শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পঞ্চগড়ে পিয়ানো রহস্য

ফরিদুর রেজা সাগর

পঞ্চগড়ে পিয়ানো রহস্য

তুমিও তাকে চেনো।

আমি চিনি!

হ্যাঁ। গতকাল একসঙ্গে তোমরা আকাশপথে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে এসে নেমেছো।

ছোটকাকু অবাক হয়ে বললেন, তার মানে সেই ভয়ংকর লোকটা, যার একটা চোখ নষ্ট। নাম যতদূর মনে পড়ে শওকত।

হ্যাঁ শওকত...

সেই লোকের নির্দেশেই কি হামলা হয়েছে?

হ্যাঁ। সৈয়দপুর থেকে তোমরা যখন মাইক্রোবাসে পঞ্চগড়ের দিকে আসছিলে তখন মাঝপথে তোমাদের গাড়ির চাকা ফেটে যায় ঠিক কি না?

হ্যাঁ ঠিক।

শওকত তোমাদের গাড়ির ড্রাইভারকে ঘুষ দিয়ে গাড়ির চাকা ফাটিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শাফায়াতের উদ্দেশ্য ছিল গাড়ি যেহেতু ঝামেলায় পড়েছে কাজেই তুমি শাফায়াতের গাড়িতেই দিনাজপুরের দিকে আসবে। শওকত তোমাকে এ প্রস্তাবও দিয়েছিল, ঠিক কি না?

ছোটকাকু বললেন, হ্যাঁ ঠিক। মজিদ বিএসসির সঙ্গে তার এক ছাত্রী এসেছিল। নাম ফুলপরী। তার কথা শুনে আমি শাফায়াতের গাড়িতে উঠিনি। আচ্ছা শাফায়াতের আমার প্রতি এত রাগ কেন? আমি তো তাকে চিনি না। তার তো ক্ষতি করিনি।

এবার মিরাজ কাদেরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, তোমাকে যে গুপ্তধনের কথা বলেছি সেটা হাপিস করে দেওয়ার জন্য শওকত ও তার দল দীর্ঘদিন থেকে আমার পিছে লেগে আছে। তুমি নিশ্চয়ই জানো শওকত সরকারের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করত। নামকরা গোয়েন্দা। কীভাবে যেন আমাদের বাড়িতে রাখা গুপ্তধনের কথা জেনে গেছে। আমার দাদার ডায়েরিতে গুপ্তধন খোঁজার ক্লু দেওয়া আছে। শওকত কয়েকবার আমার কাছে ডায়েরিটা চেয়েছে। আমি দিইনি। ও যখন দেখল তাকে বাদ দিয়ে তোমাকে কাজটা দিচ্ছি তখনই তোমাকে টার্গেট করেছে। যাতে তুমি ভয়ে এ এলাকায় না থাকো। ঘটনা কি ক্লিয়ার?

হ্যাঁ ক্লিয়ার।

তুমি কি কাজটা করতে চাও?

অবশ্যই। আমাকে ডায়েরিটা দাও। এক্ষুনি কাজটা শুরু করতে চাই। ও হ্যাঁ তোমার এ বাড়ির মানুষদের সম্পর্কে আমার একটা ধারণা দরকার। হাবিব আহসান ছেলেটা কেমন?

ভালো। আবার ভালো না।

এ বাড়িতে তার কাজ কী?

সে আমাদের জনসংযোগ কর্মকর্তা। তুমি নিশ্চয়ই জানো আমাদের অনেক চা বাগান আছে। ২০টি পুকুর আছে। গরুর খামার আছে। সর্বোপরি আমার দাদার আমলের একটা বিশাল লাইব্রেরি আছে। সব প্রজেক্টের দেখভাল করার দায়িত্ব হাবিব আহসানের। বিশেষ করে সাড়ে চার হাজার বইয়ের দেখভাল করার দায়িত্ব তার। তুমি শুনলে অবাক হবে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির প্রথম সংস্করণও আমাদের লাইব্রেরিতে আছে।

আর কে কে আছে তোমাদের এ বাড়িতে?

