সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফলকথা

ইকবাল খন্দকার

ফলকথা

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই বললো, ফলের সিজন যখন আসে, তখন ভালোই বিপদে থাকি। কারণ, আমার প্রেমিকা ফল খুব পছন্দ করে। সে তার সব প্রিয় জিনিসে ফলের একটা ‘টাচ’ রাখতে চায়। আর এটাই আমাকে বারবার বিপদে ফেলে। আমি জানতে চাইলাম, কী ধরনের বিপদ? ছোটভাই বললো, কী ধরনের বিপদ, সেটা বোঝাতে হলে একটা উদাহরণ দিতে হবে। আমার প্রেমিকা আমার কাছে উপহার হিসেবে থ্রিপিস চাইলো। আমি জানতে চাইলাম, কী কালারের থ্রিপিস? প্রেমিকা বললো লিচু কালারের। আমি লিচু কালারের থ্রিপিস কিনে নিয়ে গেলাম। এরপর সে যেই ব্যাগ থেকে বের করলো থ্রিপিসটা, একদম রেগেমেগে আগুন। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, রাগ করছো কেন? তুমি আমাকে লিচু কালারের থ্রিপিস আনতে বলেছো, আমি তো লিচু কালারের থ্রিপিসই এনেছি। এবার প্রেমিকা হুংকার ছেড়ে বললো, এই গাধা, আমি তোমাকে কাঁচা লিচুর কালারের থ্রিপিস আনতে বলেছিলাম? আমি তো বলেছিলাম পাকা লিচু কালারের কথা। মানে লাল আর পিংকের মাঝামাঝি। অথচ তুমি কিনা নিয়ে এসেছো... আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ফলের সিজন যখন আসে, তখন আমার কাজ বেড়ে যায়। যেটা খুবই বিরক্তিকর। আমি বললাম, কী রকম? প্রতিবেশী বললেন, আমার বারান্দাটা কিন্তু খোলামেলা। হু-হু করে বাতাস ঢোকে। কিন্তু ফলের সিজন আসতে না আসতেই আমাকে বারান্দায় নেট লাগাতে হয়। যাতে বাইরে থেকে কিছু এসে ঢুকতে না পারে। আমি বললাম, বুঝতে পেরেছি। ফলের সিজনে আপনি বাসায় প্রচুর ফল কেনেন। আর সেই ফল খাওয়ার জন্য পাখি ঢোকে, কলাবাদুড় ঢোকে। ঘর নোংরা করে। এই জন্য আপনাকে বারান্দায় নেট লাগাতে হয়। আচ্ছা, প্লাস্টিকের নেট লাগান নাকি তারের নেট? প্রতিবেশী আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়েই বললেন, আপনি আমার কথা বুঝতে পারেননি। আমার বাসায় পাখিও ঢোকে না, কলাবাদুড়ও ঢোকে না। ঢোকে আমের আঁটি। যেটাকে বলে আমের বড়া। আমার প্রতিবেশীরা অত্যন্ত ‘সজ্জন’ তো! এই জন্য আম খাওয়ার পর আমের বড়া জমিয়ে রাখে। কেন জমিয়ে রাখে? যাতে সামান্য কথা কাটাকাটি হলেই ছুড়ে মারতে পারে। মারেও। এই জন্য বাধ্য হয়েই আমাকে বারান্দায় নেট লাগাতে হয়। উফ, কবে যে ফলের সিজনটা শেষ হবে! আমার এক বন্ধু বললো, ফলের সিজন এলেই আমার একটা স্মৃতি মনে পড়ে যায়। স্মৃতিটা বেদনার। আমি জানতে চাইলাম, আমাকে কি বলা যাবে? বন্ধু বললো, অবশ্যই বলা যাবে। নিশ্চয়ই তুই খেয়াল করেছিস এই সিজনে রাস্তার পাশে কচি তাল বিক্রি করে? আমি বললাম, দেখবো না কেন? অবশ্যই দেখেছি। আর কচি তাল আমার নিজেরও খুব প্রিয়। বন্ধু বললো, এক সময় আমি গান শিখতাম। কিন্তু সুরে গাইতে পারতাম না। আমার গানের যিনি শিক্ষক ছিলেন, তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে বলতেন, তাল কেটে যাচ্ছে। তো আমি যখন এই সিজনে তাল কেটে বিক্রি করতে দেখি, তখনই আমার মনে পড়ে যায় আমার গানের শিক্ষকের বলা সেই কথাটা, তাল কেটে যাচ্ছে। আহারে, কী বেদনা!

আমার এক বড়ভাই বললেন, জানই তো, আমি খুব ব্যস্ত মানুষ। ফলের দোকানে যাওয়ার টাইম নেই। তবে অনলাইনে কিন্তু ফল দেখি। নানান কিসিমের ফল। আর এতে বিরাট লাভ হচ্ছে। আমি বললাম, অনলাইনে ফল দেখলে যে লাভ হয়, এটা তো জানতাম না! তা কী ধরনের লাভ হচ্ছে? বড়ভাই বললেন, তুই নিশ্চয়ই শুনেছিস, সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের পাওয়ার বাড়ে। মানে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে? আমি বললাম, জি, শুনেছি। বড়ভাই বললেন, সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকলে যদি দৃষ্টিশক্তি বাড়তে পারে, তাহলে অনলাইনে ফলের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকলে শরীরে ভিটামিন সি ঢোকার কথা। হোক সেটা পরিমাণে কম। আমি বললাম, ফলের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকলে শরীরে ভিটামিন সি ঢোকে, এই তথ্য আপনাকে কোন ডাক্তার দিলো? বড়ভাই বললেন, আমি নিজেই তো ডাক্তার। একবার পল্লী চিকিৎসক হিসেবে একটা কোর্স করেছিলাম তো! অবশ্য কোর্সের কোনো পরীক্ষায়ই পাস করতে পারিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর