শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

শেষ মুহূর্তে আলোচনায় বইমেলা

শেষ মুহূর্তে আলোচনায় বইমেলা

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে বইমেলা। বইমেলার বিভিন্ন স্টলে বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের ভিড়।  বিক্রিও হচ্ছে ভালো। লোকসমাগমে জমজমাট বইমেলা। স্টলগুলোতে বিক্রি বাড়ায় খুশি বইয়ের দোকানিরাও। এ যেন লেখক, প্রকাশক, পাঠকের মিলনমেলা, অনন্য উৎসব। রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে বইমেলায় এখন বাজছে শেষ মুহূর্তে বিদায়ের সুর। তুলে ধরেছেন- সাইফ ইমন ও আবদুল কাদের

 

অক্ষরের এই উৎসব আরও প্রসারিত ও প্রাণবন্ত হোক

মহাদেব সাহা

কবি

একুশ বাঙালির আত্মপরিচয় আবিষ্কারের দিন। বিশ্বময় এখন পালিত হচ্ছে মাতৃভাষা দিবস। একুশের বইমেলা আমাদের গৌরবের ইতিহাস, আমাদের অক্ষরের উৎসব। যতই দিন যাচ্ছে ততই এ উৎসব প্রসারিত হচ্ছে। আমি সেই প্রথম বইমেলা দেখেছি। বাংলা একাডেমির বটবৃক্ষের নিচে চট বিছিয়ে মাত্র কয়েকটি বইয়ের দোকান। এখন সেই মেলা গোটা চত্বর ভরে গেছে। কবি, লেখক, শিল্পী, পাঠক সবার মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মেলা হয়ে উঠেছে এক মহাউৎসব। বিশেষ করে তরুণ, তরুণীরা এই মেলার প্রাণ। তরুণ কবি, লেখকরা মেলাকে আরও সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলছে। এবারের মেলায় মাওলা ব্রাদার্স থেকে আমার নতুন কবিতার বই ‘লাজুক পদ্য’ ও ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ প্রকাশিত হয়েছে এবং অনন্যা প্রকাশনী থেকে এসেছে আরেকটি কবিতার বই ‘আমার সুখদুঃখের পৃথিবী’। আমি প্রত্যাশা করি, আমাদের বইমেলা, আমাদের অক্ষরের এই উৎসব আরও প্রসারিত ও প্রাণবন্ত হতে থাকবে।

 

বইমেলা সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক আয়োজন 

আনিসুল হক

কথাসাহিত্যিক

এবারের মেলায় আমার ছয়টি বই এসেছে। কখনো আমার মাকে শিরোনামের বইটির ১০ মুদ্রণ আসছে ২ মার্চ অর্থাৎ মেলার শেষ দিন। বইটি পরিবারের বড় ভাই এবং সুপারস্টার মায়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। এ ছাড়াও কিশোরদের দুটি বই এসেছে সময় থেকে। রম্যরচনা এসেছে কাকলী থেকে। আরেকটি বইয়ের শিরোনাম অমাবস্যার রাতে কে এসেছিল। বইমেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক আয়োজন। সারা দেশ থেকে লাখ লাখ লোক আসে বইমেলাকে উদ্দেশ্য করে। এটা নিঃসন্দেহে দারুণ ব্যাপার। মেলার উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মের সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি করা। এটাই আমরা আশা করি। তবে বই বিক্রিটাও গুরুত্বপূর্ণ। বইমেলায় আজকের যে অবস্থান তা হুমায়ূন আহমেদের অবদান। প্রকাশকরা যখন ভালো আয় করতে পারবেন তখন তিনি ভালো ভালো বই বেশি প্রকাশ করতে পারবেন। এখানে বলতেই হবে, সম্পাদনার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। বইগুলো যেন সুসম্পাদিত হয়। এটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আর ভালো লেখককে পাঠক খুঁজে নেবেই।

 

ভালোই যাচ্ছে এবারের বইপ্রেমীদের আসর

ফরিদ আহমেদ, প্রকাশক, সময় প্রকাশন

বিদায় নিচ্ছে বইমেলা ২০২৪, ভালোই যাচ্ছে এবারের বইপ্রেমীদের আসর। পাঠকদের থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। প্রচুর মানুষ বইমেলায় আসছেন। উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। এ কারণেই প্রচুর লোকের সমাগম ঘটেছে। দুই দিন মেলা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মেলার শেষ সময়টায় যেমন লোকারণ্য হওয়ার কথা, তেমনটা হচ্ছে না। আশা করছি, ছুটির দিনগুলোয় তারা আসবে। উপন্যাসের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ সব সময়ই ছিল। এখনো আছে। সব সময়ই শিশু-কিশোরদের বইয়ের চাহিদা বেশি থাকে। এবারও তাই হয়েছে। শিশু কর্নারে শিশুদের আনন্দের কমতি থাকে না। আমরাও শিশুদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বই প্রকাশের চেষ্টা করি। সময় প্রকাশনী এবার ৫০টির বেশি নতুন বই প্রকাশ করেছে। তন্মধ্যে ১৫ জন নারী লেখক। তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, প্রবন্ধ, আবৃত্তি, বিজ্ঞান, গবেষণা, সায়েন্স ফিকশন, অনুবাদ, রান্না ও স্বাস্থ্য, উপন্যাস, গল্প, কবিতা, রম্য রচনা ইত্যাদির মতো প্রায় ১৫টি বিষয়। নতুন লেখকদের নিয়ে সময় প্রকাশনী সর্বদা কাজ করে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

 

বই প্রকাশ অনেক অনেক বড় বিষয়

মনিরুল হক

প্রকাশক, অনন্যা

বইমেলা আমাদের জন্য বিশেষ আশীর্বাদ। বড় আয়োজন। তবে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্পাদনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমরা অনেক প্রকাশকই পারি না। আসলে একটা বই ৩০০ থেকে ৫০০ কপি গেলে আসলে সম্ভব হয় না। ৫ হাজার কিংবা ১০ হাজার কপি বিক্রি হলে সম্পাদনাটাও সুন্দর করে করা সম্ভব। সম্পাদনার জায়গাটায় আমরা আসলেই দুর্বল। আমরা অনেকেই পারি না সম্পাদনা বোর্ড তৈরি করতে। তাই বারবার বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রতিবছর মেলায় ৫ হাজারের বেশি বই প্রকাশিত হয়। এর থেকে আমরা সর্বোচ্চ ১০০+ বই পাব মানসম্মত। আর মৌসুমি লেখকরা যারা আছে তারা থাকবেই। কোনো কোনো প্রকাশক এটিকে ব্যবসা হিসেবে নেন। এরা আসলে বেশিদিন টেকেন না। ফেসবুকে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা রয়েছেন। তারাও বই করেন; পরের বছর আর খবর থাকে না। আসলে নিয়মিত লেখক না হলে লেখা যায় না। শখ করে অনেকেই লেখেন। একটা বই লেখা অনেক বড় ব্যাপার। এই স্বাদ যে কেউ পেতে চাইতেই পারেন। তবে মানের দিকটা খুবই জরুরি। বই প্রকাশ অনেক বড় বিষয়। 

 

যাচাইবাছাইয়ের মাধ্যমে ভালো বই প্রকাশ করাই প্রকাশকের দায়িত্ব

আলমগীর রহমান

প্রকাশক, অবসর

মেলার সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। তবে শেষ কয়েক বছর থেকে লক্ষ্য করছি একটা বিষয়। এটা হলো মেলায় সবাই ছবি তোলায় বেশি ব্যস্ত। লেখকের বই নিয়ে ছবি তুলে তারপর বই রেখে চলে যায়। এটা হওয়া উচিত নয় বলে আমি মনে করি। অবশ্যই মেলা প্রদর্শনীর জায়গা। তবে বই প্রকাশকদের দিকটাও দেখতে হবে। সারা বছর যত বই প্রকাশিত হয় তার বেশির ভাগ বই বিক্রি হয় মেলাকে কেন্দ্র করে। এখানে বইয়ের মূল্য পড়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। একজন লেখক ভাবছেন তার বইটি বিক্রি হয়েছে কিন্তু আসলে ঘটনা ভিন্ন। ছবি তোলার পাশাপাশি মার্জিত আকারে দেখা উচিত। কলকাতা এবং বাংলাদেশে বইমেলা যতটুকু না দেখার তার চেয়ে বেশি বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিছুটা হলেও মার্জিতভাব বজায় রাখতে হবে, নইলে হয় না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে এখন অনেক ভালো ভালো লেখক তৈরি হচ্ছেন। লেখার মান ভালো হচ্ছে। সম্পাদনার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সম্পাদনা প্যানেল থাকাটা জরুরি। সুসম্পদনা জরুরি। যাচাইবাছাইয়ের মাধ্যমে ভালো বই প্রকাশ করাই প্রকাশকের দায়িত্ব। 

সর্বশেষ খবর