শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
গল্প

উত্তরের দরজা

সমরেশ মজুমদার

উত্তরের দরজা

দুই বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার মৃত্যুবরণ করেন গত বছর ৮ মে। তাঁর অপ্রকাশিত একটি গল্প তাঁর কন্যা দোয়েল মজুমদারের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হলো। প্রসঙ্গটি তুলে ধরে সমরেশ মজুমদারের কন্যা দোয়েল মজুমদার লিখেছেন, “বাবা চলে যাওয়ার পরে একদিন তাঁর টেবিল ঘাঁটতে গিয়ে এই লেখাটি খুঁজে পাই। ‘উত্তরের দরজা’ গল্পটি অনেক বছর আগে লেখা হয়েছিল। যতদূর মনে হয় এই লেখাটি অন্য কোথাও প্রকাশিত হয়নি।  এটি বাবার লেখক জীবনের শুরুর দিকের লেখা। বাংলাদেশ প্রতিদিন কাগজটির সূচনা থেকে প্রতিটি ঈদ সংখ্যাতেই বাবা উপস্থিত থাকতেন। এবারের ঈদ সংখ্যাতে এভাবে তিনি উপস্থিত রইলেন।” ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত সেই লেখাটি  দৈনিকের পাঠকদের জন্য ছাপা হলো।

বারান্দার এক কোণে বেতের চেয়ারে বসে দুপুরে পাওয়া কাগজটা কোলের ওপর রেখে চশমাটা খুললেন সরিৎশেখর। কোনো নতুন খবর নেই। কাউকে উদ্দেশ না করে প্রতিদিনের অভ্যাসে কথাগুলো উচ্চারণ করলেন তিনি। পাকা বাতাবি লেবুর মতো রোদ সামনের বাগানটায় নকশা কাটছিল। এ রোদ এবং রোদ মরে যাওয়া সময়টায় সরিৎশেখর এইখানে এই চেয়ারে শরীর এলিয়ে বসে থাকেন কাগজ কোলে নিয়ে। ছোট্ট বাগানে অনেকখানি সূর্যমুখী লাগিয়েছেন তিনি। এখন বড় বড় ফুলে বাগানটা ছেয়ে গেছে। এখন একটু একটু বাতাস বইছে। দুপুরে গুমোট গরম ছিল। এই মাস্তুল শহরে লোডশেডিং লেগেই আছে। তাও বেছে বেছে দুপুরগুলোয়। অবশ্য এখন গাছের পাতায় তিরতিরে কাঁপন লাগছে। বাইরের ঘরের দেয়ালঘড়িতে চারটে বাজার শব্দ হলো। এখনো রোদ মরেনি। অনুভা বোধহয় ঘুমুচ্ছে।

দুপুরে তাঁর সামান্য তন্দ্রা এসেছিল কিন্তু অনুভার বাসন মাজার শব্দে সেটুকু চলে গিয়েছিল। ও যখন কাজ করে পাড়া জানতে পারে। ঝি-চাকর দুদিনের বেশি টিকতে পারে না। অথচ এই মেয়ে না থাকলে তিনি এতকাল বাঁচতেই পারতেন না। তাঁর সব কাজ অনুভা নিজের হাতে করে দেয়। বেলা ৩টার সময় দুপুরের ভাত খেয়ে অনুভা ঘণ্টাখানেক শুয়ে থাকে। আজ পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে এই মেয়েকে দেখছেন তিনি। মাঝে দুটো বছর ছিল না। বারোয় গৌরিদান করেছিলেন, চৌদ্দতে ফিরে এলো শাঁখা ভেঙে। তার পর থেকে তাঁর ছায়ায় ছায়ায়।

কাগজ নিয়ে চশমা বন্ধ করে উঠলেন সরিৎশেখর। এখন তাঁর সময় নিজের মতো ব্যবহার করার। কাগজ আসে দুপুরে। সন্ধ্যা হয়ে গেলে আর চশমা কাজ দেয় না। যা পড়া হলো হলো, বাকিটা কাল সকালে দেখা যাবে। অভ্যাস, শুধুই অভ্যাস। নইলে বারো মাসের খবরের কাগজ খুব কমই চেহারা পাল্টায়। তারিখ না বদলালে বোঝা মুশকিল। ভিতরে এসে ড্রয়ার খুলে চকোলেটের বাক্সটা বের করে রুমালে রাখলেন তিনি। ঘরের দেয়ালে তাঁর এবং অনুভার একটা ছবি বাঁধানো আছে। অনেক কম বয়স তখন অনুভার। ছবিতে তিনি শক্ত সমর্থ, প্রায় যুবক। কতকালের ছবি। সরিৎশেখর পাঞ্জাবি পরে লাঠি হাতে বাইরে বেরিয়ে এলেন। অনুভাকে ডাকতে গিয়েও ডাকলেন না তিনি। ঘুমিয়ে নিক খানিক। বাগানের মধ্যে পা ফেলে হঠাৎ পিছু ফিরে তাকালেন। সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে তৈরি এ বাড়িটায় বাপ আর মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। বয়স হলো, শরীর ভাঙল, একটু একটু করে চামড়ার চেহারা, মুখের গড়ন পাল্টাতে দেখলেন। তবু কী রকম মায়া পড়ে আছে এ শরীরটার ওপর, বাড়িটার ওপর।

এই সময় ওদের গলার আওয়াজ পেলেন তিনি। মুখ ফিরিয়ে দেখলেন জনাছয়েক কলবল করতে করতে এগিয়ে আসছে। কালো প্যান্ট এবং সাদা শার্ট, স্কুলের ইউনিফর্ম শরীরে। পিঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে ওরা দেখতে পেয়েই ছুটে এলো কাছে। সরিৎশেখর লোহার গেটে দাঁড়িয়ে ওদের আবদার শুনলেন। চার নম্বরের একটা বল চাই। পেছনের মাঠটায় দুটো গোলপোস্ট পুঁতে দিতে হবে। সরিৎশেখর মাথা নাড়িয়ে হাত নাচিয়ে ঠিক ওদের মতোন হয়ে কথা বলছিলেন। রুমাল থেকে চকোলেট নিয়ে ওদের সবার মধ্যে বিলি করে দিলেন। প্রত্যেককে পৃথক পৃথকভাবে আদর করলেন তিনি। ওরা চকোলেট মুখে হইচই করতে করতে চলে গেল। সরিৎশেখর কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেন। এ সময়টুকু তার সারা দিনের সবচেয়ে ভালো সময়। রোববার মনটা বিশ্রী হয়ে যায়। সেদিন তিনি খেলার মাঠে যান। স্কুল ছুটির পর এ পাঁচ-ছয় জনও সরিৎদাদুর কাছে না এসে পারে না।

গেটটা বন্ধ করছিলেন এমন সময় পিয়নটাকে দেখতে পেলেন সরিৎশেখর। ওকে দেখে দাঁড়ালেন তিনি। কে চিঠি দিল। মঠের চাঁদার জন্য তাগাদা, লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চিঠি। অথবা দেশের জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো ঘটনা-ইত্যাদি চিন্তা মাথায় নিয়ে সরিৎশেখর হাত বাড়ালেন। সাদা খামটার ওপর লেখাটা দেখে অবাক হলেন তিনি। বাঁকা চোরা সদ্য শুরু করা হাতের লেখা। নিশ্চয়ই কেউ ধরে ধরে লিখেছে। কৌতূহলী হয়ে খামের মুখটা খুলে চিঠিটা বের করলেন তিনি। চিঠির নিচে তাকালেন-‘তোমার স্নেহের ছোটকু’-অবাক হলেন সরিৎশেখর। ছোটকুটা কে? চিঠিটা পড়লেন-শ্রীচরণেষু দাদুভাই, তুমি কেমন আছো? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। প্রণাম নিও। ঠিকানাটা পড়তেই হাতে যেন একরাশ ঘোলাজলে ভেসে আসা ময়লার স্পর্শ লাগল। কোনোরকমে গেটটা বন্ধ করে বারান্দার বেতের চেয়ারে এসে বসলেন তিনি। ক্রমে উত্তেজিত হচ্ছিলেন সরিৎশেখর। কি ভয়ানক স্পর্ধা ওদের! উঠে ভিতরের ঘরে এলেন উনি। অনুভাকে একবার ডাকবেন ভেবেও ইতস্তত করলেন। চিঠিটা আবার পড়লেন। দুবরাজপুর ডাকঘরের ছাপটা নজর করলেন। টি-পয়ে পোস্টকার্ড দিয়ে ঢাকা দেওয়া গ্লাসের জল আকণ্ঠ পান করে একটু স্বস্তিবোধ করলেন রিটায়ার্ড টি-এস্টেট ম্যানেজার সরিৎশেখর। মাথাটা দপ্‌দপ্ করছিল। প্রেশার আছে। চশমা থাকা সত্ত্বেও চোখটা ঠিক কাজ করছে না। সরিৎশেখর একটা প্রচন্ড ঘৃণায় জড়ানো ক্রোধ ঢেকে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। কি আশ্চর্য স্পর্ধা ওদের। আজ সাত বছর। সাতটি বছর পর নিজে না লিখে ছেলেটাকে দিয়ে লিখেছে। কোন ছেলেটা? সরিৎশেখর সূর্যমুখী গাছগুলোর মধ্যে এসে দাঁড়ালেন। ছেলে! ও রকম দূষিত রক্তে কোনো সুস্থ সন্তান হতে পারে না। আর একটা মুখ মনে পড়ল। চোয়াল শক্ত হলো তাঁর।

আজ সাতটি বছর। কোনো খবর রাখেননি তিনি। অথচ মনটা কেমন যেন শিরশির করত। সকালবেলায় তিস্তার বাঁধে বেড়াতে যাওয়ার সময়, বিকালে এ বাগানটায় দাঁড়িয়ে অথবা সন্ধ্যায় কালীবাড়িতে কথকতা শুনবার মুহূর্তে সেই শিরশিরানিটা বেড়ে যেত। অনুভাকে অনেকবার ধমক দিয়েছেন তিনি। ও মাঝে মাঝে দুপুরে খাওয়ার পর তাঁর শেষ কটি সুপক্ব চুলের গোড়ায় কবরেজি তেল মালিশ করতে করতে কথায় কথায় তাঁকে খোঁচাতে চাইত। অনিমেষকে ও কোলে পিঠে করে বড় করেছে। মমতাটা একটু বেশি। সরিৎশেখর স্ত্রীর মুখটা মনে করতে চেষ্টা করলেন। কত বছর হলো ওকে দেখেননি। অনিমেষকে এক বছর বয়স করে চলে গেল। শ্মশান থেকে ফিরে অন্ধকার দেখেছিলেন তিনি। অনুভার তখনো বোধহয় দশ বছর হয়নি। অনিমেষকে তখন থেকে ও ছায়ায় ছায়ায় রেখেছে। মমতাটা তাই ওর পক্ষে সরানো সম্ভব নয়। শেষের দিকে তাই আর কিছু বলতেন না সরিৎশেখর। বরং মনে মনে একটু ভয় করেন এখন অনুভাকে। কিন্তু মুখে প্রতাপ রাখতে চান। চা-বাগানে থাকাকালীন হুমকি দেওয়া অভ্যাসটাকে ছাড়তে পারেন না কিছুতেই।

তারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে একটা ছাগলছানা মুখ ঢোকাচ্ছিল। গলায় আওয়াজ তুলে সেটাকে তাড়ালেন তিনি। এই বাগান, এই ফুলগুলোকে তিনি চোখে চোখে রাখেন সব সময়। সরস্বতী পুজোর সময় রাত জাগতে হয় বুড়োধাড়ি ছেলেগুলোর জন্য। নইলে সকালে একটি ফুলও থাকবে না। আবার ভোর হলে নিজের হাতে ফুল তুলে স্কুলে গিয়ে তাঁর চকোলেট ভক্তদের দিয়ে আসেন তিনি।

অথচ সবাই যখন আপত্তি করেছিল, সম্পর্ক ত্যাগের হুমকি দিয়েছিল সেদিন তিনি শক্ত হয়েছিলেন। সমস্ত বাধার বিরুদ্ধে নিজে দাঁড়িয়ে অনিমেষকে সমর্থন করেছিলেন তিনি। বড় ছেলে নিখিলেশ অনেক চেষ্টা করেছিল আপত্তি জানিয়ে তাঁকে নিবৃত্ত করতে। শেষ পর্যন্ত বাবার কান্ড দেখে চুপচাপ আলাদা হয়ে গেছে সরিৎশেখরের পছন্দ করা স্ত্রীকে নিয়ে। ওরা এখন কার্শিয়াংয়ে আছে। ভালো চাকরি করে নিখিলেশ। চিঠিপত্র বিজয়া দশমী এবং মাঝে মাঝে দু-একটিবার লিখে থাকে। অনুভাকে দিয়ে কথাটা জানিয়েছিল অনিমেষ। কোনো ছেলেই তাঁর মুখের সামনে কথা বলার সাহস আজও পায় না। যা বলার অনুভাই বলে। প্রথমটায় শুনে চমকে উঠেছিলেন তিনি। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। মেয়েটার নামও এই প্রথম শুনলেন তিনি। অতসী পাকড়াশী। প্রথমে আপত্তি করেছিলেন, ‘অসম্ভব। বেজাতের মেয়েকে ঘরে আনতে পারব না। চিনি না শুনি না হুট করে যার তার মেয়েকে আনলেই হলো?’ অনুভাই তাঁকে মত দিতে বাধ্য করেছিল। ওরা ভালোবাসে-অনুভা বলেছিল। এরপর অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। হোক না নীচু জাত। জাত নিয়ে আজকাল আর কটা লোক ভাবছে।

শেষ পর্যন্ত উদার হয়েছিলেন তিনি। নিখিলেশ তখন কোথা থেকে খোঁজ পেয়ে জানিয়েছিল, মেয়েটার পরিবার নাকি ভালো নয়। সৎ চরিত্রের ডিপ্লোমা ওদের কারোর নেই। তবু মত দিয়েছিলেন সরিৎশেখর। ভালোবেসে ওরা বিয়ে করছে-খুশি হয়েছিলেন মনে মনে। পরিপূর্ণ সত্যের ওপর না দাঁড়িয়ে কাউকে ভালোবাসা যায় না। বিয়ে তো নয়ই। সরিৎশেখর সত্যনিষ্ঠার সম্মান দিয়েছিলেন ওদের পাশে দাঁড়িয়ে। কত আপত্তি তখন। দেশ থেকে চিঠি দিলেন আত্মীয়রা। এ কী করছেন সরিৎশেখর। একটা অজাতের মেয়েকে শেষ পর্যন্ত ঘরে আনছেন অমন চরিত্রবান কড়া মেজাজের মানুষ! তবু ওদের বিয়ের আগে শেষ ইতস্তত ভাবটা সরাতে তিনি স্বজাতের প্রতিনিধিস্থানীয় কজনকে ডেকেছিলেন বাড়িতে। বসবার ঘরে সবাইকে চা, খাবার দিয়ে কথাটা পেড়েছিলেন তিনি। অনিমেষের বিয়ের ব্যাপারে তাঁর কী করা উচিত! উপস্থিত ভদ্রলোকেরা যা বলবেন তিনি তা-ই করবেন। অনেকক্ষণ ধরে আলোচনা চলেছিল। দু-একজন সমর্থন করছিলেন না অতসীদের বাড়ির খবর শুনে। অস্বস্তিবোধ করছিলেন সরিৎশেখর। শেষ পর্যন্ত নিজেই ওদের পক্ষে দাঁড়িয়ে মত আদায় করেছিলেন তিনি। করে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। বিবেকের দিক থেকে আর কোনো জ্বালা রইল না।

ওরা সরিৎশেখরের আশীর্বাদ নিয়ে কলকাতায় এসে রেজিস্ট্রি করেছিল। সরিৎশেখরের ইচ্ছা ছিল সামাজিকভাবে বিয়ে দেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহস পাননি তিনি। এই ভালো-শেষ পর্যন্ত নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিলেন। এই ভালো, ফুলদানির ফুলে নাইবা লক্ষ্মীপূজা হলো।

অতসীকে প্রথম দিনই ভালো লাগেনি সরিৎশেখরের। একটা স্বার্থপরতার ছাপ ওর চোখে-মুখে দেখেছিলেন তিনি। দেখতে আদৌ নয়নমোহন নয় অতসী। ছেলের রুচির প্রতি একটা বিতৃষ্ণাবোধ হয়েছিল তাঁর। তাঁর নিজের কথা মনে হলো। অনুভার মাকে তিনি শুভদৃষ্টির আগে দেখেননি। কিন্তু দেখে মোহিত হয়েছিলেন। তাঁর সংস্কারে পরিপূর্ণ পিতার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছিল। অথচ অনিমেষ এরকম পছন্দ কী করে করল! মেয়েটার স্বাস্থ্যও মোটেই চলনসই নয়। হয়তো ভালোবাসলে চোখের দৃষ্টি বদলে যায়-এমন তো কত কাহিনিতেই পড়েছেন। তবু অনিমেষ-যে রুচির গল্প করত এবং বড়াই করত-একটা কাঁটা খচখচ করছিল তাঁর মনে। কিন্তু অতসীর চোখের দিকে তাকালেও তাঁর আপত্তি ম্লান হয়। আশ্চর্য শান্ত চোখ। উপমা পাননি খুঁজে। মেয়েটাকে তাই সহ্য করা যায়।

কলকাতা থেকে ওরা ফিরে এলে অতসীকে কিছুদিন কাছে রেখেছিলেন সরিৎশেখর। অনুভাকে একটু সাহায্য করা হবে-এটা মুখে বললেও মনে মনে ছেলের বউয়ের কাছ থেকে একটা পরিচর্যা পাওয়ার তৃষ্ণা তাঁর মনে কাজ করছিল। নিজের ঘরটা ওদের জন্য ছেড়ে দিয়ে ছাদের ওপরের ঘরে চলে এসেছিলেন। অনুভা আপত্তি করেছিল-কিন্তু তিনি শোনেননি। এখন ওদের একটু নির্জনতা দরকার-তাঁর উপস্থিতি ওদের ভালো লাগবে না। সরিৎশেখর লক্ষ্য করেছিলেন অতসী কেমন যেন সব সময় সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে। একটা ভয় ভয় ভাব ওর আচরণে। ভেবেছিলেন এভাবে বিয়ে হওয়ায় ও সহজ হতে পারছে না। তাই তিনি সহজ হতে চাইলেন নিজে। সকালে অতসীকে নিয়ে তিস্তার বাঁধ ধরে বেড়াতে যেতেন। গল্প করতেন-দেশের গল্প, ছেলেবেলার গল্প। তাঁর প্রথম জীবনে অনেক যুদ্ধ করে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার গল্প। অতসী শুনত। সরিৎশেখর আপন খেয়ালে বলতেন। অতসী কথা বলত কম। এ মেয়ে কী করে অনিমেষকে ভালোবাসল বুঝতে পারেন না তিনি। ভালোবাসার সময় কথা বলতে হয় না নাকি। ছাদের ওপরের ঘরে বসে মাঝে মাঝে মন খুলে হাসতেন তিনি। ভালোই লাগত।

কিন্তু ক্রমে অনুভাকে গম্ভীর হতে দেখলেন তিনি। অনুভা কথা বলে-বেশি কথা বলে। মাঝে মাঝে ধমক দিতেন এই বেশি কথা বলার জন্য।

♦ আগামী পর্বে  সমাপ্য

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর