শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

সান ভ্যালি লজে হেমিংওয়ে

সান ভ্যালি লজে হেমিংওয়ে

বিংশ শতকের  অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বহুলপঠিত ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’ কেমন করে লেখা হলো গ্রেগরি ফোলের লেখা অনুসরণে তাই উপস্থাপন করেছেন আন্দালিব রাশদী

 

সেপ্টেম্বর ১৯৩৯, আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বৃহস্পতি তখন তুঙ্গে। তিনি একজন উঠতি নারী লেখকের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। হেমিংওয়ের জীবনের চেয়ে বড় যে ব্যক্তিত্ব এই নারী তার আড়ালে হারিয়ে যাওয়ার নন।

হেমিংওয়ে নতুন উপন্যাস লিখছেন ‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’; গর্জন করা বিশের দশকে তার যে বিশাল সৃষ্টি এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সেই সৃষ্টির সঙ্গে। তিনি এক নতুন রাজ্যে চলে গেলেন, ওয়েস্টার্ন ওয়েসিস, সেখানে তিনি প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকায় জীবিত শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে নির্বিঘ্নে তার কাজটি শেষ করতে পারবেন।

এক বছর পর চুক্তির সময়কাল শেষে হলো। ১৯৪০-এর অক্টোবরে চার্লস স্ক্রিবনার্স অ্যান্ড সন্স প্রকাশ করল প্রেম যুদ্ধ ও মৃত্যু নিয়ে ৫০৭ পৃষ্ঠার মহাকাব্যিক উপন্যাস ‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’।

অচিরেই তার স্ত্রী হতে যাচ্ছেন এমন একজন মার্থা গেলহর্নকে বইটি উৎসর্গ করলেন, দ্রুত বইটি শেলফ থেকে উধাও হতে থাকল।

১৯৪১ জানুয়ারি নাগাদ বইটি চার লাখ কপিরও বেশি বিক্রি হয়ে গেল লাইফ ম্যাগাজিন হেমিংওয়ে ও মার্থাকে নিয়ে লম্বা এক ফটো ফিচার প্রকাশ করল; সান ভ্যালিতে হেমিংওয়ে উপন্যাসিকের নতুন স্ত্রী। দুজন হয়ে উঠলেন আমেরিকার সেলিব্রেটি দম্পতি। লাইফ ম্যাগাজিনের লেখাটিতে দেখা গেল মার্থা ও হেমিংওয়ে সান ভ্যালি লজের পাটাতনে বসে হাসাহাসি করছেন, পেন্সিল ও কাগজ নিয়ে হেমিংওয়ে লিখছেন, এই দম্পতি নাচছেন, খাচ্ছেন, আলপাইন আনন্দ নিবাস ট্রেইল ক্রিক কেবিনে পান করছেন। লেখার শুরুটাতেই হেমিংওয়ে ও তার উপন্যাসের ভূয়সী প্রশংসা : তার শৈলী তীক্ষ ও স্বচ্ছ তবুও স্পষ্ট ও সমৃদ্ধ, অনেকেই অনুকরণ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কেউ তার সমকক্ষ হতে পারেননি। তার কাহিনীর কথোপকথন সাবার জন্য ঈর্ষার বিষয়।

১৯৪১-এ ‘পাপা’-সবার কাছে এ ডাকেই পরিচিত, তার বর্ণাঢ্য জীবনের শীর্ষে, আর যে উপন্যাস তাকে সেখানে নিয়ে গেছে তার সঙ্গে এই পার্বত্য আনন্দ নিবাসের সম্পর্ক তো রয়েছেই।

নতুন আনন্দ নিবাস সান ভ্যালি লজ-এর বাণিজ্যিক প্রচারক জিনভ্যান গিন্ডার হেমিংওয়েকে এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, লেখক নিশ্চয়ই আইডাহোর এই পার্বত্য নিবাস পছন্দ করবেন, তা ছাড়া তিনি তো ঘরকুনো নন, ঘুরে বেড়ানোর মানুষ। তাকে কাজে লাগিয়ে যদি লাইফ-এর মতো বড় আকারের চকচকে কাগজে প্রচার পাওয়া যায় তাহলে তো রিসোর্টটির ভাগ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েই গেল।

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ হেমিংওয়ে ও মার্থা যখন সেখানে পৌঁছলেন, তাদের বরাদ্দ করা হলো একটি বড় হল রুমের শেষ প্রান্তে এক আয়েশি স্যুট, রুম নম্বর ২০৬। এর পাটাতন কাঠের। হেমিংওয়ে এখানে কাজ করবেন, সান ভ্যালি ও কেচামের ওপর দিয়ে দেখা যাবে পর্বতশ্রেণি—হেমিংওয়ে পছন্দ করবেন।

পাপা এর নাম দিলেন, ‘গ্লামার হাউস’।

হেমিংওয়ে পণ্ডিত মার্টি পিটারসন বলেছেন,  সান ভ্যালি হেমিংওয়ের জন্য একটি মাইলস্টোন। ওদিকে আরও বাণিজ্যিক প্রচারণা চাচ্ছে, কাজেই হেমিংওয়েকে যতটা আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা সম্ভব তারা তাই করছে। সেবারই হেমিংওয়ে প্রথম অনুভব করলেন যে, তিনি শক্ত গোড়ালির ওপর দাঁড়িয়ে।

হেমিংওয়ে ও মার্থা সেখানে স্বাচ্ছন্দ্য হতে সময় নিলেন না, তাদের ক’জন বন্ধুও হলো—রিসোর্টের ফটোগ্রাফার লয়েড আর্নল্ড এবং তার স্ত্রী টিল্লি, রিসোর্টের প্রধান গাইড টেইলর উইলিয়ামস। মাছ ধরা, শিকার করা, শহরে ঘোরা—তারা কোনো না কোনোভাবে হেমিংওয়ে দম্পতিকে সন্তুষ্ট রাখতে চাইলেন।

 

কিন্তু গ্ল্যামার হাউস তো কেবল খেলাঘর নয়। ‘দ্য আইডাহো’ হেমিংওয়ের রচয়িতা ফটোগ্রাফারের স্ত্রী টিল্লি আর্নল্ড লিখলেন, তাদের বন্ধুত্বের সূচনাতেই পাপা এটা সবার কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি কাজ করতে সান ভ্যালি এসেছেন। আর্নেস্ট আমার কাছে স্বীকার করেছেন, একটি বড় বই লেখার প্রকল্প নিয়ে প্রকাশককে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি এখানে এসেছেন যাতে অবাধে  নিরবচ্ছিন্ন মনোনিবেশ বজায় রেখে লিখে যেতে পারেন।

খুব ভোরে উঠে লিখতে বসার কাজটা পাপা ধর্মীয় নিষ্ঠার সঙ্গে করে থাকেন। সারা জীবনই তিনি সকালে লিখেছেন আর বিকালটা রেখেছেন খেলাধুলার জন্য।

লয়েড আর্নল্ড তার স্মৃতিকথা, ‘হেমিংওয়ে : হাই অন দ্য ওয়াইল্ড’-এ লিখেছেন উত্তর পার্বত্যাঞ্চলে শিকার থেকে ফেরার পরদিন সকালে  উপন্যাসের কাজ যথারীতি এগিয়ে  চলল। চাঞ্চের প্রলম্বিত সময়ে বললেন, গরমে হাভানার হোটেলের চেয়ে পর্বতে শীতল আবহাওয়ায় এখানে লেখালেখি ভালো এগোচ্ছে। তিনি ত্রয়োদশ অধ্যায়ের খসড়া শেষ করেছেন এবং সান ভ্যালি নামটা কাহিনীতে ব্যবহার করেছেন। আমরা ভ্রু উঁচিয়ে তাকালাম, কেমন করে তা সময়ের সঙ্গে মেলালেন? দেঁতো হাসি দিয়ে হেমিংওয়ে বললেন, ‘এটাই ফিকশনের স্বাধীনতা।’

‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’ উপন্যাসের পুরো গল্পটা মে ১৯৩৭-এর তিন দিনের ঘটনা নিয়ে। আন্তর্জাতিক ব্রিগেডের তরুণ আমেরিকান সৈনিক রবার্ট জর্ডানের ওপর হুকুম হয় ফ্যাসিস্ট শত্রুসৈন্য অবস্থানের ঠিক পেছনে গভীর জলাশয়ের ওপর যে বাঁধটি রয়েছে, তা উড়িয়ে দিতে হবে। এ কাজটি সম্পন্ন করার জন্য জর্ডান পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী গেরিলাদের নিয়োগ করে। জর্ডান ও তার স্প্যানিশ সঙ্গীরা যদি ব্রিজটা ধ্বংস করে দিতে পারে তাহলে অনুগত বাহিনীর আক্রমণের সূচনা হয়, যদি আক্রমণে সাফল্য আসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যে আকার কল্পনা করা হয়েছে, তাতে সাফল্যের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে।

এ ধরনের মহাকাব্যিক উপন্যাস রচনার জন্য যেখানে একজন আমেরিকান স্প্যানিশ গণযুদ্ধে লড়াই করছে—আইডাহো হচ্ছে উপযুক্ত স্থান। সান ভ্যালি তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে স্পেনের কথা স্পেনের পাহাড়, চিরহরিৎ বৃক্ষ পরিষ্কার বায়ু—সব তৈরি করেছে উপন্যাসের দৃশ্য প্রেক্ষাপট।

অবশ্য এটা ঠিকই হেমিংওয়ে ফ্যাশানে সৈনিক প্রেমে পড়বে মারিয়া নামের তরুণী বিদ্রোহীর সঙ্গে। ‘বাদামি মুখমণ্ডলে তার সাদা দাঁত এবং তার ত্বক ও চোখ একই রকম সোনালি তামাটে বাদামি। সোহাগ করে জর্ডান তাকে ডাকে ‘র‌্যাবিট’। সান ভ্যালিতে লিখিত ত্রয়োদশ অধ্যায়ে মারিয়ার সঙ্গে সংসার করার স্বপ্ন দেখা দেয় কিন্তু চির বিরাজমান মৃত্যুর ছায়া সে সম্ভাবনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ‘সে বিশ্বাস করে না এমন কিছু দীর্ঘমেয়াদেও ঘটতে পারে আর যদি ঘটেই সময়টা সে মারিয়ার সঙ্গেই কাটাবে... তাহলে তাকে বিয়ে করা নয় কেন? সে ভাবে, অবশ্যই। আমি অবশ্যই তাকে বিয়ে করব। তারপর আমরা হব আইডাহোর সান ভ্যালির মিস্টার অ্যান্ড মিসেস রবার্ট জর্ডান।’

সান ভ্যালি এভাবেই তার উপন্যাসে চলে এসেছে।

আবেগময়তা ও পেশাগত দিক থেকে সান ভ্যালি হেমিংওয়ের জন্য খুবই ভালো ছিল। পাপা বিশ্বের সীমান্ত খুুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চেয়েছেন—কোথায় তিনি  শান্তিতে অজ্ঞাতনামা হয়ে কাজ করে যেতে পারবেন।

কম বয়সে আইডাহোতে থাকার কারণে সান ভ্যালি হেমিংওয়েকে তারুণ্যে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এখানকার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েছে। পেটারসন বলেন, এখানে এসে তিনি ব্যক্তি আর্নেস্ট হেমিংওয়ে হয়ে উঠেছিলেন, সেলিব্রেটি আর্নেস্ট হেমিংওয়ে নন।

এ রকম একজন বন্ধু বাড পার্ডি তিনি ১৯৪০-এর শরৎ থেকে তাকে চিনতেন। হেমিংওয়ে তাকে তার প্রিয় পানীয় পানের জন্য নিমন্ত্রণ করেছেন। বাড বলেন, তিনি নিজের লেখালেখি নিয়ে তেমন কোনো কথা বলতেন না, কিন্তু একদিন বললেন, আজকের সকালটা দারুণ। আমি হাজার শব্দ লিখে ফেলেছি—প্রতি শব্দ এক ডলার।

১৯৩৯-এর শরতে টিল্লি আর্নল্ড যখন পাপার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চলেছেন, তিনি কদাচিৎ তার বইয়ের কথা বলেছেন, বিস্তারিত কখনো নয়। এক পর্যায়ে পাপা যখন তাদের সঙ্গে খোলামেলা হলেন তিনি টিল্লি ও লয়েডকে বললেন, ২৪ অধ্যায় শেষ হয়েছে—উপন্যাসের অর্ধেকেরও বেশি। তারা পড়তে আগ্রহী কিনা তাও জিজ্ঞেস করলেন।

দুজন প্রতি রাতেই কিছু পৃষ্ঠা নিতেন এবং গভীর আগ্রহ নিয়ে তার অধ্যায়গুলো পড়তেন। টিল্লি স্মৃতিকথায় লিখেছেন : গল্পটা খুব চমৎকার, আমরা পরের দিন সন্ধ্যায় আর্নেস্টের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতাম।

তারপর তার স্থানীয় বন্ধুদের সম্মানে দেওয়া এক ককটেল পার্টিতে তিনি বললেন বইটার নাম নিয়ে তার মাথায় একটা নতুন চিন্তা এসেছে। তিনি জন ভানের কবিতার বইয়ের পাতা উল্টে একটি অনুচ্ছেদ আমাদের পড়ে শোনালেন, যার মধ্যে রয়েছে সেই শব্দগুলো : ফর হুম দ্য বেল টোলস... তারপর আবেগময় কণ্ঠে বললেন, যিশুখ্রিস্ট, এরকম মানুষ লিখে কেমন করে?

পাপা রিসোর্টের সেক্রেটারি বার্নিস হিকসকে পয়সা দিয়ে ২৪ অধ্যায় টাইপ করালেন, সংশোধন করে আবারও টাইপ করালেন।

১৯৪০-এর শীতকাল কিউবায় কাটিয়ে হেমিংওয়ে ও মার্থা ৬ সেপ্টেম্বর, সান ভ্যালিতে ফিরে এলেন। প্রথম ক’সপ্তাহ তিনি বইটি মুদ্রণের আগে শেষবারের মতো কলম চালিয়ে চূড়ান্ত গেলি প্রুফ দেখা শেষ করলেন।

১০ অক্টোবর হেমিংওয়ে ঘোষণা করলেন, সব প্রস্তুত, প্রকাশক চার্লস স্ক্রিবনারের কাছে পাঠানো হবে। প্যাকেট করতে টিল্লি সাহায্য করলেন। পরদিন লয়েড হেমিংওয়ের কিছু বাড়তি ছবি তুললেন-প্রচারণার জন্য। স্ক্রিবনার সান ভ্যালিতে টাইপরাইটারে কাজ করতে থাকা হেমিংওয়ের ছবিটা পছন্দ করল।

এটাই ব্যবহার করল উপন্যাসের জ্যাকেটে।

প্রকাশক চাইল হেমিংওয়ের লাইফ সাইজ ছবি নিউইয়র্ক সিটিতে। উপন্যাসের প্রচারের জন্য টাঙানো হোক, তাই করল।

প্রকাশককে পাঠিয়ে দেওয়ার পর পাপা তার বন্ধুদের নিয়ে আয়েশ করলেন। তার বন্ধু ও অভিনেতা গ্যারি কুপারকে নিয়ে শিকার করলেন, টেনিস খেললেন, ককটেল পার্টি দিলেন, ট্রেইল ক্রিক কেবিনে ডিনার করলেন।  কুপার বেশি দিন থাকেননি, তবে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের বীজ প্রোথিত হলো।

২১ অক্টোবর ১৯৪০ প্রকাশিত হলো ‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’। ২৫ অক্টোবরের মধ্যে সান ভ্যালিতে বইয়ের কপি পৌঁছলো। এর চলচ্চিত্রায়নের স্বত্ব কিনতে প্যারামাউন্ড স্টুডিও এক লাখ ডলার সাধল—এ পর্যন্ত কোনো কাহিনীর জন্য সর্বোচ্চ মূল্য। ১৯৪৩-এর জুলাইতে প্যারামাউন্ট ছবিটিকে মুক্তি দিল। রবার জর্ডানের ভূমিকায় ছিলেন গ্যারি কুপার। সে সময়কার শ্রেষ্ঠ সুন্দরী ও শীর্ষ অভিনেত্রীদের একজন ইঙ্গরিড বার্গম্যান মারিয়ার ভূমিকাটি নিলেন।

তার দুটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘অ্যা ফেয়ারওয়েল টু আর্মস এবং ‘দ্য সান অলসো রাইজেস’ প্রকাশিত হয়েছিল কুড়ির দশকে। তার খ্যাতি যখন হ্রাস পেতে যাচ্ছিল তখন প্রকাশিত হলো সান ভ্যালি লজে লেখা ‘ফর হুম দ্য বেল টালস’-এ অসাধারণ সফল একটি উপন্যাস হেমিংওয়েকে আবার উজ্জ্বল আলোতে ফিরিয়ে আনল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর