শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
গল্প

রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল

মোস্তফা কামাল

রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল

ঢাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত। তিন দিনের ব্যবধানে দুজন ছাত্রের মৃত্যু পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে ফেলেছে। মোনেম খান চেষ্টা করেও সামাল দিতে পারছেন না। তিনি সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন। সেনাবাহিনী মাঠে না নেমে ইপিআর নামিয়ে দিয়েছে। তাতেও পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে না। দিন দিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আইয়ুব খান ভাবছেন, কোথাও কোনো অবহেলা আছে। তাকে বিপদে ফেলতে কর্মকর্তারা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি ওই পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকায় আসেন। নিজের চোখে দেখতে এবং বুঝতে হবে তাকে। তা না হলে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

আইয়ুব খান মনে মনে ভাবেন, শেখ মুজিবের শক্তির জায়গাটা কোথায়? শুধুই কি জনগণের ওপর ভর করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? নাকি তার পেছনে অন্য কেউ আছে? পেছন থেকে শক্তি না জোগালে এত শক্তি সে পায় কোথায়? মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সে পূর্ব পাকিস্তানের অধিকারের কথা বলছে! তার কি কোনো লোভ-লালসা নেই! মোনেম খান তাকে টলাতে পারছেন না কেন? আমার সেনাবাহিনী তাকে বৈঠকে বসাতে রাজি করতে পারছে না; কেন? বিস্ময়কর ব্যাপার!

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট সাহেবের ঢাকা সফরের ব্যাপারে মোনেম খানের আপত্তি ছিল। তিনি বার বার তাকে বারণ করেন। এ পরিস্থিতিতে ঢাকায় আসা মানে অপমানিত হওয়া। যারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেছে তারাই তাকে কালো পতাকা দেখাবে। সেটা কি প্রেসিডেন্ট সাহেবের জন্য ভালো হবে! তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। তখন তিনি যদি ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন! তখন আমাদের কী হবে? আমরা তো পালিয়েও পার পাব না। পাবলিক তুলাধোনা করবে।

সব বাধা উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট সাহেব ৬ ফেব্রুয়ারি (১৯৬৯) ঢাকার মাটিতে পা রাখলেন। এ সফরটি তার জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না। বিমানবন্দরে নেমেই তিনি কালো পতাকার মুখোমুখি হলেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আইয়ুব খানকে কালো পতাকা প্রদর্শন করে। বিব্রত প্রেসিডেন্ট আইয়ুব মোনেম খানের দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকান। দাঁত কিড়মিড় করে বলেন, শালা মোনেম! তোরে আমি কেন যে গভর্নর বানাইলাম! একটা অকর্মার ঢেঁকি! চামচামি ছাড়া আর কোনো গুণ নেই।

কিছুক্ষণ কেউ কারও দিকে তাকাননি। কথাও বলেননি। তার মুখাবয়বে রাগে ফেটে পড়ার চিহ্ন। তিনি গাড়িতে উঠলেন। মোনেম খান হয়তো প্রেসিডেন্ট সাহেবের মনোভাব বুঝতে পারেন। তিনি মাথা নিচু করে তার পেছনে পেছনে হেঁটে গাড়িতে ওঠেন। গাড়িতে ওঠার পর প্রেসিডেন্ট সাহেব অন্যদিকে তাকিয়ে বলেন, মিস্টার মোনেম! আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। শেখ মুজিবকে গোলটেবিল বৈঠকে বসাতে হবে। তাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আপনার! তাকে বুঝিয়ে রাজি করাতে হবে। তার দাবিদাওয়ার ব্যাপার নিয়ে সরাসরি কথা বলব।

প্যারোলে মুক্তি দিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে শেখ মুজিবের যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আর পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য কী করা উচিত সেটা চিন্তা করেন।

জি স্যার।

কথায় কথায় শুধু জি স্যার। কাজের নামে ঠনঠন। যত্তসব!

সরি স্যার, যদি বেয়াদবি না নেন তাহলে একটা কথা বলি!

চুপ করেন তো! আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।

সরি স্যার।

আবার কথা! আপনাকে বলছি না, কোনো কথা ভালো লাগছে না। তারপরও কথা বলেন কেন?

স্যার আমার একটা কথা শোনেন। প্লিজ স্যার।  

আচ্ছা, কী কথা বলবেন বলেন? সংক্ষেপে বলবেন।

সংক্ষেপেই বলব স্যার। আমার মনে হয় কি স্যার; আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাই সব সর্বনাশের মূল।

এ কথা আগে বলেননি কেন?

স্যার, আমি তো জানতাম না। আমাকে পরে বলা হয়েছে। আমি জানলে অন্য পরামর্শ দিতাম।

ওসব কথা বাদ দেন। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন যা করলে পরিস্থিতি শান্ত হবে তা করেন।

ঠিক আছে স্যার। আপনি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। দেখেন তারা কি পরামর্শ দেয়।

আমি কি তাদের পরামর্শ নিয়ে চলি? আমি কী সিদ্ধান্ত নেব সেটা তো আমি জানি। আমি আসছি পরিস্থিতি বুঝতে।

সরি স্যার। পরিস্থিতি একটু খারাপ বলেই তো আপনাকে আসতে বারণ করেছি স্যার।

চুপ করেন!

আর কেউ কোনো কথা বললেন না। প্রেসিডেন্ট সাহেবের গাড়িটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এসে থামল। প্রেসিডেন্ট সাহেব গাড়ি থেকে নেমে হোটেলে চলে গেলেন। মোনেম খান বোকার মতো কতক্ষণ বসে রইলেন। তারপর হুড়মুড় করে গাড়ি থেকে নামলেন। ততক্ষণে প্রেসিডেন্ট সাহেব তার দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলেন।

রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকে শেখ মুজিবকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ভিন্ন পথ বেছে নিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি দেওয়া শুরু করলেন। তিনি তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এ খবর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা পল্টন ময়দানে সমাবেশ আহ্বান করেন। সেই সমাবেশে ৮ দলীয় গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি ‘ডাক’ এর অন্য নেতারাও বক্তব্য রাখেন। ডাকের পক্ষ থেকে বলা হয়, শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খান আহৃত গোলটেবিল বৈঠক অর্থবহ ও ফলপ্রসূ হবে না।

১৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিঃশর্ত প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ পূর্ব পাস্তািনের সব শহরে হরতাল পালিত হয়। ওই রাতেই লোকমুখে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে ঢাকা কুর্মিটোলায় আটক অবস্থায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে রাতেই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক (আইয়ুব সরকার ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে পত্রিকাটির প্রকাশনা ও প্রেস বাজেয়াপ্তকরণ আদেশ প্রত্যাহার করে) ছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় সার্জেন্ট জহুরুল হকের হত্যাকাণ্ড ফলাও করে প্রকাশ করে। এর ফলে বিক্ষুব্ধ মানুষ সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে আসে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে তারা মোনেম খান সরকারের তিন মন্ত্রী এবং আইয়ুব খানের রাজনৈতিক দল কনভেনশন মুসলিম লীগ প্রধানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

এ খবর পশ্চিম পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন বড় হেডলাইন দিয়ে প্রকাশ করে। সার্জেন্ট জহুরুল হকের নিহত হওয়ার খবরে আইয়ুব খান যতবেশি উদ্বেলিত হয়েছিলেন তার চেয়ে বেশি হতাশ হন বিক্ষুব্ধ জনতার অগ্নিসংযোগের দৃশ্য দেখে। তিনি ভাবতেই পারেননি, মানুষ মন্ত্রীদের বাড়িতে আগুন দিতে পারেন!    

রাওয়ালপিন্ডিতে শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোশতাক আহমদসহ দলের অন্য নেতাদেরও এখানে হাজির করতে হবে। তাহলে মানুষ বুঝবে, সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আমি আন্তরিক। শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিব যদি না আসে তাহলে আমরা বলতে পারব, শেখ মুজিব শান্তি চায় না।

২.

প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ফেব্রুয়ারি থেকে ইত্তেফাকের প্রকাশনা শুরু হয় এবং শেখ মুজিবের ছয় দফা ও ছাত্র সমাজের ১১ দফার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় পত্রিকাটি। মানিক মিয়া নিজে ১১ ফেব্রুয়ারি ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ কলামে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন। তিনি দেশের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের পক্ষে অবস্থান নেন।

মানিক মিয়া তার রাজনৈতিক মঞ্চে ১৪ ফেব্রুয়ারি লেখেন— ‘প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ করিবার জন্য এক সূক্ষ্ম চাল লক্ষ্য করা যাইতেছে। কোনো কোনো মহল হইতে এক্ষণেই প্রচার শুরু হইয়াছে যে, বিরোধীদলের সহিত আলাপ আলোচনা সফল হইলে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাবনা রহিয়াছে। ইহা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়িয়া দিবার মত এবং ইহাকে আমরা এই মুহূর্তে ক্ষমতার টোপ ফেলান বলিয়া মনে করি। আজ সারা দেশের ছাত্র, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, মধ্যবিত্ত শ্রেণি তথা সর্বস্তরের মানুষ যেজন্য সংগ্রাম করিতেছে, রক্ত দিয়াছে, তাহা হইল রাষ্ট্রের দ্বারা তাদের ছিনাইয়া নেওয়া অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। বিগত দশকের কুশাসন, অনাচার অত্যাচার ও শোষণের পরিণতি হিসেবে এই গণজাগরণ নমিনেশনে মন্ত্রী হওয়ার জন্য কিংবা বর্তমান মন্ত্রীদের বদলে বিরোধীদলীয় লোকদের দ্বারা মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য নয়। জনগণ রাষ্ট্রে তাদের অধিকার ফিরিয়া পাইলে, দেশের জনগণের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হইলে জনগণের ভোটে ও সমর্থনে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হইবেন, গণতন্ত্রের বিধানমতে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল দেশের শাসনভার গ্রহণ করিবেন এবং যে প্রোগ্রামের ওয়াদা দিয়া তাহারা নির্বাচিত হইবেন সেই প্রোগ্রাম কার্যকরী করার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাইবে। আমরা যতদূর বুঝি, ইহাই হইল বর্তমান প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য। 

প্রস্তাবিত গোলটেবিল জনগণের অধিকার যদি স্বীকৃতি লাভ করে এবং তত্মর্মে শাসনতন্ত্র সংশোধিত কিংবা পরিবর্তিত হয়, একমাত্র তাহা হইলেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে এবং এই একটি মাত্র উদ্দেশ্যে কোনো সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইতে পারে। জনপ্রতিনিধিত্বহীন জগাখিচুড়ি ধরনের মন্ত্রিসভা গঠনে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি দেশবাসী তাহা চায় না।’ 

মানিক মিয়ার প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগ, ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে আলোচনা পর্যালোচনা হলো। আট দলীয় জোটের নেতারাও বৈঠকের পর বৈঠক করলেন। কিন্তু গোলটেবিলে যোগদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। শুধু ভাসানী সাহেবই নন, অন্য দলের নেতারাও আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকের প্রস্তাবের প্রতি আস্থা রাখতে পারলেন না। তাদের সবারই ধারণা, আইয়ুব খান ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নতুন কোনো ফন্দি এঁটেছেন।

মানিক মিয়া কলাম লিখেই ক্ষান্ত ছিলেন না। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিস্তর আলাপ আলোচনা করেছেন। উকিলদের মাধ্যমে শেখ মুজিবের কাছেও তার বার্তা পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে হলেও গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, এটা একটা সুযোগ। দুঃশাসন অবসানের জন্য এ সুযোগ কাজে লাগানো উচিত।

শেখ মুজিব মানিক মিয়ার অনেক কথাই শুনেছেন। তার কাছ থেকে রাজনীতির অনেক পরামর্শই নিয়েছেন। কিন্তু আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের ব্যাপারে মানিক মিয়ার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারলেন না। তিনি উকিলদের মাধ্যমেই মানিক মিয়াকে জানিয়েছেন, তার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না।

এরপরও মানিক মিয়া হাল ছাড়লেন না। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন। তিনি মিজানুর রহমান চৌধুরী, মোশতাক আহমদসহ অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন। তিনি তাদের বলেন, শেখ সাহেবকে আপনারা বুঝান। গোলটেবিল বৈঠকের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত না। প্রেসিডেন্ট সাহেব যেহেতু ঘোষণা করেছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না; সেহেতু ধারণা করা যায়, তিনি হয়তো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। নির্বাচন হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ক্ষমতা আসবে। সেটা হবে চলমান আন্দোলনের একটা বড় বিজয়। মানিক মিয়ার উদ্যোগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বেশ তৎপর হয়ে ওঠেন। তারা নানাভাবে শেখ মুজিবের কাছে বার্তা পাঠাতে থাকেন। যাতে তিনি গোলটেবিল বৈঠকের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেন সেজন্য প্রচেষ্টা চালান।

মওলানা ভাসানীসহ বেশ কয়েকজন নেতা মানিক মিয়ার বাড়তি তৎপরতাকে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখেন। মানিক মিয়া সেটা টের পান।

মানিক মিয়া নিজের রুমে চুপচাপ বসে আছেন। তার মন খারাপ। তিনি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেন না। সাধারণত অফিসে এসেই তিনি সিরাজউদ্দীন হোসেন, আসাফ উদ দৌলা রেজা, নূরুল ইসলাম পাটোয়ারিকে ডাকেন। পরের দিনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। অথচ আজ কাউকে তিনি ডাকেননি। সিরাজউদ্দীন হোসেন অন্যদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি প্রশ্ন করেন, কী ব্যাপার! মানিক ভাই ডাকছেন না যে! তার মনটাও দেখলাম খারাপ। কী হয়েছে তার?

আসাফ উদ দৌলা রেজা বললেন, আপনি যান। তার সঙ্গে কথা বলেন।

উনি যদি রাগ করেন?

করলে করবেন!

নূইপা কি বলেন?

আমারও একই মত। আপনি দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। দেখেন, ঢোকার অনুমতি পান কিনা।

গুড আইডিয়া। আমি কথা না বলে তার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। যদি ঢোকার অনুমতি দেয় তাহলে ঢুকব। সিরাজউদ্দীন হোসেন মানিক মিয়ার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। মানিক মিয়া তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর ইশারায় তাকে ডাকলেন। সিরাজউদ্দীন হোসেন তার রুমে গিয়ে সামনের একটি চেয়ারে বসলেন। তিনি মানিক মিয়া কিছু বলেন কী না তার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মানিক মিয়ার রাগ কিছুটা পড়ল। মানিক মিয়া চুপচাপ বসে আছেন। গোলটেবিল বৈঠকের বিষয়টিই তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।     

মানিক মিয়া আবারও শেখ মুজিবের কাছে বার্তা পাঠান। তিনি যাতে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন সেজন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু শেখ মুজিবের এক কথা, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে তিনি গোলটেবিল বৈঠকে যাবেন না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর