সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফুটবল বিষয়ক আলাপ

ইকবাল খন্দকার

ফুটবল বিষয়ক আলাপ

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই মেসে থাকে। গতকাল দেখা হলো। জানতে চাইলাম দিনকাল কেমন চলছে। সে বলল, বেশি ভালো না ভাই। একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই থাকে। এই যে কদিন আগে কোপা আমেরিকা শুরু হলো না? একজন ফুটবল ভক্ত হিসেবে আমি মনে করেছিলাম কয়টা দিন ভালোই যাবে। কিন্তু না, উটকো ঝামেলায় পড়ে গেলাম। এখন মেসে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় মেসের মালিক মানে বাড়িওয়ালা আমাকে বের করে দিতে পারে। আমি বললাম, তার মানে তোর বাড়িওয়ালা চায় না তুই ফুটবল খেলা দেখিস, তাই না? ছোটভাই বলল, ব্যাপারটা ঠিক এমন না। ব্যাপারটা হচ্ছে, পছন্দের দল গোল দেওয়ার পর আমি যদি ‘গোল’ বলে চিৎকার করে উঠি, সঙ্গে সঙ্গে বাড়িওয়ালা শুরু করে দেয় গালাগালি। বলে, আমাকে নাকি ঘাড় ধরে মেস থেকে বের করবে। আমি অবাক হয়ে বললাম, ফুটবল খেলা দেখতে দেখতে তো ‘গোল’ বলে চিৎকার দিতেই পারিস। এখানে বাড়িওয়ালার গালাগালি করার কী আছে? ছোটভাই বলল, আছে, কারণ আছে। আসলে হয়েছে কী, ভালোমন্দ খেয়ে শরীরে চর্বি জমাতে জমাতে বাড়িওয়ালার শরীর-স্বাস্থ্যের অবস্থা এমন হয়েছে যে, রীতিমতো গোলগাল হয়ে গেছে। অনেকেই তাকে ব্যঙ্গ করে ডাকে ‘গোল বাবু’। এ জন্য আমি ‘গোল’ বলে চিৎকার দিলেই সে ধরে নেয় আমি বুঝি তাকে ‘গোল বাবু’ ডাকার জন্য উদ্যত হয়েছি। কী একটা অবস্থা বলেন দেখি! আমি বললাম, তোর মতো এমন ঝামেলায় একবার আমিও পড়েছিলাম। একবার বিশ^কাপ ফুটবল চলছিল। আমরা তখন এক জায়গায় আড্ডা দিতাম আর কোন দল কোন খেলায় কত গোল করল, সেটা নিয়ে আলোচনা করতাম। এর মধ্যে একটা বিষয় খেয়াল করলাম। আমরা যেই গোল বা গোলবার শব্দটা উচ্চারণ করি, অমনি পাশের বাসার দারোয়ান আমাদের দিকে চোখ গরম করে তাকায়। কারণ কী? এরপর খোঁজ নিয়ে জানলাম ওই বেটার নাম, ‘গুল’জার। চিন্তা কর, কোথায় গুলজার আর কোথায় গোলবার। যার মনে যা, ফাল দিয়া ওঠে তা। ফাল দেওয়ার কথা শুনে ছোটভাই বলল, একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? ক্রিকেটে কিন্তু ফালাফালির বিষয়টা নেই। অথচ ফুটবলে প্রচুর ফালাফালি। এ জন্য ইনজুরিটাও বেশি হয়। আমি বললাম, ইনজুরির আরেকটা কারণ আছে। ক্রিকেট খেলায় হাতে পায়ে প্যাড থাকে। মাথায় হেলমেট থাকে, মুখ ঢাকা থাকে। আর ফুটবলে? ছোটভাই এবার বলল, ফুটবল প্লেয়ারদের মাথায় হেলমেট থাকলে হয়তো ইনজুরি কম হবে। কিন্তু আমাদের বয়সি ছেলেদের লস হয়ে যাবে। আমি জানতে চাইলাম, কী ধরনের লস? ছোটভাই বলল, আমরা ফুটবলারদের চুলের কাটিং দেখে চুল কাটি। এখন আপনিই বলেন, মাথায় যদি হেলমেট থাকে, তাহলে কি দেখা যাবে চুলটা কীভাবে কাটল? আর দেখাই যদি না যায়, পাড়ার নরসুন্দরকে ডিরেকশন দেব কী বলে? আমি ছোটভাইয়ের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললাম, তোর কথায় যুক্তি আছে। যুক্তির কথা শুনে ছোটভাই বলল, কথায় যুক্তি থাকলে কী হবে ভাই। ফুটবল খেলার কিছু নিয়ম আছে, যেগুলোর পেছনে আসলে কোনো যুক্তি নেই। যেমন ধরেন বল যদি হাতে লাগে, তাহলে সেটা হ্যান্ডবল হয়ে যায়। অথচ পুরো খেলায় এমন কোনো ব্যবস্থা থাকে না, যেখানে প্লেয়াররা          তাদের হাতগুলো রাখতে পারে। এবার আমি চমকে উঠলামÑ হাতগুলো রাখতে পারে মানে? ছোটভাই বলল, না, মানে ক্রিকেট খেলায় কিন্তু ট্রাউজার পরার নিয়ম আছে।  আর ট্রাউজারে আছে পকেট। সেই পকেটে হাত ঢুকিয়ে  রাখা যায়। ফুটবলে যদি পকেটওয়ালা ট্রাউজার বা হাফপ্যান্ট পরার নিয়ম থাকত, তাহলে খেলোয়াড়রা তাদের হাতগুলো নিরাপদে রাখতে পারত আরকি। যখন-তখন হ্যান্ডবলের বাঁশি বেজে উঠত না। এতবার বাঁশি বাজলে আমার মনের ভিতর আবার আরেকটা গান বেজে ওঠে, ‘কে বাঁশি বাজায় রে...’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর