শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
কবিতা

মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস!

মহাদেব সাহা

কেউ জানে না একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস

নিয়ে বেড়ায়-

কোনো বিষণ্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,

এই বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের পর

দীর্ঘশ্বাস যেন একখানি অন্তহীন

প্রগাঢ় এপিক!

পাতায় পাতায় চোখের জল

সেখানে লিপিবদ্ধ

আর মনোবেদনা সেই এপিকের ট্র্যাজিক মলাট;

মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস,

এতো দীর্ঘশ্বাস, কে জানতো!

 

দীর্ঘশ্বাসভরা এই বুকের চেয়ে শীতপ্রধান বিপন্ন অঞ্চল আর

কোথাও নেই,

এমন হলুদ, ধূসর আর তুষারাবৃত!

একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেড়ায়,

কেউ জানে না।

 

হঠাৎ একসঙ্গে অসংখ্য দুঃখ

যদি কখনো কেঁদে ওঠে কিংবা যদি

প্রাচীন শিলালিপি থেকে সব শোকের গান

সশব্দে বেজে যায়,

তাহলে যেমন মধ্যাহ্নের আকাশ

সহসা দুঃখে ম্লান হয়ে যাবে

গোলাপ হবে কৃষ্ণবর্ণ,

তার চেয়েও বিষণ্নতা নেমে আসবে

মানুষের বুক থেকে এই দীর্ঘশ্বাস

যদি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে।

তেমন সম্ভাবনা আছে বলেই

মানুষ বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখে

তার চোখে নিয়তই জল ঝরে তবু

দেখা যায় না;

মানুষের ভিতর কতো যে দীর্ঘশ্বাস,

জমাট বেঁধে আছে

কতো যে ক্রন্দন, পাতা ঝরার শব্দ, মৃত্যুসংবাদ

মানুষের বুকের মধ্যে ব্যথিত ব্যাকুল ইতিহাস আর আহত সভ্যতা

মেঘের মতো ঘনীভূত

হতে হতে একেকটি মর্মান্তিক

দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে

মানুষ তাকে বয়ে বয়ে দগ্ধ বেঁচে থাকে।

 

একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়ায়,

কেউ জানে না।

একেকটি মানুষ নিজের

মধ্যে কীভাবে নিজেই মরে যায়, হায়, কেউ জানে না!

সর্বশেষ খবর