শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পঞ্চগড়ে পিয়ানো রহস্য

ফরিদুর রেজা সাগর

পঞ্চগড়ে পিয়ানো রহস্য

হাবিব ছোটকাকুর চোখের দিকে তাকাতে গিয়ে প্রথমবার পারল না। পরের বার তাকাল। তবে ভয়ে শরীর কাঁপছে তার।

ছোটকাকু জিজ্ঞেস করলেন-

হাবিব তুমি কি ভয় পাচ্ছ?

না। কাঁপা গলায় বলল হাবিব।

তাহলে তোমার গলা কাঁপছে কেন? তুমি কি পানি খাবে?

না।

তোমার পুরো নাম?

আহসান হাবিব।

বাবার নাম?

বাবার নাম বলতে গিয়ে থেমে গেল হাবিব। ছোটকাকু ধমক দিলেন বাবার নাম বলতে এত সময় নিচ্ছ কেন? বাবার নাম বল?

আমার বাবার নাম রাজীব আহসান।

তুমি ভুল বলছ? তোমার বাবার নাম রাজীব নয়... আমি কি ভুল বললাম? প্রশ্নের উত্তর দাও? তুমি জেনেবুঝে গীতাঞ্জলির প্রথম সংস্করণ বিক্রি করেছ, ঘটনা সত্য না মিথ্যা? জবাব দাও...

হাবিব বলল, ঘটনা মিথ্যা

তাহলে সত্যটা কী? গীতাঞ্জলি চুরি হয়ে গেছে?

হ্যাঁ। চুরি হয়ে গেছে।

সত্য বলছ নাকি মিথ্যা...

সত্য বলছি।

কোনটা সত্য? গীতাঞ্জলি চুরি হয়েছে নাকি বিক্রি হয়েছে।

চুরি হয়েছে।

তুমি মিথ্যা বলছ।

না আমি সত্য বলছি।

জোরে ধমক দিলেন ছোটকাকু। না, তুমি মিথ্যা বলছ। একটু আগে তুমি বলেছ বইটি পনেরো হাজার টাকায় বিক্রি করেছ। আমার কাছে মোবাইলে রেকর্ড আছে। শুনতে চাও?

হাবিব হঠাৎ ছোটকাকুর দুই পা জড়িয়ে ধরে বলল, স্যার আমি অন্যায় করেছি। আমাকে মাফ করে দিন।

ছোটকাকু বললেন, মাফ করতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে। এক ঘণ্টার মধ্যে বইটি আমার চাই। এক ঘণ্টার মধ্যে বই না পেলে মিরাজকে সব বলে দেব। চাকরিটা হারাবে তুমি। শর্তে রাজি?

হাবিব বলল, হ্যাঁ আমি রাজি।

সময় কত পাবে?

এক ঘণ্টা।

এক ঘণ্টা মানে ৬০ মিনিট।

জি ৬০ মিনিট।

তোমার ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট নিশ্চয়ই আছে।

হ্যাঁ আছে।

আমাকে দাও। সিকিউরিটি...

আমার পাসপোর্টে একটা ঝামেলা আছে।

তবু দাও। গীতাঞ্জলি হাতে পেলেই পাসপোর্ট আর ভোটার কার্ড ফেরত পেয়ে যাবে। তোমার সময় শুরু। অফিসের ড্রয়ারেই পাসপোর্ট ও ভোটার কার্ড ছিল। ছোটকাকুর হাতে তা তুলে দিয়ে হাবিব বলল, স্যার এক ঘণ্টায় হবে না। আজকের পুরো দিনটা লাগবে। সন্ধ্যার মধ্যেই আপনি বইটি পেয়ে যাবেন।

ছোটকাকু সম্মতি জানিয়ে বললেন, যাও, তোমাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো। শোনো আমার সঙ্গে চালাকি করার চেষ্টা করবে না। তাহলে কিন্তু বিপদ হবে তোমার। বলেই ভিতরবাড়ির দিকে পা বাড়ালেন ছোটকাকু।

দুপুরের খাবার ডাইনিং টেবিলে দেওয়া হয়েছে। মিরাজ কাদেরী নিজে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছেন। তাকে সহায়তা করছে মজিদ বিএসসি ও ফুলপরী। ছোটকাকুকে দেখেই মিরাজ কাদেরী খুশি হয়ে বললেন, আসো বন্ধু আসো। তোমার পছন্দের সব খাবারই রান্না হয়েছে। শজনেপাতার ভর্তা খাও তো?

হ্যাঁ।

শজনেপাতার কিন্তু অনেক গুণ। পোস্তদানার ভর্তা পছন্দ তো?

হ্যাঁ।

শুঁটকি? খাও তো?

হ্যাঁ শুঁটকি তো আমার পছন্দের খাবার।

তাহলে চল খাওয়া শুরু করি। তোমার কাজের কতদূর। কোনো ক্লু পেলে?

বেসিনে হাত ধুতে ধুতে ছোটকাকু বললেন, এখনো তেমন কোনো ক্লু পাইনি। তবে আশা করি পেয়ে যাব।

হ্যাঁ তোমার ওপর সে ভরসা আছে আমার। শোনো গুপ্তধনটা যদি পেয়ে যাই তাহলে সারা দেশে একটা প্রজেক্ট শুরু করব।

ও হ্যাঁ ভালো কথা। তোমাকে বলেছিলাম না একটা সাংস্কৃতিক উৎসব করব। প্রধান অতিথি কে হচ্ছেন ধারণা করে বল?

ছোটকাকু বললেন, গুপ্তধনের বাইরের কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে আমার সঙ্গে আপাতত ডিসকাস করবে না। আমরা বরং গুপ্তধন নিয়েই কথা বলি।

হাবিবকে বিশ্বাস করে তুমি ভুল করেছ। হাবিব গোপন কথা গোপন রাখেনি। গুপ্তধনের একটা ক্লু রয়েছে গীতাঞ্জলির প্রথম সংস্করণ বইটায়। হাবিব সেটা একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।

মিরাজ কাদেরী অবাক হয়ে বললেন, তুমি এ কথা জানলে কী করে?

হাবিব নিজে বলেছে।

বল কী! হাবিব নিজে বলেছে?

হ্যাঁ।

হাবিব কোথায়? হাবিব... অ্যাই হাবিব... বলেই উত্তেজিত ভঙ্গিতে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন মিরাজ কাদেরী। ছোটকাকু তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললেন, শোনো বন্ধু। তোমাকে একটু কুল থাকতে হবে। হাবিবের সঙ্গে ভাবটা দেখাবে কিছুই জানো না। কারণ হাবিব যদি জেনে যায় যে তুমি সবই অবগত হয়েছে তাহলে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। তোমাকে একটা গোপন কথা বলি। আমার ধারণা শওকত জামিলের সঙ্গে হাবিবের যোগাযোগ আছে। বইটি তার কাছেই বিক্রি করেছে।

মিরাজ কাদেরী অবাক হয়ে বললেন, তুমি এসব কী বলছ ছোটকাকু। ঘরের শত্রু বিভীষণ! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। মানুষ এত নেমকহারাম হয়! হ্যাঁ, মনে পড়েছে। একদিন কথা প্রসঙ্গে হাবিবকে আমি গুপ্তধনের কথাটা বলেছিলাম। সে যে এভাবে অসৎ হয়ে উঠবে বুঝতে পারিনি। আমি ব্যাটাকে আজই চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেব। ব্যাটাকে পুলিশে দেব আমি...

মিরাজ কাদেরী উত্তেজনা দমাতে পারছেন না। বিশ্বাসভঙ্গের বেদনা সহ্য করা মুশকিল। ছোটকাকু অনেক কষ্টে মিরাজ কাদেরীকে শান্ত করলেন। দুই বন্ধু একসঙ্গে খেতে বসলেন। তখনই ছোটকাকুর মোবাইলে একটা রহস্যজনক ফোন এলো। গম্ভীর গলা- অয় মিয়া ছোট্ট কাকু... পঞ্চগড়ে কোন উদ্দেশ্যে আসছ মিয়া। ১২ ঘণ্টা সময় দিলাম। পঞ্চগড় থাইক্যা চইল্যা যাবি। নাইলে কইলাম খবর আছে... বলেই ফোন কেটে দিল গম্ভীর গলার লোকটি।

ছোটকাকু উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, এত বড় সাহস আমাকে ভয় দেখায়। আমি গুপ্তধনের রহস্য উদ্ঘাটন না করা পর্যন্ত পঞ্চগড় ছাড়ছি না। মিরাজ তুমি একটা কাজ কর। থানার সেই ওসিকে ফোন করে একবার আসতে বল। আমি তার সঙ্গে কথা বলব। জরুরি।

খবর পেয়ে ওসি আকরাম এলেন বিকালে। বেশ উত্তেজিত তিনি। ছোটকাকুকে বললেন, কার এত বড় বুকের পাটা যে আপনাকে থ্রেট করে। যে ফোন নম্বর থেকে ছোটকাকুকে ফোন করা হয়েছে সেই নম্বরটা লেখে নিয়ে ওসি আকরাম চলে গেলেন।

মিরাজ কাদেরী এতটা ভাবেননি। গুপ্তধনের রহস্য খোঁজার জন্য ছোটকাকুকে ডেকেছেন। ভেবেছিলেন ছোটকাকু আসবেন। তার মতো কাজ করবেন। গুপ্তধন না পেলেও কোনো আফসোস নেই। অনেক দিন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় না। এ অসিলায় দেখা হবে। কথা হবে। কিন্তু পরিবেশ তো দেখি ভালো নয়। উড়ো টেলিফোনে ছোটকাকুকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার মানে গুপ্তধনের কথা অন্য কেউ জানে। তারা কি তলে তলে গুপ্তধন খোঁজ শুরু করেছে? মিরাজ কাদেরী সিদ্ধান্ত নিলেন সবার আগে ছোটকাকুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গুপ্তধনের আগে ছোটকাকুর নিরাপত্তা জরুরি।

ছয়.

রাতে ডায়েরিটা নিয়ে আবার বসলেন ছোটকাকু। পাতার পর পাতা ওল্টাচ্ছেন। হঠাৎ একটি পাতায় চোখ আটকে গেল। ‘যদি সত্যি সত্যি গুপ্তধনের খোঁজ পেতে চাও তাহলে আমার ঘরে একটি পরিবার আছে, যে পরিবারে বাবা নেই মা আছে... তার কাছে যাও।’

কথাগুলো কয়েকবার পড়লেন ছোটকাকু। রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন। পাশের রুমেই মিরাজ কাদেরী থাকেন। দরজায় টোকা দিয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। মিরাজ কাদেরী একটু যেন ভয় পেয়েছেন। উৎকণ্ঠ নিয়ে বললেন, কী হয়েছে?

ছোটকাকু বললেন, তোমার দাদার ঘর কোন দিকে?

দাদার ঘর? এত রাতে

কোন ঘরটা দাদার। বল...

দাদার ঘর দিয়ে কী করবে?

এত প্রশ্ন কোরো না। আগে দাদার ঘরটা দেখাও।

মিরাজ কাদেরী ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঘর দিয়ে কী হবে?

কী হবে পরে বলব। আগে ঘরটা খোলার ব্যবস্থা কর। আমি ঘরটা দেখব।

এত রাতে? সকালে দেখলে হয় না?

না, রাতেই দেখব।

বারান্দায় দুজন কাজের লোক ঘুমায়। একজন একাব্বর। অন্যজন মন্নাফ। একাব্বরের নাম ধরে ডাক দিলেন মিরাজ কাদেরী। দুজনই একসঙ্গে দৌড়ে এলো।

একাব্বরকে মিজান চৌধুরীর (মিরাজ কাদেরীর দাদা) ঘরটা খুলে দিতে বললেন। একাব্বর দৌড়ে পাশের ঘর থেকে চাবি নিয়ে এলো। দরজার বড় তালা খুলল। লাইট জ্বালিয়ে দিল। মনে হলো অনেক দিন এ ঘর খোলা হয়নি। বিরাট ঘর। দেয়ালে মিজান চৌধুরীর ছবি। কারুকাজ করা পুরনো খাটে মখমলের বিছানা সাজানো। পাশেই সোফাসেট। দূরে একটা পিয়ানো।

মিরাজ কাদেরীকে প্রশ্ন করলেন ছোটকাকু, এটাই তোমার দাদার রুম?

হ্যাঁ।

তিনি তো মারা গেছেন অনেক আগে?

হ্যাঁ।

এ ঘরে এখন কে থাকে?

কেউ থাকে না।

ঘর কি সারাক্ষণ বন্ধ থাকে?

হ্যাঁ।

ছোটকাকু ভাবলেন ডায়েরিতে লেখা কথাগুলো মিরাজ কাদেরীর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। গীতাঞ্জলিতে কী ধরনের ক্লু আছে সেটা তো এখন জানার কোনো উপায় নেই। তবে ডায়েরির এ কথাগুলো রহস্যের সন্ধান দিতে পারে। কথাগুলো পড়লেন ছোটকাকু। মিরাজ কাদেরীকে একটু যেন চিন্তিত মনে হলো।

ছোটকাকু জিজ্ঞেস করলেন, কথাগুলোর মানে কি তোমার কাছে পরিষ্কার? বিশেষ করে যে পরিবারে বাবা নেই মা আছে... এটা কোন পরিবার?

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

ছোটকাকু ভেবে নিয়ে বললেন, বাবা নেই। মা আছে... তার মানে তোমার দাদার কি দ্বিতীয় বিয়ে ছিল?

না তো। জোর দিয়ে বললেন মিরাজ কাদেরী।

ছোটকাকু বললেন, মিরাজ ভালো করে ভাবো। এমনও তো হতে পাবে তোমার দাদার দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। তোমরা কেউ জানো না। এই যে ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন, আমার ঘরে একটি পরিবার আছে। সেই পরিবারে মা আছে বাবা নেই। তার মানে ঘটনা পরিষ্কার তোমার দাদা নেই। দাদি নিশ্চয়ই আছেন?

মিরাজ কাদেরী সত্যি সত্যি মারাত্মক ধাঁধায় পড়ে গেলেন। দাদা দ্বিতীয় বিয়ে করলে এতদিনে জানাজানি হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ ডায়েরির ভাষায় রহস্যের গন্ধ। হঠাৎ বাইরে বন্দুকের শব্দ হলো। চমকে উঠলেন ছোটকাকু ও মিরাজ কাদেরী। সারা বাড়িতে মানুষজন জেগে উঠল। ধর ধর শব্দ করে সবাই সামনে ছুট ছিল। বাইরে চৌধুরীবাড়ির ফটকের সামনে একজন মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। তার হাতে ধরা একটি বই। ছোটকাকু ও মিরাজ কাদেরী একসঙ্গে দৌড়ে তার কাছে গেলেন। দুজনই অবাক। গীতাঞ্জলি বুকে জড়িয়ে ধরে হাবিব মাটিতে পড়ে আছে। পায়ে গুলি লেগেছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে। ছোটকাকু ও মিরাজ কাদেরীর উপস্থিতি টের পেয়ে গীতাঞ্জলি তুলে ধরে শুধু একটা কথাই বলল, শওকত জামিল ছোটকাকুর ক্ষতি করতে চায়। লোকটা ভালো নয়। এরপর জ্ঞান হারাল হাবিব।

পরদিন। ঘটনা মোটামুটি পরিষ্কার হলো। শওকত জামিলই চৌধুরীবাড়ির গুপ্তধন সরানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। কীভাবে যেন সে জেনে যায় চৌধুরীবাড়ির লাইব্রেরির একটি দুষ্প্রাপ্য বইয়ে গুপ্তধনের ক্লু দেওয়া আছে। বইটি রবীন্দ্রনাথের লেখা। গীতাঞ্জলিকেই টার্গেট করে সে। হাবিবকে হাত করে বইটি সংগ্রহ করে। কিন্তু হাবিব কৌশলে বইটি আবার উদ্ধার করে। ফলে শওকত জামিলের সঙ্গে হাবিবের বাদানুবাদ শুরু হয়। হাবিবকে গুলি করে শওকত। মূলত তার ইচ্ছে ছিল ছোটকাকুর ওপর হামলা করা। ওসি আকরামের কাছে সবকিছু স্বীকার করেছে শওকত জামিল। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেছে।

গীতাঞ্জলি পাওয়া গেল। কিন্তু বইটির একটি পৃষ্ঠা নেই। ছোটকাকু বুঝে ফেললেন এ পৃষ্ঠাতেই সম্ভবত গুপ্তধনের ক্লু ছিল। দুপুরে একা আবার মিরাজ কাদেরীর দাদার ঘরে ঢুকলেন তিনি। দিনের আলোয় ঘরটির সৌন্দর্য ও আভিজাত্য ছোটকাকুকে মুগ্ধ করল। সোফায় বসে অনেকক্ষণ নানা কথা ভাবলেন। ‘আমার ঘরে একটি পরিবার আছে। যে পরিবারে বাবা নেই মা আছে...’ এ কথার আসল অর্থ কী? মিরাজ কাদেরীর দাদা দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। কাজেই পারিবারিক ভাবনার মধ্যে এ ধাঁধার উত্তর পাওয়া যাবে না। কথাটি হয়তো রূপক অর্থে লেখা। মা আছে বাবা নেই... ঘরের কোনায় পিয়ানোটির দিকে চোখ পড়ল ছোটকাকুর। কেন যেন বড় পিয়ানোটি তাকে আকৃষ্ট করল। এগিয়ে গেলেন পিয়ানোটির দিকে। ছোটবেলায় হারমোনিয়াম বাজিয়েছেন ছোটকাকু। কারণ গান শেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বড়বেলায় এসে গান শেখা হয়নি। প্রজাপতি, প্রজাপতি... এ গানটিই প্রথম বাজানো শেখেন। অজান্তে প্রজাপতির সুর তোলার জন্য পিয়ানোর রিডে হাত চলে গেল। এক ঝলক সারে গা মা পা ধা নি সা... বাজাতে গিয়ে চমকে উঠলেন ছোটকাকু। এটাই কি গুপ্তধনের ক্লু। সারেগামা... গানের পরিবার। এখানে ‘মা’ শব্দটি আছে। বাবা শব্দটি নেই। তার মানে এটাই কি গুপ্তধনের ক্লু...। পিয়ানোর ভিতরেই কি পাওয়া যাবে গুপ্তধনের নকশা?

আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলেন ছোটকাকু। মিরাজ কাদেরীর নাম ধরে ডাক দিলেন। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন মিরাজ কাদেরী।

ছোটকাকু বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বন্ধু পেয়ে গেছি।

পেয়ে গেছি মানে?

পেয়ে গেছি গুপ্তধন।

কই, কোথায়?

মিরাজ কাদেরীকে পিয়ানোর পাশে এনে দাঁড় করালেন ছোটকাকু। বললেন, পিয়ানোর রিডগুলো তোলো তো দেখি।

মিরাজ কাদেরী মন্ত্রমুগ্ধের মতো পিয়ানোর রিডের প্লেটটি তুললেন। ভিতরে একটি খাম দেখা যাচ্ছে। খাম হাতে নিয়ে ছোটকাকুর দিকে তাকালেন।

ছোটকাকু বললেন, ভিতরে কী আছে বের কর।  খামের ভিতর থেকে একটি কাগজ বের করলেন মিরাজ কাদেরী। কাগজে একটি নকশা আঁকা। সঙ্গে একটি চিঠিতে লেখা- অভিনন্দন শুভেচ্ছা। নকশা অনুসরণ কর। পেয়ে যাবে গুপ্তধন। একটাই অনুরোধ এ গুপ্তধন দেশের কাজে লাগাবে। শুভকামনা তোমাদের জন্য।

মিরাজ কাদেরী ও ছোটকাকু পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। এটা আনন্দের কান্না। সাফল্যের কান্না...

                -সমাপ্ত

সর্বশেষ খবর