শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রেম

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

প্রেম

তাই তা চিত্তের সুখ। কবির কারবার হৃদয় আর মনন নিয়ে। প্রেমের আধারও মন। তাই কবি হয়ে পড়ে প্রেমের ফাঁদের লঘু লক্ষ্য। তবে এই ফাঁদ স্বভাবগতরূপে ‘মিষ্টি ফাঁদ’। একে ‘মধুর মিথ্যা’ বা ‘sweet lie’র সঙ্গে তুলনা করা চলে। মধুর মিথ্যায় স্বার্থের ফেরেবি নেই, তাই তা নির্দোষ-নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ-নির্মল। প্রেমও এমন মিথ্যাকে নাজায়েজ বলে পাপাঙ্কের লেবেল এঁটে দেয়নি।

জীবন আর প্রেম যেন সমান বয়েসী। যেখানে জীবন, সেখানেই প্রেম। ভিন্নতা কেবল প্রকার-প্রকৃতিতে। প্রেমের অনুপস্থিতি মানে যন্ত্রণায় দহন, মরণ বরণ। মিলনে সুখ, বিচ্ছেদে যাতনা। প্রেম এমন এক রহস্যময় অনুভূতি যাকে সংজ্ঞার শেকলে বাঁধা যায় না। এর চলার চরিত্র আগ থেকেই নিরূপণ করা যায় না। খেয়ালি চলায় হেঁয়ালি থাকলেও এর শেকড় কিন্তু থাকে অন্তরাত্মার গহনে। তাই প্রেমের মূল উৎপাটনের আরেক নাম আত্মার হনন। প্রেম মানুষের আত্মার আত্মীয়। আত্মাহীন দেহ আর প্রেমহীন জীবন সমার্থক। আত্মা থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত হয় প্রেমানুভূতি। তখন কেউ আর প্রেমিক-প্রেমিকা থাকে না। একে হয়ে যায় আরেকের প্রেম। অরূপ রূপ নেয় স্বরূপে। তখন ‘এই তো তোমার প্রেম, ওগো হৃদয়হরণ।’ দ্বৈত মনে আপনা থেকেই বেজে ওঠে, ‘প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে, বাঁধন খুলে দাও/ ভুলিব ভাবনা, পিছনে চাব না, পাল তুলে দাও।’

প্রেম কবিতার মতো। কবিতা লিখা যায় না, হয়ে যায়। প্রেমেও পড়া যায় না, প্রেম হয়ে যায়। এর ফাঁদ এড়ানো দুষ্কর। এ ফাঁদের বিস্তৃতি ব্যাপক। মানুষের মন আছে বলেই এক মন আরেক মনকে চুরি করে। মন সিঁদ কাটে বটে, তবে সিঁদকাঠি দিয়ে নয়। মননের মহিমা দিয়ে। নজরের খঞ্জর দিয়ে। অনুভূতির আকুতি দিয়ে। প্রেম হলো প্রাণের আরাম, মনের শান্তি। ধরা-যে পড়তেই হয় মানুষের। হয় পুরো, নয় আধা কিংবা সিকি-আনা-পাই। ফাঁদ থেকে নিস্তার নাই। ‘বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতেছ, কেমনে দিই ফাঁকি/আধেক ধরা পড়েছি গো, আধেক আছে বাকি।’ কবিগুরুর প্রতিধ্বনি পাই প্রেমের আরেক কবি নজরুলের মাঝেও; তবে ভিন্ন আঙ্গিকে। ‘প্রেম পাশে পড়লে ধরা চঞ্চল চিত-চোর/শাস্তি পাবে নিঠুর কালা এবার জীবন-ভোর। মিলন রসের কারাগারে/ প্রণয় প্রহরী রাখব দ্বারে/চপল চরণে পরাব শিকল নব অনুরাগ-ডোর।’

বিবর্তনমূলক মনস্তত্ত্বের ধারণাও ঠিক একই রকমের। সে মতে, প্রেম হচ্ছে প্রজাতি হিসেবে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সৃষ্ট এক বিবর্তনবাদী ষড়যন্ত্র। এরই আরেক নাম ফাঁদ। আর ভালোবাসা? ‘ভালোবাসা’ হচ্ছে এই ষড়যন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার আরও বড় ধরনের ষড়যন্ত্র। জীবনীশক্তির আরেক নাম প্রেম অথবা প্রেমের অপর নাম জীবনীশক্তি। ইংরেজ রোমান্টিক কবি কিটসের মতে, প্রেম যে-পেল না, আর যে-কাউকে প্রেম দিতে পারল না, সংসারে তার মতো দুর্ভাগা আর কেউই নেই। প্রেমিক কবি নজরুলের আক্ষেপও প্রণিধানযোগ্য। ‘বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি- আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম- সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’

প্রেম আর ভালোবাসা এক না হলেও এদের মধ্যের ফারাক আসমান-জমিন নয়। মানুষ জীবনভর শব্দ দুটোর ব্যবহার করে যায়। কিন্তু কদাচিৎ গভীরভাবে ভেবে দেখে না, এদের ব্যঞ্জনার মধ্যে মূল পার্থক্যটা কোথায়?

অনেকেই প্রেম ও ভালোবাসাকে আলাদা করার চেষ্টা করেন। কেবল যৌনতাকেন্দ্রিক মমতাকে প্রেম ও যৌনতাবহির্ভূত মমতাকে ভালোবাসা বলে চিহ্নিত করতে চান। কিন্তু বাংলা ভাষায় এদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। আমরা যৌন প্রেমকে ভালোবাসাও বলি আবার যৌনতা বহির্ভূত ভালোবাসাকেও প্রেম বলি, যেমন, দেশপ্রেম। মায়ের মমতাকে বলি ভালোবাসা। তাই ভালোবাসা আর প্রেমের মধ্যে যে সূক্ষ্ম ফারাক, তা নিয়ে মাতামাতি নিরর্থক। সমরূপ বা সমার্থক হলেও ভালোবাসার ব্যাপ্তি ব্যাপক। ভালোবাসার মানুষ বা বিষয়ের কল্যাণ কামনা করা বা তার কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার নাম ‘ভালোবাসা’। এতে দু’পক্ষেরই ভূমিকা মুখ্য নয়। প্রধান ভূমিকা হলো ‘ত্যাগ’। ‘ভালোবাসা’ কেবল মিলনেই পূর্ণতা পায় না। মিলনের আকাক্সক্ষার আরেক নাম আত্মসুখ। প্রেম আত্মহিত-কেন্দ্রিক, ভালোবাসা পরহিত-কেন্দ্রিক। প্রেম ভালোবাসার একটা রূপ, কিন্তু ভালোবাসা স্বতন্ত্র। প্রেমের ক্ষেত্র সংকীর্ণ, আর ভালোবাসার ক্ষেত্র ব্যাপক ও সর্বজনীন। দুপক্ষের সম্মতিতে প্রেম হয়, আর ভালোবাসায় অপরপক্ষের সম্মতি গৌণ। ভালোবাসা হয় এক পক্ষ থেকে আর প্রেম হয় উভয় পক্ষ থেকে, ভালোবাসার জন্য প্রেম আবশ্যক নয়, কিন্তু প্রেমের জন্য ভালোবাসা অপরিহার্য। প্রেম হলো আত্মসুখের জন্য প্রেমাস্পদকে আপন করে নেওয়ার প্রবল আকাক্সক্ষা, ভালোবাসা হলো প্রেমাস্পদের সুখের জন্য নিজেকে বিলীন করে দেওয়া।

প্রেমের কাতারে আছে প্রণয়, প্রীতি, সদ্ভাব, বন্ধুত্ব, অনুরাগ, আকর্ষণ, টান, পছন্দ, স্নেহ, শ্রদ্ধা, ভক্তি, আসক্তি। প্রেম-এর প্রকৃতি প্রত্যয় হলো প্রিয়+ইমন্। প্রিয় হলো ভালোবাসা বা প্রণয়ের পাত্র। হতে পারে বন্ধু, সুহৃদ, স্বামী কিংবা ভালো লাগার ব্যক্তি বা বিষয়। ইমন্-এর আক্ষরিক অর্থ কারও জন্য হিতকর কিছু। ভক্তিরসাত্মক একটি রাগের নামও কিন্তু ইমন্। কিন্তু ব্যাকরণে এটি ব্যবহৃত হয় তদ্ধিত-প্রত্যয় হিসেবে। প্রেম দ্বিপক্ষীয় ব্যাপার। দু’পক্ষের সায় ছাড়া প্রেমের হালে পানি পায় না। প্রেমের নায়ে পাল উড়ে না। সোনা ফসলে সেই ‘সোনার তরী’ ভরে না। শুধু এক পক্ষের আকুতিতে প্রেমের কীর্তি নেই। এ ধরনের প্রেমীদের রসিকতা করে বড়জোর OSLA’র সদস্য করা যায় (One Sided Lovers Association)। প্রকৃত প্রেমের ব্যাপ্তি আত্মহিত, আত্মশুদ্ধি, আত্মতুষ্টি, আত্মত্যাগ এমনকি আত্মাহুতির পরিধি পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রেম এমন এক এমন অনির্বচনীয় অনুভূতি, যার অভিজ্ঞতা যে কোনো বয়সেই জীবনে এসে পড়তে পারে আচমকা। প্রেম কখনো মানুষকে বদলে দেয়। আবার এর কারণেই মানুষ অনেক কঠিন কাজও সহজেই সেরে নিতে পারে। প্রেম মানুষকে গড়ে, আবার ভাঙেও। প্রেমের উন্মাদনায় প্রেমিক অসাধ্যকেও সাধ্য করে। আবার ক্ষেত্রবিশেষে মরণের মতো কঠিন বিষয়কে শুধু বরণই করে না; হারও মানায়। দেশে দেশে, কালে কালে শুধু প্রেমের জন্য ঘটেছে কত রক্তপাত, বিগ্রহ, বিবাদ, বিসম্বাদ, যুদ্ধ, খুনোখুনি। ধ্বংস হয়েছে নগরী, রাজ্য, জনপদ। আবার লেখা হয়েছে নয়া ইতিহাস, নয়া কাহিনি।

প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। মানুষ কেন প্রেমে পড়ে... এই প্রশ্নের উত্তরের পাহাড়। তবে সহজ কথায়, নির্ভরতার আকুতিতে, সহানুভূতির খোঁজে, সহমর্মীর তল্লাশে, নিঃসঙ্গতা নিরসনে, সংকটে শখার সন্ধানেও প্রেম করে থাকে অনেকে। চোখ দেখেই মনের কথা বুঝে নেওয়ার নাম প্রেম। একের প্রতি অপরের সহানুভূতি না থাকলে সেই প্রেম স্থায়ী হয় না। আর মানুষ অন্য মানুষের কাছ থেকে সব সময় সহানুভূতি পেতে চায়। কারণ, এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। অপরকে আকৃষ্ট করার জন্য মানুষ নিজেকে আকর্ষণীয় রূপে উপস্থাপন করলে সেখানে প্রেমের নেপথ্য-নির্যাস মিলে। ময়ূর পেখম তুলে ময়ূরীকে আর জোনাক পোকা মোহনীয় আলো জ্বেলে যেমন ওদের মিলনসঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করে। নারী ও পুরুষ তাদের চিন্তার ক্ষেত্রে যোগসূত্র খুঁজে পেলেই প্রেম করার সিদ্ধান্ত নেয়। একসঙ্গে দুজন সৃজনশীল ভাবনা প্রকাশ করেও প্রেমাসক্ত হয় মানুষ। তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ক্ষোভ, দুঃখ, কষ্টের অংশীজন পেতেও মানুষ প্রেমে পড়তে পারে।

পুরাণ ও সাহিত্যের ব্যাখ্যা মতে, নারী ও পুরুষের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ থেকে আসে আসক্তি। আর আসক্তি থেকে আসে পূর্বরাগ। পূর্বরাগ হলো অনুরাগ ও প্রেমের প্রস্তুতি। প্রেম হলো কামনা। একের অপরের প্রতি জেগে ওঠা দুর্নিবার বাসনাকে বলা যায় ভালোবাসা। শিল্পকলার প্রায় সমগ্র জমিন দখল করে রেখেছে এই প্রেম-ভালোবাসা। কবিতার রাজ্য তো যেন পুরোটাই প্রেমের দখলে। গল্প, উপন্যাস, সংগীত, নৃত্য, নাটক, অভিনয়, উপাখ্যান, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য যেন প্রেমেরই আকর। প্রেমকে উপজীব্য করে পৃথিবীতে কত সংখ্যক গ্রন্থ রচিত হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর গড়ে ২২ লাখ বই প্রকাশিত হয়। গুগলের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১৫ কোটি ৬২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮০টি। আর তাজ্জবের বিষয় হলো, বিশ্বজুড়ে যতো প্রেমের উপন্যাস রয়েছে, সেগুলোর মূল্য ১.৮ বিলিয়ন ডলার।

কেবল চারুকলারই নয়, বিজ্ঞানেরও রয়েছে প্রেমের এক অবাক করা ব্যাখ্যা। মানুষের মস্তিষ্কে সেরাটোনিন নামক একটি উপাদানের প্রভাবে নারী ও পুরুষের একে অপরের প্রতি স্বভাবজাত কামনা তৈরি হয়। তবে মতান্তরে বলা হয়েছে, কামনা জাগ্রত হয় সেক্স হরমোন টেস্টোসটেরন ও ইসট্রোজেনের মাধ্যমে। আকর্ষণ তৈরি হয় মস্তিষ্কের ডোপামিন ও নোরিপা দ্বারা এবং আসক্তি তৈরি হয় অক্সিটোসিন ও ভ্যাসোপ্রোসিনের মাধ্যমে। ফ্রয়েড বলেন, প্রেমের যে ক্ষেত্রগুলোকে আমরা যৌনতাবহির্ভূত মনে করি, তা আসলে যৌনতাবহির্ভূত নয়। যৌনতা ব্যতীত কোন সৌন্দর্য চেতনা ও প্রেম নেই। তাই বয়ঃসন্ধি বা যৌনতা চেতনার উন্মেষের আগে শিশুকে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ইত্যাদি কিছুই প্রকৃষ্টরূপে শেখানো যায় না। তবে ফ্রয়েডের এই মত স্বতঃসিদ্ধ নয়।

ভালোবাসার সাধারণ এবং বিপরীত ধারণার তুলনা করে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসাকে জটিলভাবে বিচার করা যায়। ধনাত্মক অনুভূতির কথা বিবেচনা করে ভালোবাসাকে ঘৃণার বিপরীতে স্থান দেওয়া যায়। ভালোবাসায় যৌনকামনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা অপেক্ষাকৃত গৌণ বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশি গুরুত্ব বহন করে। কল্পনাবিলাসিতার একটি বিশেষ ক্ষেত্র হচ্ছে এ ভালোবাসা। ভালোবাসা সাধারণত শুধুমাত্র বন্ধুত্ব নয়। যদিও কিছু সম্পর্ককে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব বলেও অভিহিত করা যায়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান ভালোবাসাকে টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে দেখায়। মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী তাদের জীবনকালের দীর্ঘ সময় পিতামাতার সাহায্যের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। এ সময়ে ভালোবাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যৌনতার জৈবিক মডেলকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি ড্রাইভ অর্থাৎ তাড়না হিসেবে মনে করা হয়, যা অত্যধিক ক্ষুধা বা তৃষ্ণার মতো। হেলেন ফিশার প্রেম বিষয়ে একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ। প্রেমের অভিজ্ঞতাকে তিনি তিনটি আংশিক ওভারল্যাপিং পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, লালসা, আকর্ষণ এবং সংযুক্তি। কামনা হলো যৌন বাসনা পূরণ করার জন্য এক ধরনের অনুভূতি। রোমান্টিক আকর্ষণ মূলত নির্ধারণ করে কোনো ব্যক্তির সঙ্গী কতটা আকর্ষণীয় তার ওপর। স্নায়ুবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ মূলত প্রেমে পড়ে যখন তার মস্তিষ্ক নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সেটের রাসায়নিক পদার্থ ত্যাগ করে। উদাহরণ স্বরূপ, নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন, ডোপামিন, নোরপাইনফ্রাইন, এবং সেরোটোনিনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। Amphetamine এক ধরনের পদার্থ ত্যাগ করে যার ফলে মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে, হার্টের কম্পনের হার বৃদ্ধি পায়, ক্ষুধা এবং ঘুম হ্রাস পায় এবং উত্তেজনা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পর্যায় সাধারণত দেড় থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যেহেতু কামনা এবং আকর্ষণের পর্যায়গুলোকে অস্থায়ী বলে মনে করা হয়, তাই দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের জন্য একটি তৃতীয় পর্যায় প্রয়োজন।

প্রেমের তাত্ত্বিক অর্থ এন্তার বিস্তৃত। প্রেম সম্বন্ধে দার্শনিক বার্নাড শ’ বলেছেন, প্রেম হলো সিগারেটের মতো, যার আরম্ভ অগ্নি দিয়ে, আর পরিণতি ছাইয়ে। রবীন্দ্রনাথও সে বাণীর অনুরণন ঘটিয়েছেন। ‘প্রেমের আনন্দ থাকে শুধু স্বল্পক্ষণ/প্রেমের বেদনা থাকে সমস্ত জীবন।’ বায়রনের মতে, ‘প্রেম মানুষকে শান্তি দেয়, তবে স্বস্তি দেয় না।’ কিন্তু মেটাফিজিক্যাল কবি জন ডান ওইসব বিতর্ককে পাত্তা না দিয়ে এবং বিরূপ ও প্রতিক্রিয়াশীল মতকে উড়িয়ে দিয়ে ক্ষ্যাপার মতো শাসিয়ে বলেছেন- For God’s sake hold your tongue, and let me love. দার্শনিক বার্টান্ড রাসেলও ‘সুখের উৎসেই প্রেম’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রেমের স্পর্শ ব্যতীত সুখের স্বাদ পাওয়া যায় না। বস্তুর গুণ যেমন ভাবের বিষয়, প্রেম-ভালোবাসা এবং সুখও তেমনি। তবে ভাবের বিষয় হলেও ভালোবাসা হচ্ছে বৈষয়িক এবং সুখ হচ্ছে আধ্যাত্মিক।

                -সমাপ্ত

সর্বশেষ খবর