শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
পর্ব-৭

মন্টু ও মঞ্জু বৃত্তান্ত

আন্দালিব রাশদী

মন্টু ও মঞ্জু বৃত্তান্ত

পূর্ব প্রকাশের পর

তারপর কাগজে লিখে দিল তা ছাড়া মাঝেরটা বিছানায় পেশাব করে দিতে পারে।

শেহেরজাদ লেখাটা শব্দ করে পড়ল। ফ্ল্যামিঙ্গো বলল, মাঝেরটা মানে কি আমি? মার কথাটা ঠিক না, যেদিন ঘুমের আগে মা আমাকে পি করাতে ভুলে যায় সেদিন করি, সেটা তো আর আমার দোষ হতে পারে না। আমি এখন তোমার সঙ্গেই যাব, মা একশবার না বললেও আমি তোমার সঙ্গে ঘুমোব।

শেহেরজাদ দুজনকে নিয়েই পাশের রুমে আসে, দুজনকে শোবার আগে প্রস্রাব করে নিতে বাধ্য করে; কিন্তু ঝামেলায় ফেলে ফ্ল্যামিঙ্গো; বলে, ঘুমোনোর আগে দাঁত ব্রাশ করার নিয়ম আছে। আমার জন্য ছোট ব্রাশ আর বেবি পেস্ট নিয়ে এসো।

ডাহুক বলে, নিয়ম থাকলেও দু-এক দিন ব্রাশ না করলে কিছু এসে যায় না।

ফ্ল্যামিঙ্গো মানতে রাজি নয়, অবশ্যই এসে যায়। তিন দিন না মাজলে দাঁত ওপরতলার বুড়িটার মতো হলদে হয়ে যাবে।

শেহেরজাদ নিজের আঙুল দিয়ে বিনা পেস্টে তার দাঁত মেজে দেয়। ডাহুকও এগিয়ে আসে তাহলে আমারটাও মেজে দাও।

ডাহুক শেহেরজাদকে সতর্ক করে দেয়, চকলেট কিংবা ম্যাঙ্গো ফ্লেবারের টুথপেস্ট কখনো ফ্ল্যামিঙ্গোকে দেবে না, ও পেস্ট খেয়ে ফেলে। মা বলেছে পেস্ট খেলে পেটে পেস্ট জমে জমে স্টোন হয়ে যায়। স্টোন মানে পাথর। পেটের ভিতর বেশি পাথর জমা হলে পেট এত ভারী হবে যে তুমি হাঁটতেই পারবে না।

ফ্ল্যামিঙ্গো বলে, আমি এসব কথা বিশ্বাস করি না।

আমাদের কথিত গেস্টরুমের খাটটা ডাবল, কাজেই দুটি শিশু এবং শেহেরজাদের জন্য পর্যাপ্ত। কে কোন দিকে শোবে এ নিয়ে দুই বোন কথা কাটাকাটি করে তারাই সিদ্ধান্ত নিল শেহেরজাদকে মাঝখানে শুতে হবে, দুজন দুই পাশে। শেহেরজাদকে গল্প বলে যেতে হবে। দুজন ঘুমিয়ে পড়ার আগে গল্প বলা থামানো যাবে না।

গল্প বলতে বলতে সে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ ঘুমোতে পারল না। ডাহুক তার পিঠে কয়েকটা টোকা দিয়ে বলল, কেউ একজন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে।

কে?

ডাহুক বলল, খুলতে যেও না। ভূতটুত হবে।

আবার টোকা পড়ার পর শেহেরজাদ জিজ্ঞেস করে কে?

মঞ্জু। কিন্তু এখানে আপনি কে?

শেহেরজাদ দরজা খোলে।

জিজ্ঞেস করে বাড়িতে কী হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে এতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম কিছুই টের পাইনি। টেবিলের ওপর কাচ্চি বিরিয়ানি কে দিয়েছে? তুই এখানে কী করিস।

শেহেরজাদ আংশিক জবাব দিল। মঞ্জু ভাই বলল, গাঁজার পুরিয়া কখনো নিজের ঘরে রাখে না। কখনো পুলিশ রেইড করলে যেন ধরতে না পারে। এই ঘরে সোফার নিচে ডান দিকটাতে পেছনের পায়ের কাছে তিনটা পুরিয়া আছে। বের করে আনতে হবে। শেহেরজাদ বলল, এই ঘরে দুটো বাচ্চা আছে, তোমার ঢোকার দরকার নেই। আমি বের করে দিচ্ছি। কিন্তু একটার বেশি পাবে না।

বাচ্চা কোত্থেকে এলো।

মন্টু ভাইয়ের।

বিয়ে করতে করতেই বাচ্চা হয়ে গেল, সুপারসনিক স্পিড। কটা বাচ্চা?

একটা পুরিয়া মঞ্জুর হাতে তুলে দিতেই বলল, এমন সুন্দর একটা আনন্দের রাত। মন্টুর বিয়েটা তো উৎসব তাই না। তাহলে আমার দুই পুরিয়া খাওয়া উচিত। একটা তো রুটিন খাওয়া আর একটা সেলিব্রেশন।

ফ্ল্যামিঙ্গো মানতে রাজি নয়, অবশ্যই এসে যায়। তিন দিন না মাজলে দাঁত ওপরতলার বুড়িটার মতো হলদে হয়ে যাবে।

শেহেরজাদ নিজের আঙুল দিয়ে বিনা পেস্টে তার দাঁত মেজে দেয়। ডাহুকও এগিয়ে আসে তাহলে আমারটাও মেজে দাও।

ডাহুক শেহেরজাদকে সতর্ক করে দেয়, চকলেট কিংবা ম্যাঙ্গো ফ্লেবারের টুথপেস্ট কখনো ফ্ল্যামিঙ্গোকে দেবে না, ও পেস্ট খেয়ে ফেলে। মা বলেছে পেস্ট খেলে পেটে পেস্ট জমে জমে স্টোন হয়ে যায়। স্টোন মানে পাথর।

আরও একটা বের করে দিল। মঞ্জু বলল, আসলে ভাইবোনদের মধ্যে তুই-ই সবচেয়ে ভালো। আমাকে অন্যরা কেউ বুঝতে চায় না। সবচেয়ে কম বোঝে বাবা। বাবা আসলেই একটা আহাম্মক। গবেট। সবচেয়ে বুদ্ধিমান কিংবা ধূর্তও বলতে পারিস সেটা হচ্ছে মন্টু। কটা বাচ্চাসহ বউ এনেছে বললি?

তিনটা, বেবিগুলো খুব সুইট। কাল তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।

আপাতত পরিচয় না করানোই ভালো। বুঝতে পারছিস আমি মন্টুর কাছে হেরে যাচ্ছি। কিন্তু আমার তো হারলে চলবে না। অন্তত চার বাচ্চাসহ যদি কাউকে বিয়ে করতে না পারি আমার মানসম্মান আর থাকবে না। আমি খোঁজ করব, তোরা কেউ খোঁজ জানলেও আমাকে বলতে পারিস। মন্টুকে বলিস না, আমার ব্যাপারে খুব জেলাস। আমি তাকে ডিঙিয়ে যাই এটা কখনো চাইবে না।   

ঠিক আছে, তুমি এখন যাও। আমাকে ঘুমোতে দাও।

তুই জানিস আমার সম্পর্কে বাবার ধারণা খারাপ। আমাকে বলেছে গঞ্জিকাসেবী। এটা একটা কথা হলো। এখন কি গাঁজার কোনো গুরুত্ব আছে। পৃথিবীর উনিশটা দেশে গাঁজা বৈধ করে দিয়েছে। যত ইচ্ছে খাও। কেউ কিছু বলবে না। বাংলাদেশেই তো ইয়াবার কাছে গাঁজার কোনো সম্মান নেই। এসব বাবার জানা নেই। জানবে কীভাবে, এত বয়স হয়েছে, এখনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন কীভাবে চালাতে হয় জানে না। ব্রিটিশ, একেবারে ব্রিটিশ। এ ধরনের ব্যাকডেটেড মানুষের জন্যই বাংলাদেশটা এগোতে পারছে না।

মঞ্জু ভাইকে দরজায় রেখেই আস্তে করে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি, দুজনের মাঝখানেই।

ড্রয়িংরুমে আবুল বাশার মিরধার পাতলা তোশক চোখে পড়েনি। নিশ্চয়ই এক ফাঁকে বের করে নিয়ে গেছে। সম্ভবত এক প্যাকেট ওয়েডিং ডিনার তারও জুটেছে, সেজন্যই খেতে দোতলায় ওঠেনি।

আবুল বাশার গতকাল ব্যান্ড পার্টির তাণ্ডববাদন শুনে এবং তিন সন্তানসহ মঞ্জু ভাইকে দেখে ফুর্তিতে বলে ওঠে, মঞ্জু মিয়া একেবারে বাঘের বাচ্চা। এক দিনেই তিন ছাওয়াল।

আমি কাছেই ছিলাম, বললাম, কী বললে?

বললাম, কাজটা কি মঞ্জু মিয়া ঠিক করল? একটা না দুইটা না তিনটা ছাওয়াল। আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করল না। করলে বলতাম বড় দুইটাকে তাদের দাদার বাড়ি কিংবা নানার বাড়ি পাঠিয়ে দাও। একটার বেশি সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। পোলাপান সামলাতে পারব না এই ভয়ে আমি তো বিয়েশাদিই করলাম না।

ভোরের দিকে আবুল বাশারের বর্ণনা অনুযায়ী দুম্বার মূত্রের গন্ধে বাড়িটা ভরে গেল। মঞ্জু ভাই আবার ঘুমোতে গেল, ঘুম দেড়টা-দুটোর আগে ভাঙবে না।

বাবা যা-ই বলুক মঞ্জু ভাইয়ের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে গাঁজা কেনার টাকার জন্য কখনো উৎপাত করে না। অনলাইনে কনটেন্ট লিখে দেয়। কনটেন্ট রাইটার। কখনো কখনো না ঘুমিয়ে টানা তিন দিন কাজ করে, মাসে দু-এক বার। টাকাটা তার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়।

চলবে

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর