস দিতে পারছিল না। লিখতে পারছিল না ‘বন্ধুরা, প্রেশারের ওষুধ খাচ্ছি।’ ফলে সারা দিন বলতে গেলে তার ওষুধ খাওয়া হয়নি। বোঝেন কী একটা অবস্থা!

আমার এক বন্ধু বলল, ফেসবুকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে স্ট্যাটাস দিতে না পারলে অন্য সবার সমস্যা হলেও আমার কিন্তু কোনো সমস্যা হয় না। কারণ, আমি সেকেন্ডে সেকেন্ডে স্ট্যাটাস দিই না। আমি বললাম, বাহ! খুবই ভালো। তোর মতো ভালো অভ্যাস যদি সবার থাকত! তা ভালো কোনো খবর যদি বন্ধুদের জানাতে চাস, কীভাবে জানাস? নাকি জানাসই না? বুঝতে পেরেছি, জানাস না। সবাই তো আর প্রচারপাগল নয়! বন্ধু এবার মিনমিনিয়ে বলল, না মানে আমি স্ট্যাটাস দিয়ে না জানিয়ে সরাসরি মেসেঞ্জারে কল করি। ঠিক আছে না?

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ফেসবুক না থাকলে পৃথিবীর অবস্থা যে কী হবে! একদম ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীটা। আসলে যে পৃথিবীতে এত এত অসৎ মানুষ, সে পৃথিবী বেশি দিন টিকতে পারে না। আমি অবাক হয়ে বললাম, ফেসবুক থাকলে যে পৃথিবীটা সৎ মানুষে পরিপূর্ণ থাকবে, তা আপনি কীভাবে বুঝলেন? প্রতিবেশী বললেন, বুঝলাম সবার স্ট্যাটাস দেখে। একেকজনের স্ট্যাটাস দেখলে মনে হয় তারচেয়ে ভালো মানুষ দুনিয়াতে সেকেন্ড পিস আর নেই!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর