শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাতাবাহার

ইমদাদুল হক মিলন

পাতাবাহার

শেষ পর্ব

[পূর্ব প্রকাশের পর]

তিনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন, আনুর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে থালায় ভাত-তরকারি তুলছে পাতাবাহার। তিনি কোনো রকমে স্ত্রীকে বললেন, ‘মাটিতে পড়া ভাত-তরকারি মেয়েটাকে খেতে দিও না। ওর অসুখ করবে।’

আনু প্রচ- ক্রোধে বললেন, ‘এই ভাতই ওকে আমি খাওয়াবো। ও মরুক, মরুক। এই জ্বালা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’

তখনই জাকারিয়ার ফোন এলো। দিনে যখনই একটু সময় পায় তখনই সে ফোন করে। আর ছেলের ফোন পেলেই বদলে যান আনু। মুহূর্তে তাঁর রাগ পানি হয়ে যায়। পাতাবাহারকে নিয়ে, মিজান সাহেবকে নিয়ে যত অশান্তিই থাকুক না কেন, ছেলেকে বুঝতে দিতে চান না।

আজ হলো উল্টো। জাকারিয়ার ফোন ধরেই কেঁদে ফেললেন আনু। ‘আমি আর পারি না বাবা। তোর বোনকে নিয়ে আমি আর পারি না। আমার জানটা খেয়ে ফেলল।’

তার পর ইনিয়ে বিনিয়ে আজকের ঘটনা বললেন। শুনে জাকারিয়া একটু থম ধরে থেকে বলল, ওকে একটু দাও তো।’

মোবাইল ফোন মেয়েকে দিলেন আনু। ফোন ধরে, যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে কথা বলতে শুরু করল পাতাবাহার। ‘ভাই, তুই বাড়িতে আসিস না কেন? কতদিন তোকে দেখি না। তাড়াতাড়ি আসিস ভাই। আর আসার সময় আমার জন্য অনেক কমলা নিয়ে আসবি। সব কমলা আমি খাবো না। খোসা ছাড়িয়ে কমলার কোয়াগুলো ফেলে দেব আর কমলার খোসার গন্ধ নেব।’

হি হি করে হাসতে লাগল পাতাবাহার।

জাকারিয়া ধীর শান্ত গলায় বলল, ‘আচ্ছা নিয়ে আসব। এখন তুই একটা কাজ কর। বাবার শরীর খারাপ। সে তোকে খাইয়ে দিতে পারবে না। তুই নিজে নিজে খেয়ে নে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। মাটিতে ফেলে দেওয়া ভাতই খেয়ে নেবো।’

‘না না ওই ভাত খেতে হবে না। মা আবার ভাত দেবে। মাটিতে ফেলে দেওয়া ভাত কেউ খায়? বোকা মেয়ে!’

মিজান সাহেব বিছানায় বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে ছিলেন মেয়ের দিকে। শরীর খারাপ হওয়ার পর থেকে প্রায়ই মৃত্যু চিন্তা হয়। আনুর পিছু পিছু পাতাবাহার রান্নাঘরের দিকে চলে যাওয়ার পর আবার তিনি কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলেন, তিনি মারা গেলে মেয়েটিকে কে দেখে রাখবে? জাকারিয়া থাকবে ঢাকায়। ঊনত্রিশ বছর বয়স হয়েছে ছেলের। এক দুবছরের মধ্যে বিয়ে করতে হবে। নিজের সংসার হলে সে কি আর বোনের কথা ভাববে? বাজারের দোকান দুটোর ভাড়ায় আর জমির আয়ে আনু আর পাতাবাহারের দিন চলে যাবে। আনুরও বয়স হচ্ছে। রোগ ব্যাধিতে ধরবে ধীরে ধীরে। তার পর?

মিজান সাহেব আর ভাবতে পারেন না। তাঁর মাথাব্যথা বেড়ে যায়। প্যারাসিটামল খাওয়ার ফলে জ্বর ছাড়তে শুরু করেছে। শরীর ঘেমে যাচ্ছে। গায়ে কাঁথা রাখতে পারছেন না। ভারি অবসন্ন লাগছে শরীর। অন্যদিকে মনের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে এই সব চিন্তা। দিশেহারা লাগছে খুব। মিজান সাহেব ঝিম মেরে বিছানায় পড়ে রইলেন।