ছোটকাকুর প্রশ্ন শুনে মিরাজ কাদেরী বললেন, তুমি তো জানো আমি এ বাড়িতে একা থাকি। আমার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে ছেলেমেয়েদের কাছে থাকে। শতাধিক মানুষ নানা প্রজেক্টে কাজ করে। তবে তুমি যে কাজে এসেছো অর্থাৎ তোমাকে যে কাজের জন্য ডেকেছি সে ক্ষেত্রে হাবিব আহসানই তোমাকে হেল্প করবে। গুপ্তধনটা বের করা জরুরি। কত টাকার গুপ্তধন জানো?

কত টাকা? জানতে চাইলেন ছোটকাকু।

মিরাজ কাদেরী বললেন, শত কোটি টাকার গুপ্তধন। বের করতে পারলে বিশাল এক সামাজিক উদ্যোগ শুরু করব। দেশের মানুষ উপকৃত হবে।

মিরাজ কাদেরীর বিশাল উদ্যোগ সম্পর্কে জানার ইচ্ছে হচ্ছে ছোটকাকুর। কিন্তু তিনি এ নিয়ে আগ্রহ দেখালেন না। সবার আগে দরকার মিরাজের দাদার ডায়েরি। কী লেখা আছে ডায়েরিতে সেটাই আগে দেখা দরকার। মিরাজ কাদেরী ডায়েরি আনার জন্য ভিতরবাড়ির দিকে পা বাড়ালেন। ছোটকাকুর মনে হলো কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে।

ছোটকাকু চলে যাচ্ছিলেন। ফুলপরী পেছন থেকে ডাক দিল। ফিরে তাকালেন ছোটকাকু। ফুলপরী বলল, স্যার আপনি যে কাজে এসেছেন তা সফল হবেন আশা করি। তবে সামনে আরও একটা বিপদ আছে। সাবধানে থাকবেন। বলেই মজিদ বিএসসির সঙ্গে ভিতরবাড়িতে ঢুকে গেল ফুলপরী

পাঁচ.

বেশ পুরনো ডায়েরি। চামড়ায় মোড়ানো কভার। প্রতিটি পাতা বেশ মসৃণ। গোটা গোটা অক্ষরে প্রায় প্রতিটি পাতায় নানা বিষয়ে লেখা। শুরুর দিকে একটি পাতায় পরিচিত একটা লাইন চোখে পড়ল ছোটকাকুর- কলা রুয়ে না কেটো পাত তাতেই কাপড় তাতেই ভাত। এর পরের পাতায় পাশাপাশি লেখা একটি ধাঁধা। বলো তো দেখি গাছ ও দই এ দুইয়ের মধ্যে মিল কোথায়? একটি পানির পাত্রে ১৫টি কই মাছ জিইয়ে রাখা হয়েছে। ৪টি কই মাছ মারা গেল পাত্রে এখন কতটি কই মাছ আছে?

ভিতরের একটি পাতায় লেখা- দিব্য চোখে দেখিতেছি আমাদের দেশ একদিন স্বাধীন হইবে। তবে ইহার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করিতে হইবে।

আরেকটি পাতায় লেখা- সকলের জন্য একটি ধাঁধা। আব্রাহাম লিংকন মারা যাবার আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে ছিলেন?

মাঝামাঝি পৃষ্ঠায় এসে একটি ধাঁধা দেখে চমকে উঠলেন ছোটকাকু। ‘যদি গুপ্তধন পাইতে চাও তাহা হইলে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির প্রথম সংস্করণ দেখো...’

ছোটকাকুর মনে হলো গুপ্তধন পাওয়ার এটা একটা ক্লু হতে পারে। তার মানে মিরাজদের বইয়ের লাইব্রেরিতে যেতে হবে। আহসান হাবিবকে দরকার। সে নিশ্চয়ই লাইব্রেরিতে আছে। বাড়ির কাউকেই কিছু না বলে লাইব্রেরির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হলেন ছোটকাকু।

রাতে খুব ভালো করে বাড়িটা দেখার সুযোগ হয়নি। বিরাট এলাকাজুড়ে দোতলা বাড়ি। সামনে বিরাট পুকুর। পাশেই লম্বা গরুর খামার। পুকুরে মাছ ধরা হচ্ছে। মাছ ধরার কাজে তদারকি করছিলেন মিরাজ কাদেরী। ছোটকাকুকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন, তোমার জন্য একটা বড় বোয়াল মাছ ধরা হয়েছে। সাড়ে ১০ কেজি ওজন। বোয়াল খাও তো?

হ্যাঁ, হালাল সব কিছুই খাই। আসো মাছ ধরা দেখি।

মিরাজ কাদেরীর কথা শুনে ছোটকাকু তাড়া দেখিয়ে বললেন, তোমাদের লাইব্রেরিটা যেন কোন দিকে?

মিরাজ কাদেরী সামনের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললেন, ওই যে ওই দিকে। সঙ্গে কাউকে দেব?

না, দরকার পড়বে না। আমি বরং লাইব্রেরি থেকে ঘুরে আসি।

ছোটকাকু লাইব্রেরির দিকে চলে যাচ্ছিলেন। মিরাজ কাদেরী বললেন, ডায়েরি পড়া শেষ?

ছোটকাকু বললেন, ডায়েরিতে অনেক জটিল কথা লেখা আছে। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি খুঁজতে যাচ্ছি। ওই বইতে নাকি গুপ্তধনের ক্লু আছে। তোমাদের লাইব্রেরিতে বইটা পাওয়া যাবে তো?

হ্যাঁ পাওয়া যাবে। তুমি হাবিবের সঙ্গে কথা বল। সে-ই তোমাকে বইটার খোঁজ দিতে পারবে।

ছোটকাকু বললেন, আমি তো হাবিবের খোঁজেই লাইব্রেরিতে যাচ্ছি...

কিন্তু লাইব্রেরিতে হাবিবকে খুঁজে পাওয়া গেল না। জামিল নামে অন্য একজন তরুণ লাইব্রেরিতে কাজ করে। তার কাছে জানা গেল হাবিব সকালে শহরে গেছে। কখন ফিরবে বলে যায়নি। জামিলের কাছে হাবিবের মোবাইল নম্বর পাওয়া গেল। হাবিবকে ফোন দিলেন ছোটকাকু। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। ফোন কেটে দিয়ে আবার হাবিবের নম্বরে ফোন করলেন ছোটকাকু। এবার দুটি রিংয়ের পরই হাবিব ফোন ধরল-

হ্যালো, কে বলছেন?

তুমি কি হাবিব?

জি হাবিব বলছি। আপনি কে?

আমি ছোটকাকু...

হাবিব হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে বলল, স্লামালেকুম স্যার। আমাকে জরুরি প্রয়োজন কী?

হ্যাঁ। তুমি এখন কোথায়?

পঞ্চগড় শহরে এসেছিলাম। আমি কি আসব?

না, এখনই আসার দরকার নেই। তোমার কাজ শেষ করে আসো। ফোনে তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

জি স্যার বলেন।

তোমাদের লাইব্রেরিতে আনুমানিক কত বই আছে?

হাজার চারেক তো হবে।

সব বইয়ের নামের তালিকা আছে।

জি স্যার আছে।

তুমি কি বলতে পারবে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির প্রথম খণ্ডের তালিকা নম্বর কত?

‘গীতাঞ্জলি’ নামটা শুনেই আহসান হাবিব হঠাৎ যেন কণ্ঠে উৎকণ্ঠা ছড়াল-

কোন বইয়ের কথা বলছেন স্যার?

রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি। প্রথম সংস্করণ...

দুঃখিত স্যার ওই বইটা আমাদের লাইব্রেরিতে নেই। ক্যাটালগে নাম আছে। কিন্তু বইটা পাওয়া যাচ্ছে না।

হাবিবের কথা শুনে হঠাৎ রেগে উঠলেন ছোটকাকু। হাবিব তুমি এই মাত্র যা বললে তা কি সজ্ঞানে বললে? আধঘণ্টার মধ্যে গীতাঞ্জলির প্রথম সংস্করণ আমার দরকার। যেখান থেকে পারো বইটা নিয়ে আসো। আধঘণ্টা পর আমি ঘটনাটা মিরাজ কাদেরীর কাছে ফাঁস করে দেব। বলব গীতাঞ্জলির প্রথম সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু গীতাঞ্জলি নয়, আরও অনেক দামি, দুষ্প্রাপ্য বই লাইব্রেরি থেকে হাওয়া হয়ে গেছে। তুমি কি চাও আমি ইনফরমেশনগুলো মিরাজ কাদেরীকে দিয়ে দিই।

মনে হলো হাবিব ভয় পেয়েছে। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, স্যার ব্যাপারটা এখনই কাউকে বলবেন না। আমি আসতেছি।

ত্রিশ মিনিটের আগেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো হাবিব। শরীর থেকে ঘাম দরদর করে পড়ছে। ছোটকাকু লাইব্রেরিতে বসে ফেরদৌসির শাহনামায় চোখ বুলাচ্ছিলেন। হাবিবের কথায় চমক ভাঙল-

স্যার আমি এসেছি।

রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি বের কর।

বইটা তো স্যার নাই।

নাই মানে?

ওই যে বললাম না লাইব্রেরিতে বইটি পাওয়া যাচ্ছে না।

ছোটকাকু রেগে বললেন, একটা বই পাওয়া যাচ্ছে না এই কথার মানে কী? বইয়ের কি হাত-পা গজিয়েছে? যেভাবে পারো বইটা খুঁজে বের কর।

হাবিব অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলল, আমি সাত দিন ধরে বইটা খুঁজছি। পাচ্ছি না।

ব্যাপারটা কি মিরাজকে জানাব?

এবার কোনো উত্তর দিল না হাবিব।

ছোটকাকু বুঝে ফেলেছেন গীতাঞ্জলির প্রথম সংস্করণ লাইব্রেরি থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার মানে গুপ্তধন খোঁজার কাজে নেমে পড়েছে তৃতীয় কোনো পক্ষ। সর্বনাশ! হাবিবকে বাজিয়ে দেখার কথা ভাবলেন ছোটকাকু। রাগারাগি করে লাভ হবে না। নরম করে কথা বলতে হবে। কণ্ঠ নরম করে হাবিবকে ডাক দিলেন ছোটকাকু।

হাবিব বইটা কোনোভাবেই খুঁজে পাওয়া যাবে না?

হাবিব কোনো উত্তর দিল না।

ছোটকাকু জিজ্ঞেস করলেন, হাবিব তোমার বাড়ি কোথায়?

রাজশাহী।

রাজশাহী কোথায়?

শহরের পাশেই।

কিন্তু তোমার কথাবার্তায় তো মনে হয় না তুমি রাজশাহীর ছেলে। কথাবার্তায় কলকাতার টান। তোমার পূর্বপুরুষ কি কলকাতার বাসিন্দা?

জি।

আমার ধারণা তুমিও কলকাতার বাসিন্দা।

হাবিব অপরাধীর ভঙ্গিতে কাঁচুমাচু হয়ে বলল, জি স্যার আমি কলকাতায় পড়াশোনা করেছি। মিরাজ স্যার সেটা জানেন...

ছোটকাকু যারপরনাই অবাক হলেন। কলকাতার ছেলে পঞ্চগড়ের অজপাড়ায় একটা বইয়ের লাইব্রেরিতে চাকরি করছে কেন? তার কি কোনো উদ্দেশ্য আছে? সে কি মিরাজদের লাইব্রেরি থেকে দামি দুষ্প্রাপ্য বই সরিয়ে নেওয়ার কাজে জড়িত? গীতাঞ্জলির প্রথম সংস্করণের মূল্য সাধারণ পাঠকের কাছে হয়তো ততটা নয়। কিন্তু গবেষকদের কাছে মহামূল্যমান গ্রন্থ। বইটি কি এমনিই কারও কাছে বিক্রি করেছে হাবিব? তাই যদি হয় তাহলে তো গুপ্তধনের সন্ধান করা মুশকিল হবে। ব্যাপারটা মিরাজকে জানানো দরকার।

লাইব্রেরি থেকে বের হতেই মজিদ মাস্টারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তার পেছনে ফুলপরী দাঁড়িয়ে আছে। ফুলপরী ছোটকাকুকে উদ্দেশ করে বলল, স্যার আপনি ভালো আছেন?

হ্যাঁ আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

ভালো না।

কেন?

আপনাকে হামলার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। কে আপনাকে হামলা করেছে আমি আন্দাজ করতে পারছি। নাম বলব?

হাবিব পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ছোটকাকু সিদ্ধান্ত নিলেন হাবিবকে আর গুরুত্ব দেবেন না। এই ছেলে মিরাজ কাদেরীর ক্ষতি করতে এসেছে। মিরাজকে সবকিছু খুলে বলতে হবে।

ছোটকাকু চলে যাচ্ছিলেন। ফুলপরী পেছন থেকে ডাক দিল। ফিরে তাকালেন ছোটকাকু। ফুলপরী বলল, স্যার আপনি যে কাজে এসেছেন তা সফল হবেন আশা করি। তবে সামনে আরও একটা বিপদ আছে। সাবধানে থাকবেন। বলেই মজিদ বিএসসির সঙ্গে ভিতরবাড়িতে ঢুকে গেল ফুলপরী। ছোটকাকু দেখলেন হাবিব অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ ছোটকাকুর পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল, আমি মারাত্মক একটা ভুল করেছি। গীতাঞ্জলি বইটি একজনের কাছে বিক্রি করেছি। সামান্য একটা বইয়ের দাম পনেরো হাজার টাকা। লোভ সংবরণ করতে পারিনি। মিরাজ স্যারকে কথাটা জানাবেন না প্লিজ। কথা দিচ্ছি বইটি আমি ফেরত আনব। আমাকে বিশ্বাস করেন প্লিজ...

বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। কিন্তু কেউ সত্য না বললে তা বোঝার উপায় কী? ছোটকাকু বেশ বুঝতে পারছেন হাবিব সত্য কথা বলছে না। শুধু টাকার জন্য সে গীতাঞ্জলি নামের বইটি বিক্রি করেনি। নিশ্চয়ই ঘটনার পেছনে ঘটনা আছে। সেটা আসলে কী? খুঁজে বের করতে হবে।

হাবিবকে মৃদু ধমক দিলেন ছোটকাকু। তুমি কি আমার কাছে সত্যি কথাটাই বলছ?

হ্যাঁ।

আমি কীভাবে বিশ্বাস করব তোমাকে? একটা প্রমাণ দেখাও।

কী প্রমাণ দেখাব বলেন।

সেটা তোমার ব্যাপার। আমার ধারণা তুমি মিথ্যা বলছ? বইটি বিক্রি করার পেছনে তোমার একটা উদ্দেশ্য আছে। তুমি আমার চোখের দিকে তাকাও। যা বলি তার উত্তর দাও। চোখ নামাবে না। ছোট প্রশ্ন ছোট উত্তর। ভাবতে পারবে না। অ্যা, উহু! ইয়ে, মানে... এসব শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দেবে।

[চলবে]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর