বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪৭০টিরও বেশি ভাষার রিসার্চ ম্যাটেরিয়াল এখানে রয়েছে। প্রতিবছর এখানে সংগৃহীত মোট বইয়ের দুই-তৃতীয়াংশই ইংরেজি বাদে অন্যান্য ভাষার। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের প্রথম লাইব্রেরিয়ান হলেন জন জে বেকলি, যাকে প্রতিদিন দুই ডলার বেতন দেওয়া হতো। একই সঙ্গে তিনি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের করণিক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন...
আমেরিকান লাইব্রেরি অব কংগ্রেস পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি। আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো এই লাইব্রেরিটি অবস্থিত ওয়াশিংটন ডিসিতে। এটি দেশটির জাতীয় লাইব্রেরিও। একই সঙ্গে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো ফেডারেল কালচারাল ইনস্টিটিউশন। আমেরিকান লাইব্রেরি অব কংগ্রেস স্থাপিত হয় ১৮০০ সালে। প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস যখন সরকারি কার্যাবলি ফিলাডেলফিয়া থেকে ওয়াশিংটনে স্থানান্তর করেন তখন থেকে এর যাত্রা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪৭০টিরও বেশি ভাষার রিসার্চ ম্যাটেরিয়াল এখানে রয়েছে। প্রতিবছর এখানে সংগৃহীত মোট বইয়ের দুই-তৃতীয়াংশই ইংরেজি বাদে অন্যান্য ভাষার। ১৭৮৩ সালে জেমস মেডিসন সর্বপ্রথম কংগ্রেস লাইব্রেরি তৈরির প্রস্তাব দেন। যদিও ১৮০০ সালের ২৪ এপ্রিল লাইব্রেরি অব কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫ হাজার ডলার মূল্যমানের ৭৪০টি বই ও ৩টি ম্যাপ কেনা হয় লাইব্রেরির জন্য। ১৮১৪ সালে ইংরেজ সৈন্যরা তাদের মার্কিন উপনিবেশ রক্ষার চেষ্টায় ওয়াশিংটনে এসে ক্যাপিটাল প্রাসাদে কেন্দ্রীয় সরকারের মূল দফতরটি অধিকার করে নেয় এবং লাইব্রেরিটি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আবার সেই পুড়ে যাওয়া লাইব্রেরি নতুন করে গড়ে তোলা হয়। পরের বছর সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের পুরো ব্যক্তিগত সংগ্রহ (৬ হাজার ৪৮৭টি বই) কিনে নিয়ে লাইব্রেরিটি নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের প্রথম লাইব্রেরিয়ান হলেন জন জে বেকলি, যাকে প্রতিদিন দুই ডলার বেতন দেওয়া হতো। একই সঙ্গে তিনি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের করণিক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। লাইব্রেরিতে প্রায় ৪৭০টি ভাষার বই সংরক্ষিত আছে। এখানে ২.৯ মিলিয়নের মতো আইনের বই, প্রায় ৭ লাখের মতো উত্তর আমেরিকান অঞ্চলের বই, সাড়ে ৭ লাখের মতো ইউরোপীয় বিভিন্ন বই, আফ্রিকান ও মধ্য এশিয়ার রয়েছে ৬ লাখের অধিক বই , এশিয়ান বিভাগের ৩ লাখ বই মিলে এখানে প্রায় দেড় কোটির মতো বই ও পুস্তিকা আছে। আছে সাড়ে ৩ কোটির ওপর পা-ুলিপি ও পুঁথি। প্রায় ৪০ লাখের ওপর ম্যাপ। আছে ৬০ লাখ গানের স্বরলিপি, চিঠিপত্র, বাদ্যযন্ত্র, রেকর্ড, ট্যাপ, ক্যাসেট ইত্যাদি। রয়েছে প্রায় ১ কোটির মতো কিছু ছবি ও ফটোগ্রাফ এবং ১২০০ খবরের কাগজের নিয়মিত সংখ্যার ফাইল। রয়েছে প্রায় আড়াই লাখের ওপর চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম। লাইব্রেরির তিনটি সুবিশাল বিল্ডিংয়ের মধ্যে জেফারসন বিল্ডিংয়ে নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৮৯৭ সালে। তিনটি বিল্ডিংয়ের মধ্যে এটিই সবচেয়ে পুরনো। বিল্ডিংটির মেঝে থেকে পাথরের স্তম্ভগুলো ১৬০ ফুট উঁচু। শুধু এই একটি হলেই ৪৫ হাজারেরও বেশি রেফারেন্স বই আছে। ২১২ জন পাঠক একসঙ্গে বসে পড়তে পারে এই হলঘরে। প্রতিটি ডেস্কে পৃথক আলো, আরামদায়ক চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। পাশেই রয়েছে কম্পিউটার ক্যাটালগ সেন্টার। নিজের পছন্দের বইটি সম্পর্কে নেওয়া যাবে নানা তথ্য। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যোগ হয়েছে লাইব্রেরির অন্য দুটি দালানেও।