সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ও গরম তোর যন্ত্রণা...

ওইদিন ডাক্তার যখন বললেন এই গরমের সময় মাথা বেশি গরম করতে গেলে হিটস্ট্রোকের ভয় আছে, ব্যস, আপনার ভাই একদম শান্ত হয়ে গেলেন...

ইকবাল খন্দকার

ও গরম তোর যন্ত্রণা...

► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোট ভাই বলল, আমি কিছুদিন আগেও মানুষ ছিলাম। কিন্তু এখন আর মানুষ নেই। গন্ডার হয়ে গেছি। আপনি হয়তো বলবেন আমি যে গন্ডার হয়ে গেছি, এর প্রমাণ কী। প্রমাণ একটাই, কেউ কাতুকুতু দিলে এখন আর আগের মতো সঙ্গে সঙ্গে টের পাই না। গন্ডারকে কাতুকুতু দিলে নাকি সাত দিন পরে টের পায়। আমার অবশ্য এত বেশি সময় লাগে না। তবে এটাও ঠিক, সঙ্গে সঙ্গে টের পাই না। আমি বললাম, বুঝলাম তোর কথা। কিন্তু এমন হওয়ার কারণ কী? কোনো কারণে কি তোর চামড়া মোটা হয়ে গেল? যে কারণে কাতুকুতু দিলে সঙ্গে সঙ্গে টের পাস না? ছোটভাই বলল, আপনি ঠিক ধরেছেন। গরমে মোটামুটি সিদ্ধ হয়ে গেছি তো! সারা শরীরে কয়েক দফায় ঘামাচি উঠেছে। আর ঘামাচি উঠে উঠে আমার গায়ের চামড়া আর চামড়া নেই। একদম চটের বস্তার মতো মোটা হয়ে গেছে। কাতুকুতু দিলে টের পাব দূরের কথা, কেউ বাঁশ দিয়ে বাড়ি দিলেও টের পাব কিনা সন্দেহ আছে।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, গরমের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এটা খুবই ভালো একটা সিদ্ধান্ত ছিল। আমি তো আর স্কুলে পড়িও না, পড়াইও না। বরং একটা অফিসে জব করি। এ জন্য ছুটি আশা করি না। তবে অন্য কিছু তো আশা করতে পারি। কর্তৃপক্ষ যদি আশা পূরণের ব্যবস্থা করত, তাহলে বড় বাঁচা বেঁচে যেতাম। আমি বললাম, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। অন্য কিছু আশা করা বলতে? মানে আপনি কর্তৃপক্ষের কাছে ঠিক কী আশা করছেন? প্রতিবেশী আমতা আমতা করে বললেন, না, মানে অফিস খোলা রাখুক, সমস্যা নেই। শুধু লুঙ্গি পরে অফিস করার অনুমতিটা দিলেই হয়ে যেত আর কি। লুঙ্গির সঙ্গে টাই পরতে বললে টাই পরতেও আপত্তি নেই। শুধু লুঙ্গি পরার অনুমতি দিলেই চলবে। আপনার কী মনে হয়, করপোরেট অফিসগুলো লুঙ্গি পরে অফিস করার অনুমতি দেবে? আমি বললাম, জি, দিতে পারে। যেহেতু বড় অফিসগুলোতে ফ্যান থাকে না। এসিই থাকে। আর ফ্যান না থাকলে লুঙ্গি উড়তে উড়তে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা নেই।

আমার এক বন্ধু বলল, গরম জিনিসটা শরীরের জন্য খুব ভালো। বিশেষ করে যারা মাসল বানাতে চায়, কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম না করার জন্য বানাতে পারছে না, তাদের জন্য তো গরম জিনিসটা রীতিমতো আশীর্বাদস্বরূপ। আমি বললাম, তোর কথা আমি বুঝতে পারছি। গরমের কারণে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। আর বাতাস করতে করতেই মাসল হয়ে যায়, এটাই তো বলবি? বন্ধু বলল, আরে না রে পাগলা! হাতপাখার আইডিয়াটা তো অনেক পুরনো। নতুন আইডিয়া হচ্ছে, অতিরিক্ত গরম পড়ার কারণে একটু পরপর ঠান্ডা পানি খেতে হয়। কিন্তু ঠান্ডা পানি তো আলমারিতে থাকে না। থাকে ফ্রিজে। তো বারবার ফ্রিজ খোলার কারণে হাতের যে ব্যায়ামটা হয়, তাতে মাসল হতে বাধ্য। আমার অলরেডি মাসল হয়ে গেছে।  তবে দুই হাতে না। মাসল হয়েছে শুধু ডান হাতে। ডান হাতে ফ্রিজটা বেশি খোলা হয় কিনা।

আমার এক ভাবি বললেন, গরমে ভালোই উপকার পাওয়া যাচ্ছে। আগে কিছু একটা হলেই আপনার ভাই চিল্লাপাল্লা করতেন। কিন্তু ওইদিন ডাক্তার যখন বললেন এই গরমের সময় মাথা বেশি গরম করতে গেলে হিটস্ট্রোকের ভয় আছে, ব্যস, আপনার ভাই একদম শান্ত হয়ে গেলেন। এখন বাসায় যদি রান্নাবান্নাও না হয়, উনি মাথা গরম করেন না। শুধু জিজ্ঞেস করেন, আমি কি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসব?

সর্বশেষ খবর