এক নিঃসন্তান বৃক্ষদম্পতির সাথে আমার পরিচয় ছিল।
ওরা দুজন পাশাপাশি ছিল।
বহুদিন ছিল মহাকাল সাক্ষী রেখেশাখায় শাখায় তারা প্রণয়ে আবিল।
আমার শৈশবের হাতের চেটোর মত যখন
তাদের সবুজ পাতা
তখন ওরা অনেক পরিণত।
অনন্ত যৌবন ওদের দেহে হিরন্ময়,
পূবালি মলয় পাতায় পাতায় বিভোর।
সেই নিঃসন্তান বৃক্ষদম্পতির সাথে লোকেদের
দেখা হত প্রতিদিন।
গুণীরা বলতেন তারা কালের রাজদণ্ড,
আমাদের জায়নামাজ আর পুজোর ঘণ্টায়
জীবনের অমর কলতান অপরূপ!
শৈশবের ভরাট স্মৃতিতে কী উদার মহীরুহ সতেজ
আহ্লাদের দুটো পাতা তাদের
খুব যতন করে রেখে দেই মায়াময়
সবুজসাথী বইয়ের ভাঁজে শুয়ে নির্ভয়ে।
সেই বৃক্ষদম্পতির মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলো অকস্মাৎ।
ফ্যাকাসে বিকেলে তাদের শরীরে
লক্ষ করাতের দাঁত ভীষণ প্রবল।
চাউলের কলের নাকি অনেক দাবি।
সেই বৃক্ষদম্পতির সাথে আর আমার নাই দেখা।
দেখা নাই তাদের ডালে সবুজ পাতার।
বক শালিখ ধনে চিল ফিঙের নাচ আর
কাঠবেড়ালির হুটোপুটি উজাড় এবার।
সেই বৃক্ষদম্পতির সাথে আর নাই বাতাসের কথা।
শুধু সেই দুটো একদা সবুজ পাতা
খয়েরি ফসিল বিশেষ বিশুষ্ক স্নান
শৈশবের বইয়ের ভাঁজে সকরুণ রূপকথা।