সাত মাস পরের কথা।

মিজান সাহেব হাঁটাচলা তেমন করতে পারেন না বলে, নিচু কমোডে বসতে পারেন না বলে বাড়িতে সুন্দর বাথরুম আর হাই কমোডের টয়লেট বানিয়ে দিয়েছে জাকারিয়া। এখন আর নদীতে গোসল করতে যেতে পারেন না মিজান সাহেব। বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে শরীর ভারী হয়েছে। পা টেনে টেনে অতি কষ্টে হাঁটেন। বাড়ি থেকে বেরোনোই সম্ভব হয় না তাঁর পক্ষে। বড় ঘরের বারান্দায় একটা আরাম কেদারা রাখা আছে। শুয়ে থাকতে ভালো না লাগলে অতিকষ্টে সেই চেয়ারটায় এসে বসে থাকেন। এক সময় নিয়মিত শেভ করতেন। এখন আর করেন না। ফলে মুখভর্তি দাড়িগোঁফ। সবই পেকে সাদা হয়ে গেছে। চুল পড়ে গেছে বেশির ভাগ। মাথার পেছন দিকে কয়েক গোছা চুল আছে। সেগুলোও পাকা। সব মিলিয়ে মিজান সাহেব এখন অথর্ব বৃদ্ধ। অতিকষ্টে নিজের গোসলটা নিজে করেন, টয়লেটে যান। কখনো কখনো আনু তাকে ধরে ধরে বাথরুমে আর টয়লেটে নিয়ে যান। গোসল সেরে আসার পর শরীর মাথা মুছিয়ে দেন। স্বামীর এসব কাজে মোটেই বিরক্ত হন না তিনি।

এই অবস্থায়ও পাতাবাহারকে খাওয়ানোর কাজটা করেন মিজান সাহেব। তিনবেলা নিজ হাতে মেয়েকে খাওয়ান। খাওয়ার সময় হলেই প্লেট নিয়ে তাঁর সামনে হাজির পাতাবাহার। শরীর যতই খারাপ হোক মিজান সাহেব বিছানায় উঠে বসেন। মেয়ের মুখে খাবার তুলে দেন। যেন বাবা পাখি তার ছানাকে খাওয়াচ্ছে, এভাবে খাইয়ে দেন।

এই নিয়ে আনু চিৎকার চেঁচামেচি করেন। মেয়েকে ধমকান বা মারতে যান। তাঁকে নিরস্ত করেন মিজান সাহেব। তখন মিজান সাহেবকে নিয়ে পড়েন আনু। ‘তুমি লাই দিয়ে দিয়ে ওর মাথাটা আরও খেয়েছ। তুমি বেঁচে থাকতে এই মেয়ে ভালো হবে না। তোমার আদরে ওর সর্বনাশ হয়েছে।’

মিজান সাহেব কথা বলেন না।

এক দুপুরে গোসল করতে ঢুকেছেন বাথরুমে। জাকারিয়া আনুকে সাবধান করে দিয়েছিল ‘বাথরুম যেন পিচ্ছিল না থাকে। বাবা যেন বাথরুমে পড়ে না যান।’ কথাটা মনে রেখেছেন আনু। বাথরুমটা সেভাবেই পরিষ্কার রাখতেন তিনি। একজন কাজের মহিলা আছে বাড়িতে, রোকেয়া। মধ্যবয়সী, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা। সন্তানাদি নেই। বহু বছর ধরে এই বাড়িতে। বাথরুম সেও পরিষ্কার রাখে।

সেদিন বোধহয় ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। বাথরুমে ঢুকে বালতি থেকে পানি তুলে মাথায় দিতে গিয়ে ডান পা পিছলে গেল মিজান সাহেবের। শরীরের ভার রাখতে পারলেন না। ধড়াম করে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন মিজান সাহেব। তাঁর জ্ঞান নেই। বাড়িতে হুড়োহুড়ি পড়ল। পাড়ায়ও পড়ল।

লোকজন ছোটাছুটি করে এলো। পাশের বাড়ির লিয়াকত জাকারিয়ার বন্ধু। সে ছুটে এলো। ধরাধরি করে ঘরে নেওয়া হলো মিজান সাহেবকে। বাজারের ফার্মেসি থেকে এলাকার একমাত্র এমবিবিএস ডাক্তার বরকত সাহেবকে ডেকে আনা হলো। ডাক্তার বললেন, ‘সম্ভবত ব্রেন হেমারেজ। ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে।’

পাতাবাহার নির্বিকার চোখে সব দেখছিল। দুই-তিনবার চেষ্টা করেছে বাবার কাছে যেতে। আনুর ভয়ে যেতে পারেনি। তবে দূর থেকে বাবাকে ডেকেছে। ‘বাবা, ও বাবা। উঠছো না কেন? আমার খিদে পেয়েছে। ভাত খাওয়াবে না আমাকে?’

কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায়নি।

আনু কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে ফোন করেছিলেন। বিকালের মুখে মুখে একটা মাইক্রোবাস নিয়ে ঢাকা থেকে এলো জাকারিয়া। লিয়াকত আর সে মিলে মিজান সাহেবকে ঢাকায় নিয়ে গেল। জাকারিয়ার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু শফিক। সে এক সচিবের পিএস। নিউরো সায়েন্স হসপিটালে ব্যবস্থা করে রেখেছিল। কিন্তু মিজান সাহেব আর চোখ খুললেন না। পরদিন দুপুর নাগাদ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন।

ততক্ষণে কাছে-পিঠের আত্মীয়স্বজনে বাড়ি ভরে গেছে। কান্নাকাটির রোল পড়েছে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদছিলেন আনু। তাঁকে সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করছিল পাড়ার বয়স্ক কয়েকজন মহিলা।

পাতাবাহার আগের মতোই নির্বিকার। কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছিল। মিজান সাহেবের লাশ রাখা হয়েছে উঠোনের আমগাছটির তলায়। দুয়েকবার সেখানটায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে সে। জাকারিয়া হাত ধরে থামিয়েছে। নিঃশব্দে কাঁদছিল সে। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পাতাবাহার জিজ্ঞেস করেছে, ‘ভাই, ও ভাই, বাবাকে আমগাছতলায় শুইয়ে রেখেছ কেন? বাবার তো জ্বর। চল, তুই আমি মিলে বাবাকে ঘরে নিয়ে যাই।’

জাকারিয়া কথা বলতে পারেনি। বোনকে জড়িয়ে ধরে আগের মতোই কেঁদেছে।

বিকালের মুখে মুখে মিজান সাহেবের গোসল ইত্যাদি শেষ হলো। মসজিদ থেকে লাশ বহনের খাটিয়া আনা হয়েছে। কাফন পরিয়ে আতর লোবান দিয়ে, গোলাপ পানি ছিটানো হয়েছে লাশের ওপর। আগরবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার কয়েকজন ছাত্র লাশের শিয়রে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছে। গোরস্থানে আছে লিয়াকত। কবর খোঁড়ার কাজ চলছে সেখানে।

জাকারিয়া দাঁড়িয়েছিল বাবার লাশের সামনে। পাতাবাহার ঘুরেফিরে আসছে তার কাছে। কথা এখন আর তেমন বলছে না।

বাবার লাশের সামনে দাঁড়িয়ে জাকারিয়ার তখন অদ্ভুত একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছিল। দিন পনেরো আগে বাড়ি এসেছিল সে। এক দুপুরে নদীতে গোসল করতে যাওয়ার আগে কী মনে করে গোরস্থানের দিকটায় গিয়েছে। গিয়ে দেখে গোরস্থানের একটা দিক ঘাস আগাছায় একেবারেই ছেয়ে গেছে। অনেকদিন পরিষ্কার করা হয় না।

গোসল করতে না গিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছিল জাকারিয়া। একটা কাস্তে হাতে গোরস্থানে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেই ঘাস আগাছা পরিষ্কার করেছিল। এখন বাবার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে তার মনে হলো, অবচেতন মন তাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিয়েছিল। জাকারিয়ার হাতে পরিষ্কার করা জায়গাতেই আজ মিজান সাহেবের কবর হচ্ছে। অতি প্রিয়জন হারানোার ইঙ্গিত কি অবচেতন মন আগেভাগেই দিয়ে দেয়!

মিজান সাহেবকে যখন গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, লাশের খাটিয়া উঠে গেছে বহনকারীদের কাঁধে, প্রত্যেকের মাথায় টুপি আর মুখে কলেমা শাহাদাত, ঠিক তখনই ছুটে এলো পাতাবাহার। দিশাহারা গলায় বলল, ‘বাবারে কই নিয়া যায়? ভাই, ও ভাই, বাবারে কই নিয়া যাও?’

জাকারিয়া কথা বলল না। চোখ মুচছিল। কে একজন বয়স্ক মানুষ বললেন, ‘মাগো, তোমার বাবায় তো মারা গেছে! এখন তারে আমরা কবর দিতে নিয়া যাইতেছি।’

শুনে হেসে ফেলল পাতাবাহার। ‘ও। বাবা মরে গেছে? তা হলে কোনো অসুবিধা নেই। আগেও একবার মরে গিয়েছিল। সাত বছর বাবাকে আমি দেখিনি। তারপর ফিরে এসেছে।’

পাগল মেয়েটির কথা কেউ পাত্তা দিল না। পাতাবাহার চলল লাশ বহনকারী দলের পিছু পিছু। দূরে দাঁড়িয়ে বাবাকে কবর দিতে দেখল।

 

 

কৃষ্ণপক্ষের রাত। হলদে মøান চাঁদ উঠে এসেছে মধ্য আকাশে। জাকারিয়া শুয়েছিল তার ঘরে। মাথার কাছের জানালাটা খোলা। ঝিরঝিরে একটা হাওয়া আসছে। তবু ঘুম আসছে না তার। বাবার কথা মনে হচ্ছে। সেই ছেলেবেলা থেকে শুরু করে কতদিনকার কত স্মৃতি ভেসে উঠছে মনের পর্দায়। কত সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার কথা মনে পড়ছে। গতকালও যে মানুষটা ছিলেন, আজ তিনি নেই। মৃত্যু তাঁকে টেনে নিয়ে গেছে কবরের অন্ধকারে।

একটা সময়ে জাকারিয়া টের পেল তার আর শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। ঘুম তো আসছেই না, কী রকম অস্থির লাগছে। উঠে খোলা জানালাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে।

তখনই দৃশ্যটা চোখে পড়ল।

জানালার ওপাশের ঘরটাতেই মায়ের সঙ্গে ঘুমায় পাতাবাহার। নিঃশব্দে সেই ঘরের দরজাটা খুলতে দেখল জাকারিয়া। দরজা খুলে পাতাবাহার বেরিয়ে এলো। চাঁদের মøান আলোয় বোনকে চিনতে অসুবিধা হলো না তার। মা নিশ্চয় ক্লান্ত। নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর সেই ফাঁকে ঘর থেকে বেরিয়েছে পাতাবাহার।

জাকারিয়া খুবই অবাক হলো। পাতাবাহার কখনো রাত-বিরাতে একা ঘর থেকে বেরোয় না। আজ বেরোল কেন?

ঘর থেকে বেরিয়ে আমগাছটার তলায় গেল পাতাবাহার। সেখানে বাড়ির আবর্জনা পরিষ্কার করার কোদালটা পড়ে আছে। জাকারিয়া পরিষ্কার দেখল, সেই কোদালটা হাতে নিয়েছে পাতাবাহার। বাড়ির বাইরের দিকে পা বাড়িয়েছে।

এত রাতে কোদাল নিয়ে কোথায় যায় পাতাবাহার?

দরজা খুলে পাগলের মতো ছুটে বেরোল জাকারিয়া। পিছন থেকে বোনের হাত টেনে ধরল। ‘এত রাতে কোদাল নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস তুই?’

পাতাবাহার সরল গলায় বলল, ‘বাবাকে তোমরা কবর দিয়ে এসেছ। কবরের তলায় বাবার খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবাকে তুলে নিয়ে আসি। বাবার জন্য আমি ঘুমাতে পারছি না।’

সঙ্গে সঙ্গে বোনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল জাকারিয়া। ‘না রে, না। কবর দেওয়া মানুষ তুলে আনা যায় না। মরা মানুষকেই কবর দিতে হয়। বাবা মরে গেছেন। তুই তাঁকে তুলে আনলেও তিনি আর চোখ খুলবেন না। কথা বলবেন না।’

বোনের হাত থেকে কোদালটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল জাকারিয়া। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘চল, ঘরে চল, ঘরে। বাবা মারা গেছেন। আর কখনো ফিরে আসবেন না।’

ততক্ষণে আনু আর রোকেয়া বেরিয়ে এসেছে। বাড়িতে খুব কাছের কয়েকজন আত্মীয়া ছিলেন। বয়স্ক মানুষ সবাই। তাঁরাও বেরিয়ে এসেছেন। সবাই জড়ো হয়েছেন উঠোনে।

জাকারিয়ার কথা শুনে এই প্রথম খুবই দিশাহারা হলো পাতাবাহার। বলিস কী তুই? ও ভাই, ভাই। বাবা আর কবর থেকে উঠবে না? বাবা আর কোনো দিন ফিরে আসবে না? হায় হায়, তা হলে আমাকে ভাত খাওয়াবে কে? ও ভাই, ভাই বাবা না থাকলে আমাকে ভাত খাওয়াবে কে? বাবা, বাবা, ও বাবা বাবা!’

পাতাবাহার উঠোনের মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগল। গলা ফাটিয়ে, চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। ‘বাবা, ও বাবা, বাবা। আমাকে ফেলে কেন তুমি মরে গেলে? আমি এখন কার কাছে থাকব? কে আমাকে ভাত খাওয়াবে? কে আমাকে আদর করবে? বাবা, ও বাবা, বাবা...।’

পাতাবাহারের বুকফাটা কান্নায় রাতের বাতাস স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের তলায় এসে দাঁড়িয়ে ছিল একখন্ড কালো মেঘ। মিজান সাহেবের বাড়িটি ডুবে যাচ্ছিল গভীর অন্ধকারে।

                [সমাপ্ত]

সর্বশেষ খবর