শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
পয়লা বৈশাখের কথা

সম্রাট আকবরের আমলে চালু হয় বাংলা নববর্ষ

তানভীর আহমেদ

সম্রাট আকবরের আমলে চালু হয় বাংলা নববর্ষ

মুঘল সাম্রাজ্য ছিল বিশাল। সম্রাট আকবরের শাসনামলে বাংলা সনের যাত্রা শুরু হয়। সম্রাট আকবর ক্ষমতায় আসেন ইংরেজি ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময় হিজরি ক্যালেন্ডার ধরে রাজকার্য পরিচালনা হতো। চান্দ্রবর্ষ ব্যবহারে কিছু জটিলতা দেখা যায়। কারণ সৌরবর্ষের তুলনায় ১০-১১ দিন কম থাকায় চান্দ্রবর্ষ কখনোই পরের বছর একই দিনে আসে না। জমির খাজনা পরিশোধ করতে গিয়ে কৃষকদের তাই জটিলতার মধ্যে পড়তে হতো। এ ছাড়া ঋতু অনুযায়ী ফসলে চাষ হতো। যে কারণে ফসল না তুলতেই খাজনার সময় এসে গেলে কৃষক পড়ত বিপাকে। ভারতবর্ষ বিশাল হওয়ায়, সেখানে নানা ধর্মের মানুষ ধর্মীয় আচার পালনেও বর্ষপঞ্জির জটিলতায় পড়ত। জমির খাজনা মেটাতে তাই সম্রাট আকবর ফসলি সন তৈরির দিকে নজর দেন। মুঘল বাদশাহদের মধ্যে তার রাজসভায় ছিল সবচেয়ে গুণী-পন্ডিতদের আনাগোনা।

সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৯) নির্দেশে এবং বিজ্ঞ রাজ জ্যোতিষী ও পন্ডিত আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজী বাংলা সন তৈরিতে গবেষণা শুরু করেন। হিজরি সনের জটিলতা এড়িয়ে সৌর সন ধরে তিনি ‘ফসলি সন’ তৈরি করেন। এতে করে সৌরবর্ষের সঙ্গে হিজরি সনের যে ব্যবধান ছিল তা আর রইল না। সৌর সন ধরেই এলো ‘ফসলি সন’। ঋতুভিত্তিক সৌর সন থেকে আসা ফসলি সনে জমির খাজনা আদায়ের জটিলতা অনেকটাই কেটে যায়। তখনকার প্রচলিত হিজরি সনকে ‘ফসলি সন’ হিসেবে চালু করার মাধ্যমে বর্তমান বাংলা সন বঙ্গাব্দের জন্ম হয়। বাংলা সনের জন্ম লাভের পর পরবর্তীতে এ পঞ্জিকার হিসাবে তখনকার বার্ষিক কর, ভূমি কর, কৃষি কর, জল কর ইত্যাদি আদায় শুরু হয়। তথ্য অস্পষ্টতার জন্য অনেকে মনে করেন, সম্রাট আকবরের হাতেই বাংলা সনের গণনা শুরু।

কিন্তু প্রকৃত বিষয় হলো সম্রাটের হাতে হিজরি সনকে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলা সনের প্রবর্তন ঘটে। দিনে দিনে এই বাংলা বছর গণনায়ও এসেছে নানা পরিবর্তন। শুরুতে বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। বিভিন্ন সময়ে বঙ্গাব্দের দিন ও তারিখ নির্ধারণে জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। এসব জটিলতা নিরসনে প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বঙ্গাব্দের বেশ কিছু সংস্কার করেন।  যেমন গণনার সুবিধার্থে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দিনের সংখ্যা প্রতি মাসে ৩১ করা হয় এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৩০ দিন গণনার বিধান করা হয়।

সর্বশেষ খবর