শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
মাকিদ হায়দার

পরিশিষ্ট

পরিশিষ্ট

অলংকরণ : শাকীর

প্রতিদিনের মতো বাবা মর্নিংওয়ার্কে বেরিয়েছেন ফিরতে ফিরতে আটটা-নয়টায় আগে নয়, এই বৃষ্টি বাদলের দিনে। যদিও সকালবেলা খুব একটা মেঘ বৃষ্টি হয় না বলেই আমাদের ধারণা এবং আমার মায়ের বিশ্বাস। আমাদের ধারণা আর মায়ের বিশ্বাসের প্রতি বাবা মোটেই আস্থাশীল নন।

রোদ বৃষ্টি ঝড় ঝাপটা যাই আসুক না, বা নাই আসুক বাবার রিটায়ারমেন্টে যাওয়ার দিন অফিস সহকর্মীদের সংবর্ধনায় তিনি পেয়েছিলেন একটি জায়নামাজ। টু ইন রেডিও। আর একখানা হাতিমার্কা ছাতা। জায়নামাজ, টু ইন ওয়ান, আর ওই কালো হাতিমার্কা ছাতা হাতে নিয়ে বাবা যখন বাসায় ফিরলেন সেদিন মা, বাবার অগোচরে কেঁদেছিলেন। কেন যে কেঁদেছিলেন মাকে সে প্রশ্ন আমি করিনি। বরং আমি খুশি হয়ে বাবার হাত থেকে টু ইন ওয়ানটা প্রায় ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে নিজের ঘরে রেখে দিয়ে বাবার কাছে ফিরে আসতেই দেখলাম বাবা মায়ের হাতে জায়নামাজটা দিয়ে বলছেন, সাদেকের মা জায়নামাজটা তোমার, আর ছাতাটি আমার। দেখলাম, বাবা নিজেই ছাতাটি ফুটিয়ে হেসে দিয়ে বললেন, যাক বিনা পয়সায় একটি হাতিও পেলাম। মা কোনো কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে, বললেন, ‘আপনার সহকর্মীরা খুব সুন্দর একটি হাতিমার্কা, হাতলওয়ালা চমত্কার বাঁকানো চাঁদের মতো দেখতে, মা একটু হেসে দিয়ে যেন তিনি তার শৈশবে-কৈশোরে দেখা কোনো বাঁকানো হাতলের কথা মনে করেই পুনরায় হেঁসে জানালেন, ‘ওই বাঁকানো হাতল দিয়ে আমাদের বড় চাচা সেবার গভীর রাতে এক চোরকে ধরে ফেলেছিলেন, কখন যে কোন সময় গলায়, নাকি শার্টের কলারে টান দিয়ে চোরকে ধরাশায়ী করতে বড় চাচার কোনো বেগ পেতে হয়নি, আজ অনেক বছর পর বেতের বাঁকানো ছাতার হাতল দেখে মনে পড়ল বড় চাচার ঘরে চোর ঢুকে পোটলা-পাটলি মাথায় তোলার পরেই ঘটেছিল চোরের জীবনের দুর্ঘটনা। বাবা আজ সাত সকালে উপহার পাওয়া সেই ছাতাটি নিয়ে বের হয়েছেন, মায়ের কড়া নির্দেশে, অথচ মেঘ বাদল ঝড় বৃষ্টি কিছুই নেই, প্রাতঃভ্রমণে যাওয়ার আগে, যাওয়ার সময়, মা-বাবাকে যেমন অন্যদিন বলেন, আজকেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না।

মায়ের কথা শুনেই দরজার ওপার থেকে বাবার কথা শুনে আমার মনে হলো তিনি বোধকরি কারও ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন সকাল থেকেই। বেশ ঝাঁজাল গলায় বললেন, ‘আবহাওয়া’ দফতরের প্রতি আমার একটুও আস্থা নাই যেদিন বলবে আজ ঝড় বৃষ্টি কিছু হবে না, ঠিক সেদিনই হবে তার উল্টো— আবহাওয়ার খবর যখন রেডিওতে শুনি, আমার খুব হাসি পায়। ‘হলেও হতে পারে’ গত পরশু কেউ জানতেই পারল না, আদৌ আজ ওয়েদার ফোরকাস্ট হয়েছে কিনা নাকি হয়নি। ভাগ্যিস ছাতা তুমি জোর করে সঙ্গে দিয়েছিলে, নয়তো একেবারে ছাগলভেজা হয়ে বাসায় ফিরতে হতো। অফিস কলিগরা ভাগ্যিস গত সপ্তাহে হাতিমার্কা ছাতাটি উপহার দিয়েছিলেন, আমিও ঠিক করেছি, তোমার চোখ রাঙানি না দেখে ভবিষ্যতে যেন ভিজে ঘরে ফিরতে না হয় সেজন্য প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণের সময় ওকে সঙ্গে নিয়ে যাব। সব ঋতুতেই ছাতা ব্রিটিশদের মতো সঙ্গেই থাকবে, তুমি চিন্তা করো না। সাদেকের মা।

বাবা হন হন করে বেরিয়ে গেলেন, আজকেও। প্রতিদিনের মতো। মা সজোরে দরজা লাগিয়ে দিয়েই আমার ছোটবোন ফরিদার ঘরে ঢুকে প্রায় হিড়হিড় করে টেনে আমার শোবার ঘরে এনে মশারিটা দেখিয়ে ঝাঁজালো গলায় বললেন— তোর ভাই গতকাল সারারাত কোথায় ছিল তুই জানিস?

না জানিনে, ফরিদার উত্তর। যেমন ভাই, তেমন বোন— মায়ের কণ্ঠের স্বরে পুরো বাড়িটা জেগে গেল, সাদেক, ফরিদার মা চিত্কার করছেন। মা আমাকে দেখিয়ে বললেন, যে ছেলের আর পনেরো দিন পরে পরীক্ষা, তাও আবার ফাইনাল সেই ছেলে যদি সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমায় তাও মশারি ছাড়া, যে হারে মশার কামড়ে ডেঙ্গু শুরু হয়েছে। চারদিক, অথচ আমি ছিলাম আধো ঘুমে, আধো জাগরণে।

মা, কথা শেষ না করে ফরিদাকে বলল, তোর ভাইতো দোহারপাড়ার হারান বাউল হবে আমার ঘরের দেয়ালজুড়ে থাকা এক আধুনিক বাউলের পোস্টারটি হয়তো ছিঁড়তেন না। দেয়ালের গায়ে লাগানো সেই বাউলের চুল দেখে বললেন, হারামজাদার চুল কাটার টাকা নাই। ছেঁড়া প্যান্ট ও শার্টের তালি লাগানো দেখে এবার একটু যেন নরম হয়ে ফরিদাকে বললেন, সাদেকের ভূত-ভবিষ্যত্ একদম অন্ধকার। পোস্টারের বাউল ছেলেটার ঠিকানা জানা থাকলে, চুলকাটার কয়েকটি টাকা পাঠিয়ে দিতে বলিস তোর ভাইকে। তার পরেও রক্ষা পায়নি— সেই আধুনিক বাউল।

আমি চুপচাপ লেপের নিচে শুয়ে শুয়ে মায়ের রাগারাগি শুনছিলাম, ভালেই লাগছিল, হঠাত্ চিত্কার করে বললেন, সাহেব, আজকাল সিগারেটও খাচ্ছে। টেবিল ঘড়িটায় বেলা ৪টা বেজে আছে একটি পেনসিল ব্যাটারি লাগিয়ে দিলেই— তোর ভাইকে উঠতে বল— তোর বড় মামাকে খবর দিতে হবে। হারামজাদা রোকন শেখ যখন-তখন এ বাড়িটির দিকে তাকিয়ে কাকে দেখে, কি দ্যাখে, এর বিচার তোর বড় মামাই করতে পারবে।

আমি লেপের ভিতর থেকেই বললাম, হ্যাঁ মা, তোমার ভাইতো আবার শান্তি কমিটির মেম্বার ছিলেন, মা কোনো কথা না বলে চলে যাওয়ার পরে আমি বিছানা ছেড়ে ওঠে ফরিদাকে বললাম,

বড় মামাকে তুই খবর দিবি। মামলাটি তোকে নিয়ে, মা তোকে যেতে বলেছে, ফরিদা কথা না বাড়িয়ে যেন মৃদু হেসে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই আমার মনে হলো ঘড়িটাতে যে ৪টা বেজে আছে, খেয়ালই করিনি। একটি ব্যাটারির জন্য তিন-চারবার ১০-২০ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরেও ব্যাটারি না কিনে কিনেছি সিগারেট। সিগারেট কখনোই বাড়িতে কিংবা আমার ঘরে খাইনে অথচ কালকে দুর্বুদ্ধিতে কেন ঘরের ভেতর সিগারেট ধরিয়েছিলাম, সেই উত্কট গন্ধেই বোধকরি বাবা ইংরেজি ডিকশনারি খোঁজার ছলে এসে কিছু না বলে তাকালেন আমার পড়ার টেবিলের দিকে। দিব্যি ম্যাচ আর সিগারেটের প্যাকেট দেখে মাকে উঁচু গলায়ই ডাকলেন।

রহিমা দেখে যাও, তোমার ছেলের কাণ্ড।

মা তড়িঘড়ি করে ছুটে এলেন আমার ঘরে, ফরিদাও এলো বারান্দা থেকে। এসেই ফরিদা বলল, কালকে হরতাল ডেকেছে বিরোধী দল। মাইকিং শুনলাম।

বাবা ফরিদার কথার সঙ্গে যুক্ত করলেন, তোমার ভাইয়ের ঘরে যে উত্কট গন্ধ, তাতে আমার মনে হচ্ছে, কোনো ইঁদুর মারা গেছে। মা তখনই নাকে কাপড় দিয়ে এদিক-সেদিক এমনকি পড়ার টেবিল, খাটের নিচে ফরিদাকে দেখতে বললেন, দেখতো সত্যিই ইঁদুর মরেছে কিনা?

মায়ের কথা শুনে বাবা ক্ষিপ্ত কণ্ঠেই দেখিয়ে দিলেন আমার পড়ার টেবিলের ওপর ম্যাচ আর সিগারেটের প্যাকেট।

কামাই নাই, রোজগার নাই, সামনে যার পরীক্ষা, তাও আবার ফাইনাল।  ঝাঁজভারী কণ্ঠে বাবা হয়তো আর কিছু বলতেন— মা বাবাকে সে সুযোগ না দিয়ে ঘরের বাইরে নিয়ে গিয়ে যা বললেন, সে কথা আমি আমার ঘরের ভিতর থেকে শুনে আশ্বস্ত হলাম। এই বয়সের ছেলেরা আজকাল বিড়ি-সিগারেট খেয়েই থাকে।

মায়ের অকাট্য যুক্তির কাছে বাবা হেরে গিয়ে বোধহয় গতকাল থেকেই মেজাজ ভীষণ খারাপ। তার উপরে আজ সকালে বাবা যখন প্রাতঃভ্রমণে যাবেন তখন হাতিমার্কা ছাতাটির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার সঙ্গে জানিয়ে দিলেন মা। ফেরার পথে যেন বাজার ঘুরে আসা হয়। মায়ের কথা শুনেই বাবা কোনো কথা না বলে মৃদু হাসতেই মায়ের কণ্ঠ সপ্তমে  চড়ার আগেই তিনি পেছনের দিকে না তাকিয়ে কারও না কথা শুনে পা বাড়ালেন ভ্রমণের দিকে। মা তখন থেকেই রেগে কাঁই হয়েছিলেন, কিছুক্ষণ একটানা কথা বললেন আকাশের সঙ্গে এবং খেদোক্তি করলেন। এ কেরানির সংসারে কেন যে তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা, মা এবং বড় ভাই এখনো বুঝতে পারে না, রহিমা খাতুন।

দিনকয়েক আগে চরমীরকামারি থেকে ছোট ফুফুর ছেলে আনিস ভাই এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। সাইকেলের ক্যারিয়ারে একটি বিশাল ওল নিয়ে, ওল আবার আনিস ভাইয়ের মামির খুবই পছন্দ— এমনকি বাবারও। আমরা সবাই তাকে পছন্দ করি, ফরিদারও পছন্দের আনিস ভাই। আমি, তার কাছে না চাইতেই তিনি তার হারকিউলিস সাইকেলটি আমাকে দিয়ে আগে পরিষ্কার করিয়ে নেওয়ার পরেই প্রতিবারই যেমন বলেন, আজকেও বললেন, সাদেক, সাবধানে সাইকেল চালাবি। পারলে ঈশ্বরদীর পশ্চিম টেংরী স্টেশনে যাবি, দৈনিক ‘পাথর পিণ্ড’ একখানা কিনবি, দাম নেবে দুই আনা— তোর আসা-যাওয়া আইসক্রিম খাওয়ার জন্য দুই আনা। তবে চিনাবাদাম, নোকোনদানা ফরিদার জন্য।

আমি খুশিতে তিনখানা, আনিস ভাইয়ের শেষ কথাটুকু শোনার আগেই সাইকেলে ওঠতে যাব— তখন আবার বললেন, ‘পাথর পিণ্ডে’ খুবই মজার মজার খবর থাকে। সেদিন এক খবর পড়ে আমার মাথাটায় আগুন লেগে গিয়েছিল, ফরিদা জিজ্ঞাসা করল— হঠাত্ আগুন কেন লাগল?

আর বলো না, ঈশ্বরদীর এক বিহারি মেয়েকে নিয়ে কী যেন সব লিখেছিল, তাই নিয়ে বিহারি-বাঙালিদের ভিতরে মারামারির উপক্রম, ঠিক তখনই ঈশ্বরদী কলেজের প্রিন্সিপ্যাল, আমাদের সমাজী স্যার, ওই পথ দিয়েই আসছিলেন, পশ্চিম ট্রেংরি আর ঈশ্বরদী স্টেশনের সিগন্যালম্যান ইসহাক বিহারির ছেলে ইয়াকুব খান ও তার চার-পাঁচজন বন্ধু, পাকশির যুক্তিতলার হামজা কোরেশি হাসপাতাল রোডের শাহেদ কাঁচতলার ছেলে, এরা সবাই খুবই খারাপ ব্যবহার করেছিল সমাজী স্যারের সঙ্গে, স্যার-গণ্ডগোল, সম্ভাব্য মারামারি থামাতে গিয়েই শুনেছিলেন অশ্রাব্য ভাষায় বিহারিদের বার্তা, কখন, দিনকয়েক পরে চরমীরকামারিতেই শুনলাম, ৫ টাকার ভাড়ায় হামজা, শাহেদ গিয়েছিল বাঙালিদের সঙ্গে মারামারি করতে, মজাটা হলো, যে মেয়েটিকে নিয়ে দৈনিক পাথর পিণ্ডে খবর বেরিয়েছিল, সেই বেগম সুমাইয়া খান, ইয়াকুব খানদের কেউই-হয় না। তবু তাকে নাকি আসতে হয়েছিল, মেয়েটির পক্ষে প্রতিবাদ জানাতে জনাকয়েক বন্ধুসহ। স্বজাতির টানে।

চরমীরকামারি থেকে আনিস ভাই কেন যে আমাদের দোহারপাড়ায় আসে, বাবা, মা, ফরিদা, এমনকি আমিও জানি, উনি যখনই আসেন, ওল, পাটালি গুড়, পেয়ারা এমনকি দাপুনিয়া, মাধবপুর, আওতাপাড়ার আম লিচুও নিয়ে আসেন, আজকে যেমন এলেন, বাবা-মায়ের পছন্দের ওল নিয়ে।

বাবা প্রাতঃভ্রমণ শেষ করে বাজারসহ যখন বাড়িতে এলেন, তখন প্রায় দুপুর, মা, কিছু বলার আগেই বাবা বললেন, গত রাতে ঢাকায় নাকি অনেক লোককে পাকিস্তানি আর্মিরা মেরে ফেলেছে, সেই সঙ্গে পুড়িয়ে দিয়েছে বাড়িঘর।

তুমি কার কাছ থেকে শুনলে। বললাম মাকে। তোর বাবা শুনে এসেছে। বাজার থেকে, মোগল চাচা বলেছে। আমার আর মায়ের কথোপকথনের মাঝখানে বাবা এসে বললেন, আকাশবাণীর দিল্লির বাংলা খবর পাঠক নীলিমা সেন জানালেন, পাকিস্তানি সেনারা যাকে যেখানে পাচ্ছে গুলি করে মারছেন, একটু বিরতি দিয়ে বাবা বললেন, আমাদের ব্রিটিশরাই ভালো ছিল, ভালো থাকলেও— ভালো থাকতে দেয়নি এদেশের লোকজন। ব্রিটিশদের দালালির জন্য আমাদের এ পাবনা শহরে দুজন খেতাব পেয়েছিলেন, একজন হিন্দু রায় বাহাদুর, আরেকজন মুসলমান খান বাহাদুর। সেই আনন্দেই সেবার ওই দুজন শহরের জ্যাকসন রোডে সারারাত ৩০-৪০টি হ্যাজাক জ্বালিয়ে, নাচ, গান বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ করেছিলেন। শুনেছিলাম। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বছরের মাঝামাঝি সময়ে— সাদেকের মামা যেদিন শান্তি কমিটিতে যোগ দিল— না করেছিলাম বরং ভয় দেখিয়ে বলেছিল— আমি ভগ্নিপতি না হলে নৌকায় পাঠিয়ে দিতাম। সেদিন বাবা-মা কোনো কথাই বলেননি, বরং বড় মামার মুখে শুনেছিলেন, ওই শেখ সাহেবেই যত নষ্টের মূল, সোনার পাকিস্তানটাকে দুই টুকরা করে, একদিন দেশ বিক্রি করে দেবে ইন্দিরার কাছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রায় চার বছর পালিয়ে ছিলেন, ঢাকায়, খুলনায় বড় মামা। চার বছর পরে ফিরে এসে, বেশ বুক ফুলিয়ে বলেছিলেন বাবাকে— কোথায় গেল তোমাদের নৌকা, নৌকার মাঝিমাল্লারা। সোনার পাকিস্তানকে শেষ না করলে... মামার ঐসব কথা শুনেই মা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়ে, মামাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই মামা রাজি হলেন। আমাদের বড়।

বৌ-ভাতের দিন মামা নিজেই কেন যে হ্যাজাক জ্বালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চোখ, চোখের ভুরু, গোঁফসহ মুখটাকে পুড়িয়ে বেশ অনেক দিন পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট থেকে ফিরলে, তাকে দেখে আমরা সবাই ভয় পেয়েছিলাম। তিনি মুখে গামছা দিয়ে আসতেন আমাদের বাড়িতে। বাবার কাছে শুনেছিলাম, তোর হুমায়ুন মামা মুক্তিযুদ্ধের বছরে দোগাছির অনেকগুলো হিন্দুকে, মুসলমানকে গুলি করে মেরেই ক্ষান্ত হননি, শান্তি কমিটির মেম্বার, সেই গর্বে অনেক হিন্দুর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে  সেই আগুনে হিন্দুদের ফেলে দিয়ে, শান্তি কমিটির অন্যরা মিলে লুটপাট করে বিজয়ীর বেশে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে বলতে ফিরে এসেছিল দোহারপাড়ায়।

হুমায়ুন মামাকে দেখলেই আমার মাকে গিয়ে বলি, রাস্তায় একজন মুখপোড়া হনুমান দেখলাম। দেখে এলাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর