শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
পর্ব-৬

মন্টু ও মঞ্জু বৃত্তান্ত

আন্দালিব রাশদী

মন্টু ও মঞ্জু বৃত্তান্ত

পূর্ব প্রকাশের পর

চার.

গঞ্জিকাসেবীটা কী খাবে? বাবা জিজ্ঞেস করলে শেহেরজাদ বলল, গঞ্জিকা খাবে অবশ্য মঞ্জু ভাইকেও এক প্যাকেট ওয়েডিং ডিনার দেওয়া হয়েছে। খেয়ে নেবে।

আর কথা না বাড়িয়ে শেহেরজাদ টুনটুনিকে নিয়ে যখন নিচতলায় মন্টু ভাইয়ের রুমে ঢুকল। দেখল ওয়েডিং ডিনারের দুটো প্যাকেট খোলা, দুই প্যাকেটের কোনোটা থেকেই সিকি ভাগের বেশি খাওয়া হয়নি। মন্টু ভাইয়ের গায়ের সব পোশাকই রয়ে গেছে, শুধু পাগড়িটা টেবিলের ওপর। মন্টু ভাই বড় হাঁ করে ঘুমোচ্ছে। মুখের ওপর নিশ্চয়ই মশা ঘুরঘুর করছে। একটা মশা হাঁ করা মুখ দিয়ে গলায় ঢুকে পড়লে ভীষণ অস্বস্তিকর অবস্থায় সৃষ্টি হবে।

মন্টু ভাইয়ের স্ত্রীর গায়েও বিয়ের পোশাক, কেউ বলেনি এটা ছেড়ে সাধারণ কিছু একটা পরে নাও। শেহেরজাদকে বলতে হলো, তোমার অন্য কোনো কাপড় আছে না আমার এক সেট সালোয়ার-কামিজ নিয়ে আসব?

টিয়া একটা ছোট স্যুটকেস দেখায়, ওখানে আছে।

শেহেরজাদ বলে, তাহলে এখনই পরে নাও। আমি ফ্ল্যামিঙ্গো পাখিটাকে নিয়ে ওপর থেকে ঘুরে আসছি, ১০ মিনিটের মধ্যে ফিরব। এক বিছানায় পাঁচজনের জায়গা হবে না, আর একটা রুম আছে। বড় দুটোকে ওখানে দিয়ে দেব।

ওরা কাঁদবে। তিন মেয়েই আমার সঙ্গে ঘুমায়।

ইঙ্গিতের কথা সে বুঝে নিল।

একদম চিন্তা কোরো না, আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।

শেহেরজাদ কোলে নিয়ে দোতলায় উঠতে চেয়েছিল কিন্তু ফ্ল্যামিঙ্গো বলল, আমি এখন বড় আমি হাঁটতে পারি। সুতরাং সে হেঁটেই ওপরে উঠল। তার জুতোতে পায়ের চাপ পড়লে সামনে পেছনে দুই দিক থেকে সবুজ আলো বের হয় এবং পমপমাপম শব্দ হয়। শেহেরজাদ তাকে নিয়ে প্রথম বাবার ঘরে ঢুকেই দেখল বিছানায় বসে বাবা ওয়েডিং ডিনার করছে।

আমাদের কথিত গেস্টরুমের খাটটা ডাবল, কাজেই দুটি শিশু এবং শেহেরজাদের জন্য পর্যাপ্ত। কে কোন দিকে শোবে এ নিয়ে দুই বোন কথা কাটাকাটি করে তারাই সিদ্ধান্ত নিল শেহেরজাদকে মাঝখানে শুতে হবে, দুজন দুই পাশে। শেহেরজাদকে গল্প বলে যেতে হবে। দুজন ঘুমিয়ে পড়ার আগে গল্প বলা থামানো যাবে না। গল্প বলতে বলতে সে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ ঘুমোতে পারল না। ডাহুক তার পিঠে কয়েকটা টোকা দিয়ে বলল, কেউ একজন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে।

শেহেরজাদ বলল, ফ্ল্যামিঙ্গো তোমার দাদা।

বাবা চোখ তুলতেই, সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়েটি জাপানি কায়দার দুই হাত জোড় করে মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানাল এবং কোনো ভূমিকা না করে বলল, তুমি বিছানায় বসে খাও কেন? বাবু হয়েছো নাকি? বিছানায় খাবার পড়লে পিঁপড়া আসবে, ছোট ছোট লাল পিঁপড়া।

বাবা জিজ্ঞেস করল, এই পাকনা মেয়েটাও সঙ্গে এসেছে নাকি?

জবাব সে-ই দিল, পাকনা মেয়ে আবার কী? বল, পাকা মেয়ে। আমি অনেক পাকা মেয়ে।

শেহেরজাদ ফ্ল্যামিঙ্গোকে মার কাছে নিয়ে আসে। এটাই প্রত্যাশিত ছিল যে দেখামাত্রই মা হাত বাড়িয়ে কোলে নেবে, কিন্তু কার না কার বাচ্চা এ রকম একটা অজুহাত সৃষ্টি করে দুই হাত গুটিয়ে রাখল।

ফ্ল্যামিঙ্গো জাপানি কায়দায় মাকে অভিবাদন জানাল না বরং জিজ্ঞেস করল তুমিও ওই লোকটার মতো পাকাকে পাকনা বল?

মা বলল, মানে? তারপর কিছুক্ষণ হাঁ হয়ে রইল।

ফ্ল্যামিঙ্গো বলল, তোমার দাঁত হলুদ কেন? তিন দিন ধরে ব্রাশ কর না, তাই না! তিন দিন ব্রাশ না করলে আমার দাঁতও এ রকম হলুদ হয়ে যায়। তুমি দুবার দাঁত মাজবে ঘুম থেকে উঠে আর ঘুমোতে যাওয়ার আগে। আর হলুদ কোনো খাবার দিলেও খাবে না।

এবার আর মুখে কুলুপ এঁটে রাখতে না পেরে মা বলল, আরে জবর পাকনা দেখছি।

ফ্ল্যামিঙ্গো হেসে উঠল, আসলে দুজন একই রকম, পাকাকে পাকনা বলে।

শেহেরজাদ বলল, মা তুমি ফ্ল্যামিঙ্গোকে একটা কিছু সাধো।

তার আগেই ফ্ল্যামিঙ্গো বলল, একশবার সাধলেও আমি কিছু নেব না। আমি ছোঁচা নাকি?

ততক্ষণে দশের জায়গায় পনেরো মিনিট হয়ে গেছে। নিজের রুম থেকে একটা পাতলা বালিশ আর একটা চকলেট রঙের কাঁথা তুলে নিয়ে দরজা দিয়ে বেরোতে বেরোতে শেহেরজাদ বলল, আমি নিচে থাকব দরজা বন্ধ করে দিও।

নিচে থাকবি মানে?

মানে খুব সহজ, নিচে থাকব মানে নিচে থাকব, ইন দ্য গেস্টরুম অব ডাউনস্টেয়ার।

শেহেরজাদ নিচে নেমে এলো। টিয়া একটা নতুন ম্যাক্সি পরেছে।

ফ্ল্যামিঙ্গো তখনো তার আঙুল ধরে রেখেছে, ডাহুকের চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু। তাকে বলল, আমি তোমাদের সঙ্গে পাশের রুমে ঘুমোব আর এক হাজার একটা গল্প শোনাব।

চিন্তা করবে না। ওরা আমার সঙ্গে ঘুমোবে। সকালে ঘুম ভাঙলে পাশের রুমটাতে এসে দেখে যেও তোমার মেয়েরা ঘুমোচ্ছে কি না। আজকের মতো গুডনাইট। তোমাদের মুখোমুখি রুমটাতে মঞ্জু ভাই থাকে। কোনো বিশেষ কিছুর গন্ধটন্ধ পেলে কিছু মনে কোরো না। মঞ্জু ভাই ওসব নিয়েই আছে।

টিয়া ইশারায় যা বলল, তার মানে লক্ষ্মী সোনা, আমার মেয়েরা তোমাকে ঘুমোতেই দেবে না। আমি এমনিতেই অনেক খুশি হয়েছি।

[চলবে]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর