সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

মৃদু গরম পড়েছে বৈকি

ইকবাল খন্দকার

মৃদু গরম পড়েছে বৈকি

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোট ভাই বলল- একটা জিনিস খেয়াল করলাম ভাই। গরম আমাদের জন্য বিস্তর উপকার বয়ে আনে। এর মধ্যে একটা উপকারের কথা না বললেই নয়। তা হলো, একতা বা ঐক্য। আমি তার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললাম- কী সব উদ্ভট কথা যে বলিস না! আরে গরমের কারণে আমাদের মধ্যে ঐক্য বা একতা আসে, এ বেহুদা তথ্য তুই কই পেলি? গরমের কারণে তো আমরা বরং একজনের কাছ থেকে আরেকজন সরে যাই। দূরে দূরে থাকি। শীতের কারণে ঐক্য হয়, তা বলতে পারিস। ছোট ভাই বলল- আপনি আসল ব্যাপারটাই ধরতে পারলেন না। আসল ব্যাপার হলো- এমনিতে আমাদের মধ্যে মতের বিরাট অমিল। কোনো বিষয়েই আমরা একমত হতে পারিনি। আমি একটা বলি তো আরেকজন আরেকটা বলে। কিন্তু এখন আপনি যদি এলাকায় বের হয়ে জিজ্ঞেস করেন কেমন গরম পড়েছে, দলমতনির্বিশেষে সবাই একযোগে বলবে- সেইরকম। এই যে একটা বিষয়ে সবাই একমত হওয়া; এটা কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না। ঠিক কি না ভাই? আমি নীরব থাকলাম। আসলে গরমে আমার জিহ্বা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছিল তো, তাই নীরব থাকা ছাড়া উপায় ছিল না। এরপর যখন জিহ্বা নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরে পেলাম, তখন গেলাম পাড়ার মোড়ে চা খেতে। দেখি একেকজন ঘামে ভিজতে ভিজতে মোটামুটি কাকভেজা হয়ে গেছে। আমি চায়ের দোকানদারকে বললাম- অতিরিক্ত গরমের কথা বিবেচনা করে আপনার উচিত জরুরি ভিত্তিতে দোকানে ফ্যান লাগানো। দোকানদার চায়ের কাপে চিনি দিয়ে ঘোঁটা মারতে মারতে বলল- কুবুদ্ধি দিয়েন না তো ভাই। ফ্যান লাগানো যাইব না। সমস্যা আছে। আমি বললাম- তীব্র গরম পড়েছে, ফ্যান লাগাবেন। এখানে আবার সমস্যা কীসের? দোকানদার বলল- ভাইরে, আপনে তো রেগুলার আমার দোকানে চা খাইতে আসেন না। যদি আসতেন, তাইলে শুনতেন কত কিসিমের আলোচনা যে এ খানে হয়। একেকজন বিকালে দেশের রাজনীতি দিয়া আলোচনা শুরু করে আর শেষ করে আমেরিকার রাজনীতি দিয়া। এই যে এত গরম, তারপরও আলোচনার কিন্তু কমতি নাই। আর যদি ফ্যান লাগাই আর আরাম পাইয়া যায়, তাইলে আমেরিকার রাজনীতি নিয়া আলোচনা কইরাই থামব না, উগান্ডা, হন্ডুরাস আরও কোন কোন দেশ আছে না? ওইসব দেশের রাজনীতি নিয়াও আলোচনা করা শুরু করব। বিপদ ভাই, খুব বিপদ। আমার এক প্রতিবেশী বললেন- গরমে জিহ্বা বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শান্তিমতো যে জিহ্বাটা কিছুক্ষণ বের করে রাখব, সেই উপায়ও নেই। কেন যে বিয়ে করেছিলাম! ছোটখাটো কারণেও বউ খালি ঝগড়া করে। কী যে মুসিবতে আছি রে ভাই! আমি বললাম- আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না। গরম লাগলে জিহ্বা বের হতেই পারে। এখানে ঝগড়াঝাটির কী আছে? প্রতিবেশী বললেন- আরে রে ভাই, আছে। আমি যদি গরমের চোটে জিহ্বা বের করে হাঁপাই, বউ তা স্বাভাবিকভাবে নেয় না। সে বলে কী, আমি নাকি তার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটছি। আবার বলে কী, আমি জিহ্বা বের করে রাখলে নাকি আমাকে ভূতের মতো লাগে। যে কারণে সে ভয় পায়। ব্যস, ঝগড়ার সূত্রপাত। আমি বললাম- থাক ভাই, অযথা ঝগড়া বাড়িয়ে লাভ নেই। আপনি বরং এখন থেকে জিহ্বা বের করার আগে মুখোশ পরে নেবেন। আমার এক বন্ধু বলল- গরমের চোটে ইচ্ছা হয় ফ্রিজের ভিতরে গিয়ে বসে থাকি। কেন যে ব্যায়াম করলাম না! যদি ব্যায়ামটা ঠিকমতো করতাম, তাহলে ঠিকই ফ্রিজের ভিতরে ঢুকে বসে থাকতে পারতাম। আমি বললাম- ফ্রিজে ঢোকার সঙ্গে ব্যায়ামের কী সম্পর্ক? বন্ধু বলল- না মানে, আমার শরীরটা জলহস্তির মতো কি না। তাই চেষ্টা করলেও ফ্রিজের ভিতর ঢুকতে পারি না। ব্যায়াম করে শরীরটা কমাতে পারলে ঢোকা যেত আরকি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর