শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দ্য লেডি, অর দ্য টাইগার

মূল : ফ্রান্ক স্টকটন অনুবাদ : নেয়ামত উল্ল্যাহ ভূইয়া

দ্য লেডি, অর দ্য টাইগার

[ফ্রান্ক রিচার্ড স্টকটন (১৮৩৪-১৯০২) কৌতুক কাহিনী ও শিশুতোষ রূপকথার গল্প লেখক। জম্ম ফিলাডেলফিয়ায়। তার প্রথম রূপকথার গল্প ‘তিং-অ্যা-লিং’ রিভার সাইজ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ তে। গল্প সংকলন বের হয় ১৮৭০ সনে। তাঁর বিখ্যাত গল্প ‘দ্য লেডি, অর দ্য টাইগার’ (১৮৮২) কে নিছক গল্প না বলে বরং উপকথা বলা শ্রেয়। এ গল্পে লেখক বা বর্ণনাকারী ছাড়া আর কোন কথক নেই। নেই কোন সংলাপ। রহস্য গল্পের মতো এ গল্পের গতিধারা।]

 

সেকালের কথা। তখন একদেশে ছিল এক রাজা। আধা-সভ্য না বলে আধা-বর্বর বলাই ভালো। এ রাজা একজন প্রাণচঞ্চল, উচ্ছ¡সিত খেয়ালী মানুষ। খোশ খেয়ালে খামখেয়ালিপনা থাকলেও কর্তৃত্বে তিনি দুর্দম-দুর্নিবার। তার অভিলাষ-ইচ্ছা যতই খেয়ালী হোক বাস্তবে রূপ নেয় পলকে। তিনি সলাপরামর্শ যা করেন- সবই তার নিজের সঙ্গে। নিজেই কোনো বিষয়ে সম্মত হন নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করে। তারপর সে ভাবনা কাজে রূপ দেন। ধার করা যে সভ্য-প্রবণতা তাকে বর্বর থেকে আধা-বর্বর বানিয়েছে সেটার নাম প্রকাশ্য মল্লভূমি। এ ভূমিতেই প্রদর্শিত হয় যত মানবিক পুরুষালি আর দানবিক বীরত্ব-বাহাদুরি। বিশাল আকারের এক গ্যালারি। বিরাট গোলাকার নাট্যশালা। রহস্যময় খিলান। গোপন সুড়ঙ্গপথ। যেন কাব্যময় বিচারসভা। এখানে অপরাধী শাস্তি পায়, সুকর্মী পুরস্কৃত হয় নিরপেক্ষ রাজাদেশে।  আর এ ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার নাম ‘ভাগ্য পরীক্ষা’ কিংবা ‘দৈবযোগ।’

এ যেন এক রঙ্গমঞ্চ। মল্লযুদ্ধের সেই মাঠে সব প্রজাসাধারণ। গ্যালারি জনসমুদ্র। অভিযুক্ত প্রজাকে বের করে এনে রঙ্গশালায় দাঁড় করানো হয়। আসামির ঠিক উল্টাদিকে দুটো দরজা। খোলা মল্লমাঠের ওপাশে। দরজা দুটোর আকৃতি, আকার, নমুনা এক ও অভিন্ন। পাশাপাশি খিলান দেওয়া। আসামির কর্তব্য ও সুযোগ এই যে, সে যে কোনো একটা দরজার দিকে হেঁটে যায়। দুটোর মধ্যে যে কোনো একটা দরজা খোলে। দরজা নির্বাচনের কাজটা সে তার ইচ্ছামাফিক করে। কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। ন্যায়ানুগ এ কপাট নির্বাচন। অপরাধী প্রজার ইচ্ছাই শেষ কথা।

এ পাশাপাশি দরজা দুটোর একটা দরজা খুললে দেখতে পাওয়া যায় একটা হিংস্র বাঘ। ভয়ানক ক্ষুধার্ত। নির্দয়-নিষ্ঠুর। প্রচণ্ড ভয়ঙ্কর জন্তু। কপাট খোলামাত্র বেরিয়ে আসে হিংস্র বাঘটা। ঝাঁপিয়ে পড়ে অপরাধীর ওপর। ছিঁড়ে-খুঁড়ে খায় তার শরীরটা। দাঁতের ঘায়ে, নখের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন করে খাবলে খায় অপরাধীর নরম দেহটা। এভাবেই সাব্যস্ত হয় এ আসামি সত্যিকারের অপরাধী। এটাই অকাট্য প্রমাণ তার অপরাধের। এটাই তার অপরাধের যোগ্য শাস্তি। আর অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি অন্য কপাট খোলে- সে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসে অনিন্দ্য সুন্দরী এক ষোড়শী। রাজার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে পছন্দ করে আনা হয় প্রজাদের নারীকুল থেকে। সৌন্দর্যে অতুল। বদন তুলতুল। রাজ্যের সেরা সুন্দরী তরুণী। রাজকীয় পছন্দের পাত্রী ডানাকাটা পরী সে কন্যা। এ তন্বীর সঙ্গেই তৎক্ষণাৎ বিয়ে হবে সে অভিযুক্ত ব্যক্তির। এ হচ্ছে নির্দোষ সাব্যস্ত হওয়া অভিযুক্তের পরম পুরস্কার।          

আধা-সভ্য রাজার একটা কন্যা আছে। এ রাজকন্যার দিলেও বাবার মতো নানা খোশ-খেয়াল। খেয়ালিপনায় বাবার ভাবশিষ্য; ফটোকপি। এ রাজকন্যার যৌবন যেমন প্রস্ফুটিত হচ্ছে; সঙ্গে সঙ্গে খোশখেয়ালও পুষ্পিত হচ্ছে নানা বাহারে। রাজদরবারের অমাত্যদের মধ্যে রয়েছে এক সুদর্শন যুবক। তার জম্ম এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। উচ্চ বংশমর্যাদা। আচরণে সুশীল। হৃদয়বৃত্তিতে চিরায়ত নায়কোচিত স্বভাবের। এ যুবক প্রেমে পড়ে ওই খেয়ালী রাজকন্যার। নিখাদ তার ভালোবাসা। এ রাজসভাষদের প্রণয়ে রাজকুমারীও সদা প্রসন্ন। অনুরক্ত, উদ্বেলিত।

এ প্রেম-প্রণয়ের সম্পর্কটা কয় মাস ধরে বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু বিধি বাম। একদিন রাজা এ হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের খোঁজ পেয়ে যান। আর তখনই ঘটে যত বিপত্তি। রাজকর্মে আর রাজধর্মে রাজা অবিচল, দৃঢ়চেতা। অন্যথা হলো না এক্ষণেও। প্রশ্রয় দিলেন না কোনো দ্বিধাকে। চরম কর্তব্যপরায়ণ। অবিলম্বে এ যুবক পার্ষদকে নেওয়া হলো কয়েদখানায়। রাজদরবারের সেই মল্ল মাঠে বিচার হবে তার। দিনক্ষণ পাকা। রাজ্যের বাঘের খাঁচাগুলো ভরা হলো প্রচণ্ড হিংস্র, বন্য আর ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর জানোয়ারে। এই হিংস্র জন্তুগুলোকে নির্বাচন করা হলো মল্ল-ময়দানের বিচার সভার প্রয়োজনে।

অন্যদিকে নির্বাচন করা হলো রাজ্যের সেরা সুন্দরী, অনিন্দ্য রূপসী ও ষোড়শী কুমারী কন্যাকে যে কিনা ওই অভিযুক্ত যুবকের বিয়ের যোগ্য কনে হবে- অবশ্য তার ভাগ্য যদি সেদিন ভিন্নরূপে নির্ধারিত হয়। উপযুক্ত বিচারকমণ্ডলী সারা রাজ্যে জরিপ-অনুসন্ধান চালিয়ে অতি সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন করেছে এ তন্বী তরুণীকে। এরই মধ্যে জানা হয়ে গেছে, এ রাজ-অমাত্যের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনীত হয়েছে। মোদ্দা কথা, অভিযোগ হলো- রাজসভাষদের সদস্য এ যুবক রাজকন্যাকে ভালোবেসেছে। আর এ প্রক্রিয়ায়ই নির্ধারিত হয়ে যাবে যে, এ যুবক রাজকন্যার প্রেমে পড়ে অপরাধ করেছে কি করেনি। আজ বিচারের জন্য নির্দিষ্ট দিন। মল্লমঞ্চের গ্যালারিতে উৎসুক জনতার জঙ্গল। রাজা আর রাজসভাষদ স্ব স্ব আসনে সদয়ে উপবিষ্ট। তাদের উল্টাদিকেই দুটি দরজা। দুয়ার জোড়াকে বলা যায় যমজ যমালয় দুয়ার। এদের একই নমুনা, একই আকৃতি। অভিন্নরূপে নিদারুণ। নিষ্ঠুর নিয়তি দ্বারা।  রাজ-সংকেত পাওয়া গেছে। ইঙ্গিতের আভাসে খুলে যায় রাজ মজলিশের একটি খিলান। রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আসেন সেই রাজকুমারী-অভিযুক্ত রাজ-অমাত্যের প্রেমিকা। দীর্ঘাঙ্গী, রূপসী, মোহনীয় ভঙ্গি, রমণীয় চাহনী, উজ্জ্বল চেহারা, অনিন্দ্য অপ্সরা।

যুবককে এগিয়ে আসতে ইশারা করা হলো। রীতি অনুযায়ী সে রাজাকে কুর্ণিশ করে। অন্য রাজসভাষদদের দিকে তার কোনো দৃষ্টি নেই। তার দৃষ্টি আটকে আছে একমাত্র রাজকুমারীর ওপর-  যে রাজার ডানদিকের আসনটায় উপবিষ্ট। অবশ্য তার স্বভাবের মধ্যে বর্বরতা হিস্সা না থাকলে হয়তো সে এমন বিচারসভায় উপস্থিত থাকতে চাইত না। এখন রাজকন্যা অনেক বেশি ক্ষমতা, অনেক বেশি প্রভাবের অধিকারী। এরকম বিষয়ে যাদের আগ্রহী আর কৌত‚হলী দেখা গেছে- তাদের সবার চেয়ে তার উৎসাহ-আকর্ষণ অতিমাত্রিক। আর তার ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতার মাহাত্যেই সে তা অর্জন করেছে। কারণ অন্যদের যা জানা নেই, তার নিজের তা জানা। বিচারসভার ভাগ্য পরীক্ষার নিয়তি- দুয়ারের আসল গোপন রহস্য তার জানা আছে। দরজা দুটির ভিতরের প্রকোষ্ঠের কোনটির মধ্যে হিংস্র বাঘের খাঁচা, আর কোনটির মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দরী ষোড়শী অপেক্ষা করছে- এ গোপন সত্যটা সে জানে। অন্যদের তা জানার উপায় নেই। কারণ দরজা দুটোর পেছনে এঁটে দেওয়া হয়েছে পুরো চামড়ার ভারী ভারী পর্দার আবরণ। বাঘের হুঙ্কার-গর্জন বা অন্য কোনো আওয়াজ অথবা ইঙ্গিতপূর্ণ কোনো শব্দ সংকেত বাইরে আসার জো নেই। আর দরজার হুড়কা খুলতে দরজার কাছাকাছি যে যাবে তার পক্ষেও কিচ্ছুটি আগ থেকে আন্দাজ করা এক্কেবারেই অসম্ভব। বলা যায়, ব্যবস্থা ফুল-প্রুফ। অথচ সোনার জোরে এবং স্ত্রীলোকের ইচ্ছার অপার ক্ষমতাবলে নিয়তি-দরজা দুটোর অতি গোপন রহস্য রাজকুমারীর কাছে উম্মোচিত হয়েছে নিখুঁতভাবে।

রাজকুমারী জানে কোন দুয়ারের পেছনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসবে সুন্দরী ষোড়শী। শুধু তাই নয়, লজ্জাজনিত আরক্তিম আভায় হাসির দ্যুতি ছড়িয়ে যে রূপসী কন্যা-কুমারী দরজা খোলামাত্র বেরিয়ে আসবে সেই সুন্দরী তন্বী তরুণীটি কে- তার পরিচয় ঠিকুজিও রাজকন্যার জানা। সে এই রাজপ্রাসাদেরই এক সুন্দরী অপ্সরা। সুদর্শনা, কান্তিময়ী, প্রিয়ভাষী। এ পরিচারিকাকেই নির্বাচিত করা হয়েছে পুরস্কার হিসেবে, অবশ্য যদি অভিযুক্ত যুবক এ দরজাটাই খোলে। কারণ এ দরজাটাকে খোলার জন্য নির্বাচন করা মানেই অভিযুক্ত সম্পূর্ণ নির্দোষ। এ পদ্ধতিতেই নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার রেওয়াজ এ আধা-বর্বর রাজার রাজ্যে। এ ষোড়শীকে তীব্র ঘৃণা করে রাজকন্যা। তার প্রতি চরম ঈর্ষা। রাজকুমারী আগেও প্রায়ই লক্ষ করেছে যে, ওই তরুণী এ সুদর্শন যুবক পার্ষদের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকত। নজরে প্রণয় আর প্রসন্নতার ভাব। পরম আনন্দের আকুতি। পুলকিত চাহনীতে প্রেমাসক্তি। চেহারায় আনন্দের হিল্লোল, গোলাপি দ্যুতি। মাঝে মাঝে মনে হতো যুবকটিও সেটা বুঝত। হৃদয়ঙ্গম করত। উপলব্ধিতে স্থান দিত। এমনকি দৃষ্টির বিনিময়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিত। বলা যায় নজর বিনিময়। আড়ালে-আবডালে দু’চারবার দুজনকে কথাবার্তা বলতেও দেখেছে তা যদিও খুবই স্বল্প-সময়ের জন্য। তাতে কি? কতক্ষণ ধরে কথা বলেছে- সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। সময় যত স্বল্পই হোক এরই মধ্যে তো অনেক গভীর কিছু বলা যায়। হতে পারে তাদের মধ্যে যে বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে সেটা খুবই তুচ্ছ, খুবই নগণ্য। হ্যাঁ, হতে পারে। তবে রাজকুমারী সেটা কেমন করে জানবে! মেয়েটা সুন্দরী। তবে সে নজর দিয়েছে এমন একজনের ওপর যাকে ভলোবাসে স্বয়ং রাজকন্যা। যে রাজকন্যার শরীরে তীব্রভাবে বইছে বন্য-বর্বর-অভব্য রাজকীয় রক্ত সুদীর্ঘ বংশপরম্পরায়। রাজকুমারী তাই এ সুন্দরী তরুণীটাকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে, যে কিনা অপেক্ষা করছে ওই নীরব দরজাটার ওধারে; যে কিনা আরক্তিম আভায় প্রণয়-মিলনের লজ্জাভাব ফুটিয়ে কম্পিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে দরজার ভিতরের কক্ষে। অভিযুক্ত যুবক কাতর দৃষ্টিতে তাকায় রাজকুমারীর দিকে। চোখে চোখে নজর পড়ে দুজনার। রাজকুমারী বসে আছেন নিথর। ভাসছে উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের অথৈ সাগরে। মুখ ফ্যাকাসে, বিবর্ণ, শুকনো। চেহারা পাণ্ডুর। যেন রক্তশূন্য প্রতিমা। প্রাণহীন পুতুল। অভিযুক্ত প্রেমিক যুবক ভরসার দৃষ্টিতে তাকায় তার প্রেয়সী রাজকুমারীর দিকে। যুবক তার প্রণয়িনীর স্বভাবের প্রকৃতি বিলক্ষণ জানে। সে চাইলে অবশ্যই জানতে পারবে গোপন রহস্যটা। কোনো বাধাই তার কাছে প্রতিবন্ধকতা নয়। তাই যুবকের একান্ত ইচ্ছা যে, তার প্রেমিকা জেনে রাখুক গোপন খবরটা।

রাজকুমারীর সফলতা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। কেবল ওই রহস্য আবিষ্কারের বিষয়ে রাজকুমারীর শতভাগ সাফল্যের নিশ্চিত খবরটা পাওয়ার দোলাচলে রইল সে। রাজকুমারীর চোখে চোখ রাখতে না রাখতেই যুবক নিশ্চিত হয়- রাজকুমারী সফল হয়েছে। তাছাড়া তার অন্তরাত্না তো জানেই যে, রাজকুমারী সফল হবেই হবে। এখন অভিযুক্তের উৎকণ্ঠিত চকিত চাহনী একটি প্রশ্নই রাখে : ‘কোন দরজা?’ এ নীরব প্রশ্ন এতটাই সরল-সাবলীল ছিল যে, গগনবিদারী চিৎকারেও বোধকরি এর বেশি উচ্চৈঃস্বরে প্রশ্নটি উচ্চারণ করা সম্ভব হতো না। ক্ষণিকের জন্যও প্রশ্নটা উপেক্ষিত হওয়ার নয়। এমন ঝলকে উঠা প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব না এসে পারে না। রাজকুমারী ডান হাতটা কুশনের ওপর রাখা। সে তার ওই হাত খানিকটা উপরে তোলে। ঈষৎ ঝাঁকুনি দিয়ে চটজলদি ডানদিকটা নির্দেশ করে। রাজকন্যার প্রেমিক ছাড়া আর কেউই বোধকরি তা ঠাওর করতে পারেনি। কারণ প্রেমিক যুবকের দৃষ্টিই তো কেবল রাজকুমারীর দিকে। আর দরবারের সবার দৃষ্টি তো একমাত্র অভিযুক্ত যুবকের প্রতি। যুবক ঘুরে দাঁড়ায়। দৃঢ় অথচ দ্রুত পদে এগিয়ে যায়। খোলা খালি জায়গাটা পার হয়। প্রতিটি দর্শকের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন থেমে যায়। প্রত্যেকের শ্বাস রুদ্ধ। অপলক দৃষ্টি। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ডানদিকের দরজার দিকে ছুটে যায় যুবকটি, খুলে ফেলে দরজার কপাট। এক্ষণে কাহিনীর প্রতিপাদ্য বিষয় এটি : এ দরজার দিয়ে কে বেরিয়ে এলো? হিংস্র বাঘ, নাকি সুন্দরী ষোড়শী? এ প্রশ্নের ওপর আমরা যত আলোকপাত করি ততই কঠিনতর হয়ে ধরা দেয় এর জবাবটা। এর সঙ্গে মানব মনের গতি-প্রকৃতি জড়িত। প্রেম-প্রণয়ের আঁকাবাঁকা বিভ্রান্তিকর পথেই আমরা ধাবিত হই। গোলকধাঁধার ঘুরপ্যাঁচে পড়ে এর জবাব পাওয়াটা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। সুপ্রিয় পাঠক! বিষয়টা নিয়ে ভাবুন না! এমন করে ভাববে না যেন প্রশ্নের জবাবটা আপনার নিজের ওপর নির্ভরশীল। বরং এমন করে ভাবুন যে, উত্তরটা নির্ভর করে খোশখেয়ালী, আধা-বর্বর, উগ্র স্বভাবের সেই রাজকুমারীর ওপর- যার চিত্ত জ্বলে খাক হচ্ছে হতাশা আর ঈর্ষার যুগল অগ্নির জ্বলন্ত চিতায়। সে তার প্রেমিককে হারাচ্ছে। সেটার চেয়েও বড় প্রশ্ন তার প্রেমিককে  কে পেতে যাচ্ছে?

রাজকুমারীর এ সিদ্ধান্তটা তাৎক্ষণিক জ্ঞাপিত হলেও নেওয়া হয়েছে বহু দিনরাতের সুচিন্তিত ক্লেশ থেকে। অনেক দিনের সুবিবেচিত যন্ত্রণা থেকে তা সূচিত ও চূড়ান্তকৃত। রাজকন্যা জানে সে জিজ্ঞাসিত হতে পারে। এমন প্রশ্নের জবাবও তার ঠিক করা আছে। তাই বিন্দুমাত্র দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না ভুগেই রাজকন্যা তার প্রেমিকাকে ডানদিকের দরজাটা ইঙ্গিত করল। রাজকুমারীর সিদ্ধান্তের প্রশ্নটিকে কারোরই হাল্কাভাবে বিবেচনার সুযোগ নেই। আর আমারও পূর্বাহেই কিছু আন্দাজ করা সমীচীন হবে না। কারণ জবাবটা শুধু একজনই জানেন। আর সে হচ্ছে রাজকুমারী নিজে। সুতরাং আমি প্রশ্নের জবাবের ভারটা আপনাদের সবার কাছে ছেড়ে দিচ্ছি : যুবকটি যে দরজাটা খুলল সেই দরজাটা দিয়ে কে বেরিয়ে আসবে- তরুণী, নাকি শার্দূল?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর