আমার এক বড় ভাই বললেন, আজকাল বাজারে গেলে চোখ-কান খোলা রাখি। সুযোগ পেলে মোবাইল দিয়ে অবশ্য ছবিও তুলে রাখি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু দৃশ্য সংরক্ষণে রাখার দরকার আছে না? আমি বললাম, ঠিক বলেছেন। বড় ভাই বললেন, তেলবাজদের মতো ‘ঠিক বলেছেন’ ‘ঠিক বলেছেন’ করিস না তো! আগে বোঝার চেষ্টা কর আসল ঘটনাটা কী। তারপর কথা বল। আমি কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থাকলাম এবং বোঝার চেষ্টা করলাম ঘটনাটা আসলে কী। কিন্তু কিছুই যখন বুঝতে পারলাম না, তখন বড় ভাই দায়িত্ব নিলেন বোঝানোর। তিনি বললেন, আজকাল বাজারে গেলে চোখ-কান খোলা রাখি ক্রেতাদের চেহারা দেখার জন্য। আহারে বেচারাগণ! তারা ঘর থেকে কী পরিমাণ চাপের পর ব্যাগ হাতে নিয়ে বাজারে যায়! আমি বললাম, বাজারে তো মানুষ যেতেই পারে। এখানে ঘর থেকে চাপ আসার বিষয়টা কেন আসছে? বড়ভাই এবার তেঁতুলের মতো বাঁকা একটা হাসি দিয়ে বললেন, তার মানে, তোর স্ত্রী বাসায় নেই আর সে কারণে বাজারেও যাসনি। যদি যেতি আর জিনিসপত্রের দাম জানতি, তাহলে এই কথা বলতি না। আয়, কাছে আয়। তোরও একটা ছবি তুলে রাখি। বর্তমান বাজারের খবর যে রাখে না, আর এমন পাবলিকও যে আছে, এর প্রমাণ হিসেবে ছবিটা তুলে রাখা জরুরি বলে মনে করি। আমি বড় ভাইয়ের কাছে গেলাম এবং ছবি তোলার জন্য পোজ দিলাম। আসলে কে কী কারণে ছবি তুলল, সেটা বড় কথা নয়। ছবি তোলাটাই বড় কথা। আর ছবি তোলার সময় মুখটা হাসি হাসি রাখতে পারা আরও বড় কথা। আর এতসব ‘বড় কথা’র কাছে জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী দামের ব্যাপারটা তো কিছুই না। একেবারেই তুচ্ছ। আমার হাসিমুখের পোজ দেখে বড় ভাই বললেন, এই যে বাজারে যাওয়া যাচ্ছে না জিনিসপত্রের দামের জন্য, এটা নিয়ে কি তোর কোনো মাথাব্যথা নেই? আমি বললাম, মাথাব্যথা তো অবশ্যই আছে। তবে মাথাব্যথাটার নেপথ্য কারণ কী, সেটা বুঝতে পারছি না। ব্লাডপ্রেসারও হতে পারে, আবার মাইগ্রেইনও হতে পারে। তবে মাইগ্রেইন জিনিসটা কিন্তু খুবই খারাপ। এবার বড় ভাই ক্ষেপে গেলেন আমার ওপর। বললেন, আমি নাকি কথা বেশি বলি। আমার মুখে নাকি স্কচটেপ লাগিয়ে দেওয়া উচিত। আমি বললাম, আপনি যেহেতু নিয়মিত বাজারে যাচ্ছেন, আপনার কাছ থেকে অনেক কিছুই জানার আছে। আচ্ছা, বাজারে কি শুধু কাঁচামালের দামই বেড়েছে? নাকি শুকনা মালও। বড় ভাই এবার খানিকটা অবাক হয়ে বললেন, কাঁচামাল-শুকনা মাল বলতে? আমি বললাম, কাঁচামাল মানে হচ্ছে কাঁচা বাজারের মাল। যেমন শাকসবজি, মাছ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর শুকনা মাল হচ্ছে লোহালক্কর টাইপের জিনিসপত্র। ওই যে বললেন আমার মুখে নাকি স্কচটেপ লাগিয়ে দেওয়া উচিত, এই স্কচটেপও শুকনো মালের দলভুক্ত। এই জন্য দামটা জেনে রাখা দরকার ছিল। দাম বেশি হলে আপাতত কিনব না। যখন দাম কমবে, তখন না হয় কিনে মুখে লাগিয়ে নেব। এই কয়টা দিন একটু সহ্য করেন। বড় ভাই এবার ঘোষণা দিলেন, স্কচটেপ কেনার টাকা নাকি তিনি নিজে দেবেন। আমি বললাম, তাহলে এখনই দেন। আমি স্কচটেপটা কিনে বাড়িতে যাব এবং এখনই মুখ বন্ধ করে ফেলব। বড় ভাই বললেন, তুই আপাতত স্কচটেপ বাকিতে কেনার চেষ্টা কর। কারণ, আমার কাছে কয়েক দিন ধরেই কোনো টাকা-পয়সা নেই। পিঁয়াজ আর আলু কিনে শেষ হয়ে গেছে। আমি বললাম, ঠিক আছে তাহলে। স্কচটেপ কেনার পর অর্ধেকটা না হয় আপনাকেও দেব। মুখে লাগিয়ে নেবেন। খাওয়াদাওয়া বন্ধ। আর খাওয়াদাওয়াটা বন্ধ করতে পারলে বাজারে না গেলেও চলবে।