সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

জটিল সমীকরণ

ইকবাল খন্দকার

জটিল সমীকরণ

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই বললো, সুপার এইট থেকে সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তা খুঁজতে গিয়ে যে পরিমাণ জটিল সমীকরণের সাক্ষাৎ পেলাম, মানে সেমিফাইনালে যেতে হলে যে পরিমাণ জটিলতা পার করতে হবে, এর চেয়ে অনেক  ভালো গাট্টি-বোঁচকা গোল করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যাওয়া। দরকার নেই বাপু খেলার। খেলাও নেই, জটিলতাও নেই। আমি বললাম, এভাবে হাল ছেড়ে দিলে চলবে? সমীকরণ যত জটিলই হোক, লেগে থাকতে হবে, বুঝলি? ছোটভাই বললো, আপনি তো সমীকরণটা শোনেননি, তাই এত জ্ঞান দিচ্ছেন। যদি শুনতেন, তাহলে ঠিকই মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে যেতেন। আমি এবার খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়ে বললাম, তাহলে এখনই ডিশওয়ালাকে ফোন করছি। যাতে আমার বাসার টিভি লাইন কেটে দেয়। টিভিও নাই, খেলা দেখা বা সমীকরণ শোনার ভয়ও নেই। মোটকথা, মাথাও নেই, মাথার চক্করও নেই। ছোটভাই সম্ভবত আমার সঙ্গে কথা বলে আরাম পেলো না। তাই সে গেলো পাড়ার চা স্টলে। স্টলভর্তি তখন মানুষ। সে সবার সামনে জটিল সমীকরণের প্রসঙ্গ তুললো। খেয়াল করলাম, সবাই কেমন ঝিম মেরে গেলো। তবে চা স্টলের মালিকের মুখে তখন মুচকি হাসি। ব্যাপারটা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হলো। তাই স্টল যখন খালি হলো, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ব্যাপার কী বলেন তো! আপনি এত খুশি কেন? স্টলওয়ালা বললো, খুশি হমু না ক্যান, সেইটা বলেন। ক্রিকেট খেলার কী সব সমীকরণ না কী যেন একটা আছে না? সেইটা নিয়া কেউ কথা শুরু করলেই অন্য যারা থাকে, সবার মাথা ঘোরানি শুরু করে। অনেক জটিল হিসাব-নিকাশ তো! আর মাথা ঘোরানি শুরু করলে তারা মনে করে লেবু-আদা দিয়া কড়া লিকারের চা খাইলে বুঝি ঘোরানিটা কমবো। তখন একেকজনের এক কাপের জায়গায় তিন কাপ কইরা চা খায়। আর আমার বিক্রি বাইড়া তিনগুণ হইয়া যায়। এই অবস্থায় খুশি না হইয়া করমু কি? আমার এক বন্ধু বললো, একটা কথা আছে না, ভিক্ষা চাই না কুত্তা সামলাও। আমার হয়েছে সেই অবস্থা। আমি একজনের কাছে হাজার দশেক টাকা পেতাম। তবে তার সঙ্গে আরও কিছু লেনদেন ছিল। গতকাল ফাইনাল হিসাব-নিকাশে বসলাম। ওই লোক যে জটিল হিসাব দিল, তাহলে আমার মনে হলো দরকার নেই আমার টাকা-পয়সার। মানে এই জটিল হিসাব ফলো করার চেয়ে টাকা না নিয়ে চলে আসা অনেক ভালো। আমি এবার মাঝারি আকারের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়েও কিছু কিছু দল মোটামুটি এই অবস্থার মধ্যেই আছে। মানে খেলায় জেতা আর কত কঠিন, এর চেয়ে বেশি কঠিন সমীকরণ। আমার পাশেই বসা ছিলেন আমার এক চাচা। ক্রিকেট সম্পর্কে যিনি ভালোই জ্ঞান রাখেন। আমার কথা শুনে তিনি বলে উঠলেন, আগে থেকে খেলাটা ঠিকমতো খেললেই তো আর এত জটিল সমীকরণে যেতে হয় না। সব ম্যাচ জিতে গেলি মানে স্টার মার্ক পেয়ে গেলি। তখন আর টেনেটুনে তেত্রিশ পাওয়ার দুশ্চিন্তা মাথায় নেওয়ার দরকার পড়ে না। আমার এক প্রতিবেশী বললেন,  আমি আছি এমন এক মাইনকা চিপায়, আমার পক্ষে ‘সমীকরণ’ শব্দটা উচ্চারণ করাও সম্ভব হয় না। কারণ, ‘সমীকরণ’ উচ্চারণ করলেই সংসারে অশান্তি লেগে যায়। আমি বললাম, সমীকরণ উচ্চারণ করলে সংসারে অশান্তি লাগবে, এমন আজগুবি কথা তো কোনোদিন শুনিনি। প্রতিবেশী বললেন, কীভাবে শুনবেন? অন্য কারও সাবেক প্রেমিকার নাম তো আর ‘শমী’ না। আমারটার নাম ‘শমী’ ছিল। ব্যস, সমীকরণ শব্দটা উচ্চারণ করলেই আমার বউ পারলে খুন্তি নিয়ে তেড়ে আসে। আমি এবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। প্রতিবেশী জানতে চাইলেন কী নিয়ে চিন্তা করছি। আমি বললাম, চিন্তা করছি বোম্বের একজন পরিচালককে নিয়ে। যেহেতু ‘সমীকরণ’ শব্দটার মধ্যে আপনার সাবেক প্রেমিকার নাম থাকার পাশাপাশি ওই পরিচালকের নামও আছে। করণ। করণ জোহর।

সর্বশেষ খবর