সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

নাইট শিফট

এতদিন বেটা হাসতো না। তাই জানতামই না তার মুখে দাঁত আছে নাকি নেই। এখন হাসে। দেখি দাঁত আছে। তবে তিনটা দাঁত কেমন যেন একটু অন্যরকম...

ইকবাল খন্দকার

নাইট শিফট

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর

আমার এক ছোটভাই বললো, ভাই, জানেন তো, শুধু ঢাকা শহর না, বলতে গেলে সারা দেশের মানুষই এখন রাত জাগে। ব্যাপারটা প্রথম প্রথম আমার কাছে কষ্টকর মনে হলেও এখন আর সেরকম মনে হচ্ছে না। বলতে পারেন এনজয়ই করছি। আর এনজয় করার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। দুয়েকটা কারণ বলবো নাকি? আমি বলার অনুমতি দিলাম। ছোটভাই বললো, আমার বাড়িওয়ালা একদমই সুবিধার লোক ছিল না। সে রাত ১১টায় গেট বন্ধ করার কড়া নির্দেশ তো দিয়ে রেখেছিলই, আরও নানারকম যন্ত্রণা সে। তো এর মধ্যে যখন ডাকাত-আতঙ্ক দেখা দিল, সে পড়ে গেল মুসিবতে। এত বড় বাড়ি তার! যদি কোনোভাবে আক্রমণের শিকার হয়, তাহলে তো বিপদ। সে তখন আমাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানালো যাতে একটা নৈশকালীন পাহারার ব্যবস্থা করি। আমরা অবশ্য ব্যবস্থাটা এমনিতেও করতাম। মানুষের নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে না? তো বাড়িওয়ালা যখন অনুরোধ করলো, তখন আমরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিল্ডিংয়ের সামনেই বসে পড়লাম। আর তখন থেকেই এনজয়ের কারণগুলো সামনে আসতে শুরু করলো। যেমন ধরেন গরুর মাংস। অতিরিক্ত দামের কারণে কতদিন এই জিনিস খাই না। কিন্তু এখন প্রতিরাতেই গরুর মাংসের তেহারি খাচ্ছি। খাচ্ছি বলতে বাড়িওয়ালা খাওয়াচ্ছে। কথা বলে জানলাম তার বাসার দুই ফ্রিজ ভরা নাকি গরুর মাংস। এ অবস্থা যদি আরও মাসখানেকও চলমান থাকে, তবু নাকি ফ্রিজ খালি হবে না। কী একটা অবস্থা বলেন দেখি! তবে ভাই, লাভটা যে শুধু আমাদের হচ্ছে, তা কিন্তু না। যেমন আমার বাড়িওয়ালা সবচেয়ে বড় যে রোগটা বাঁধিয়ে বসে আছে, সেটা হচ্ছে হার্টের সমস্যা। ডাক্তার তাকে এ সমস্যা সমাধানের জন্য সব সময় হাসি-খুশি থাকতে বলেছে। কিন্তু এই লোক হাসি-খুশি থাকবে দূরের কথা, সব সময় মুখটা এমন করে রাখতো, যেন কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগী। এতে তার হার্টের সমস্যা কেবল বাড়ছিলই। কিন্তু যেই সে আমাদের সঙ্গে রাত জাগা শুরু করলো, অমনি আমাদের মতো একদম তরতাজা যুবকে পরিণত হয়ে গেল। কারণ, আমরা সারা রাতই সারা রকম জোকস বলি। প্রথম প্রথম বাড়িওয়ালা কেবল শুনতো। জোকস শেষ হওয়ার পরও বলতো, তারপর কী হলো? কিন্তু এখন সে ভালোই রসিক হয়ে উঠেছে। কোন জায়গায় হাসতে হবে, সেটা তো বোঝেই, নিজেও মজার মজার জোকস বলে। সে এখন লাগাতার হাসে - ভাবা যায়! আর হাসে বলেই কিন্তু এত বড় বিষয়টা জানতে পেরেছি। যা শুনে আপনি নিজেও টাশকি খেয়ে যাবেন। আমি অবাক হয়ে বললাম, এমন কী বিষয়, যা শুনে আমি টাশকি খেয়ে যাবো? ছোটভাই বললো, এতদিন বেটা হাসতো না। তাই জানতামই না তার মুখে দাঁত আছে নাকি নেই। এখন হাসে। দেখি দাঁত আছে। তবে তিনটা দাঁত কেমন যেন একটু অন্যরকম। আমি কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম, এই দাঁত তিনটার কালার একটু অন্যরকম কেন? সে কথার জোশে পড়ে স্বীকার করে ফেললো, দাঁত তিনটা নাকি স্বর্ণের। কথা শুনে আমার চোখ যখন কপালে, তখন বাড়িওয়ালা আমাকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে কী জানেন? বলে, আরে স্বর্ণের দাঁত লাগানোর মতো ধনী আমি না। এই তিনটা দাঁত আমার শ্বশুর লাগিয়ে দিয়েছিল। তাও খুশিমনে না। অনুশোচনা থেকে। মানে ক্ষতিপূরণ। আমি তখন বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কীসের ক্ষতিপূরণ? বাড়িওয়ালা কী মনে করে যেন সত্যটা গোপন করেনি। আস্তে করে বলে দিয়েছে, এই তিনটা দাঁত এমনি এমনি ভাঙেনি। এক ধরনের সাংসারিক সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন। আর এ খবর শ্বশুরের কানে যাওয়ার পর ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ ব্যবস্থা করেছে আরকি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর