শিরোনাম
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

উত্তরের দরজা

সমরেশ মজুমদার

উত্তরের দরজা

দুই বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার মৃত্যুবরণ করেন গত বছর ৮ মে। তাঁর অপ্রকাশিত একটি গল্প তাঁর কন্যা দোয়েল মজুমদারের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হলো। প্রসঙ্গটি তুলে ধরে সমরেশ মজুমদারের কন্যা দোয়েল মজুমদার লিখেছেন, “বাবা চলে যাওয়ার পরে একদিন তাঁর টেবিল ঘাঁটতে গিয়ে এই লেখাটি খুঁজে পাই। ‘উত্তরের দরজা’ গল্পটি অনেক বছর আগে লেখা হয়েছিল। যতদূর মনে হয় লেখাটি অন্য কোথাও প্রকাশিত হয়নি। এটি বাবার লেখক জীবনের শুরুর দিকের লেখা। বাংলাদেশ প্রতিদিন কাগজটির সূচনা থেকে প্রতিটি ঈদ সংখ্যাতেই বাবা উপস্থিত থাকতেন। এবারের ঈদ সংখ্যাতে এভাবে তিনি উপস্থিত রইলেন।” ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত সেই লেখাটি দৈনিকের পাঠকদের জন্য ছাপা হলো।

♦ পূর্ব প্রকাশের পর

কিন্তু কদিন থেকে অনুভাকে একটু অন্যমনস্ক দেখলেন তিনি। মনে হলো ও কিছু বলতে চায়। অথচ বলতে পারছে না। অনিমেষকেও কদিন থেকে দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি। কখন আসে কখন যায় কে জানে। অতসীকে জিজ্ঞাসা করেও ভালো উত্তর পাননি। শেষ পর্যন্ত দুপুর বেলায় মাথায় তেল মালিশ করতে করতে অনুভা আর চেপে রাখতে পারল না খবরটা। খবরটা শুনে চমকে উঠেছিলেন সরিৎশেখর। শরীরটা পাক দিয়ে উঠেছিল। একি! একি নীচুতা। ছি ছি। ভয়ংকর রেগে গিয়েছিলেন তিনি। যাবতীয় আত্মীয় বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার সময়ে তাঁর অসহায় ভাব আসেনি। এ মুহূর্তে তাঁর অতসীর আচরণের কথা মনে পড়ল। চোখ বন্ধ করে আরাম চেয়ারে তেমনি শরীরটা রেখে জিজ্ঞাসা করলেন-কমাস। বলল ‘পাঁচ’। অনুভা তেলটা চুলের গোড়ায় বসিয়ে দিচ্ছিল। ‘এ্যাদ্দিন বলেনি কেন!’

উত্তর দিল না অনুভা। সরিৎশেখর উঠে দাঁড়ালেন। জানলায় দাঁড়িয়ে আকাশটা দেখলেন অনেকক্ষণ। রোদ্দুরে চোখ রাখলেন। নিচে তাকালেন। অতসী স্নান করে ভেজা কাপড় তারে শুকোতে দিচ্ছে। সরিৎশেখরকে দেখতে পেয়ে পড়ে যাওয়া ঘোমটা মাথায় টেনে দিল। রাগটাকে আমল দিতে পারলেন না সরিৎশেখর। অতসীর ওপর একটা মমতা তাঁর মনে ছড়িয়ে পড়ল। ওর কী দোষ। অনিমেষের অসংযমের বোঝা টানছে। ওকে শাস্তি দিয়ে কী হবে। অনিমেষ এত নীচ হলো। ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। অনুভাকে দেখলেন। ‘তুমি কী করতে বলো আমাকে!’ গলাটা বিষণ্ণ হচ্ছিল তাঁর। হাতের তেলগুলো তোয়ালেতে মুছতে মুছতে অনুভা নিচু গলায় বলল, ‘যা হবার তা তো হয়েছে। এখন আর-।’ সরিৎশেখর দেখলেন মেয়েকে। তারপর খোলা গলায় বললেন, ‘বউমাকে বলে দিও, আমি রাগ করিনি। একটু সাবধানে থাকতে বোলো। আমার কাছে লজ্জা করার কিছু নেই। বলে দিও।’

ঘরে এলেন তিনি। অনুভা কি এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি! উঠোন দিয়ে ঘুরে অনুভার ঘরের কাছে এলেন। বেঘোরে ঘুমোচ্ছে মেয়েটা। অনুভার শরীরটা দিন দিন বেঢপ ফুলে উঠছে। ওকে একবার দুর্গা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। চিলেকোঠার দরজা খুলে ছাদে এলেন তিনি। ছাদের ওপরের ঘরটা এখন বন্ধ রয়েছে। আগে এ ঘরটায় শুতেন তিনি। ছাদে দাঁড়ালে তিস্তার চর স্পষ্ট দেখা যায়। এখন জল নেই তিস্তায়। মাইল দুয়েক চওড়া বিরাট চর পড়েছে। ধু-ধু বালির শরীরে কুচি কুচি অভ্রের ঝিকিমিকি। মাঝে মাঝে কাশবনের চত্বর। এখন তিস্তার চরে কিছু উড়ে আসা লোকের মরসুমি চালাঘর রয়েছে। বর্ষায় নদী যখন থইথই করে, যখন যাত্রীরা পারাপারের সময় ঢেউয়ের দোলায় ‘তিস্তা বুড়ি কি জয়’ বলে চেঁচায় তখন কোথাও বালি দেখা যাবে না। কাশবন দেখা যাবে না। চালাঘর কিংবা তরমুজ খেতের দৃশ্য পাওয়া যাবে না। তিস্তা তখন আতঙ্ক। দেশলাইয়ের বাক্সের মতো চর পারাপারের সর্বাঙ্গে শিথিল পঙ্খীরাজ ট্যাক্সিগুলো তখন উধাও হবে।

দোমহনী শেষ বেলার ছায়া পড়েছে তিস্তার বালিতে! বিরাট লম্বা বাঁধটায়, যেটা অবধি চলে গেছে তিস্তার শরীর বেঁধে-সেখানে ক্রমে লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরিৎশেখর অতসীকে নিয়ে দুবেলা বেড়াতে যেতেন ওখানে। জোরে হাঁটার অভ্যাস তাঁর। কিন্তু অতসীকে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতেন তিনি। এ অবস্থায় জোরে হাঁটা ভালো নয়। কবরেজি বই আনিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নিতেন তিনি। অতসীর যেন অস্বস্তি হতো। অনুভা বলত বাবার যেন সবতাতেই বাড়াবাড়ি। অনিমেষ আশ্চর্যভাবে মৌন থাকত। বাজার থেকে ফলমূল নিয়ে আসতেন বউমার জন্য সরিৎশেখর। দুর্গা ডাক্তার বলেছিল এই সময় ওভালটিন খাওয়াতে। অতসী খেতে চাইত না, জোর করে খাওয়াতেন তিনি। অতসীর শরীর, মুখ, চোখ ক্রমে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছিল যেন। সরিৎশেখর যেন উঠেপড়ে লেগেছিলেন। অতসীকে সব সময় চোখে চোখে রাখতেন। অনুভাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন বউমার যেন অযত্ন না হয়।

তাড়াতাড়ি খেয়ে বিছানায় যাওয়া অভ্যাস তাঁর। একটু তন্দ্রা এসেছিল হঠাৎ অনিমেষের চিৎকার শুনতে পেলেন-‘দিদি, দিদি তাড়াতাড়ি আসুন-অতসী পড়ে গিয়েছে।’ অনুভা যেন চেঁচিয়ে কী বলল। তাড়াতাড়ি ছাদের ওপরের ঘর থেকে ছুটে নিচে নেমে এলেন তিনি। অতসী মেঝেতে পড়ে আছে। কাটা মানুষের মতো ছটফট করছে। অনিমেষ হাওয়া করছে পাখা দিয়ে। অনুভা জল দিচ্ছে মাথায়। ক্রমে শুনতে পেলেন-রাতে জল খেতে উঠেছিল অতসী। খাট থেকে নামার সময় শাড়িতে পা জড়িয়ে গিয়ে উপুড় হয়ে মেঝেতে পড়ে গেছে।

তাড়াতাড়ি গেঞ্জি গায়ে সেই রাতে একটা রিকশা নিলেন অনেক চেষ্টার পর। অতসীর প্রায় অবশ শরীরটা কোলে নিয়ে রিকশায় হাসপাতালে এলেন সরিৎশেখর। ডাক্তার-নার্সদের নিয়ে হইচই করতে লাগলেন। অতসীকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। অনিমেষকে নিয়ে বাইরে পায়চারি করতে লাগলেন তিনি। চোরের মতো যেন দাঁড়িয়েছিল অনিমেষ। সরিৎশেখর ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে মাঝে মাঝে বলছিলেন-‘ডোন্ট ওরি, নার্ভাস হওয়ার কী আছে। তুমি হওয়ার সময় তোমার মাকে নিয়ে এর চেয়ে বেশি ভাবতে হয়েছিল। তবে এর এখনো মাস চার বাকি; তা কিছু হবে না।’ পায়চারি করছিলেন আর বলছিলেন। রাত তখন অনেক। হাসপাতালপাড়াটা নিঝুম হয়ে আছে। একটা ছমছমে ভাব। একসময় যেন নিজেকেই বললেন সরিৎশেখর-‘বউমা যাতে বাঁচে তার জন্য প্রার্থনা করো। পেটের বাচ্চাটা যদি না থাকে তাহলে আর কী করা যাবে।’ বউমা তো বাঁচুক। না হয় এবার ভাগ্য বিফলে গেল।’

একসময় অন্ধকার হালকা হয়ে যাচ্ছিল। রাস্তায় রিকশাওয়ালাদের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। সারা রাত জেগেছিলেন সরিৎশেখর। অনিমেষকে ইজিচেয়ারটায় একটু ঘুমিয়ে নিতে বলেছিলেন। অনিমেষ আপত্তি করেছিল প্রথমে। এখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ছেলেমানুষ! হাসলেন তিনি। আর ঠিক তখন ডাক্তারকে বের হতে দেখলেন।

‘পেশেন্ট কেমন আছে?’ ফিস ফিস করে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি। ‘এখন ভালো আছে।’ ডাক্তার যেন পরিশ্রান্ত, ‘বেঁচে যাবে।’ ‘চাইল্ড?’ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে নিতে সরিৎশেখর জিজ্ঞাসা করেন।

‘তার মানে’? অবাক হন ডাক্তার।

‘ওর পেটের শিশুটির কিছু হয়নি তো! পড়ে গিয়ে কোনোরকম...’

‘স্ট্রেঞ্জ! মাস দুই-আড়াই আগে, অ্যাট দি ফার্স্ট স্টেজ, পয়জনিং করে বাচ্চাটাকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে-আপনি জানেন না? ইটস্্ এ ক্রাইম, কী করে যে আপনারা করেন!’

অন্ধকার কত কালো হয়? সরিৎশেখর টলছিলেন। অনিমেষ তখনো ঘুমাচ্ছিল। মনে হলো ছুটে গিয়ে ওর গলা চেপে খুন করেন এখন। ছি ছি ছি। লজ্জায় ঘৃণায় নিজেকে বড় ছোট মনে হতে থাকল তাঁর। কোনোরকমে টলতে টলতে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। অনেক কষ্টে অনুভাকে বলেছিলেন ব্যাপারটা। ভয় পেয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিল ও। সেদিনই অনিমেষদের জিনিসপত্র বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। অনুভাকে দিয়ে অনিমেষকে বলেছিলেন-সে যেন এ বাড়িতে কোনো দিন না আসে। তাঁর পিতৃত্ব তিনি অস্বীকার করছেন।

আজ এই তপ্ত কপালে শীতল স্পর্শ রাখার মতো বিকেলে সরিৎশেখর রেগে গেলেন আবার। কেন ও এমন করল? কী দরকার ছিল। মানুষ কতখানি পাঁকে নেমে গেলে এমন করতে পারে। কী অসুস্থ মনোবৃত্তি। অনুভার কাছে অনিমেষ বলেছিল, বিয়ের মাসখানেক আগে যখন বিয়ে কবে হবে স্থির ছিল না তখন ওরা ভয় পেয়ে এটা করেছিল।

সরিৎশেখরের মনে পড়ল, নিখিলেশ বলেছিল কোনো অসুস্থ পরিবেশ থেকে সুস্থ জিনিস সৃষ্টি হতে পারে না। অতসীর পরিবারের প্রভাব ওর ওপরে পড়বেই। সরিৎশেখর অতসীর চোখ দুটো স্মরণ করলেন। সেখানে তো কোনো দিন এর ছায়া তিনি দেখতে পাননি। ওদের ব্যাপারের পর চারদিক থেকে আক্রমণ হয়েছিল। সহ্য করেছিলেন তিনি। অনিমেষদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি। দুবরাজপুরে গিয়ে অনুভাকে চিঠি দিয়েছিল অনিমেষ। উত্তর দিতে দেননি সরিৎশেখর। না, কোনো প্রশ্রয় নয়। অতসীকে নারী বলে ভাবলে তাঁর লজ্জা করে। ঘৃণা হয়। যে মেয়ে নিজের পেটের সন্তান হত্যা করতে পারে সে তো যে কোনো মানুষই মেরে ফেলতে পারে। হয়তো কোনো দিন সরিৎশেখরের হরলিক্সের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে বিষ। কোনো বিশ্বাস নেই ওদের। স্বার্থপর অমানুষ সব।

সরিৎশেখর নিচে নেমে এলেন ছাদ থেকে। অনুভা উঠেছে। তাঁর বিছানা ঝেড়ে গুছিয়ে দিচ্ছে। সরিৎশেখর দেখলেন টেবিলে হরলিক্স ঢেকে রাখা হয়েছে। অনুভা বালিশটা ঠিক করতে করতে বলল, হঠাৎ ছাদে গিয়েছিলেন যে আজ! আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

এই এমনি। অনেক দিন পর ছাদে উঠলাম। হরলিক্সটা খেয়ে নিলেন তিনি। পাঞ্জাবি পরে লাঠিটা নিয়ে জুতোয় পা গলাতে গলাতে অনুভাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিছু আনতে হবে?’

অনুভা একটু ভাবল, তারপর মাথা নাড়ল-‘না’। চিঠিটা মেয়েকে লুকিয়ে পকেটে পুড়লেন সরিৎশেখর, ‘যাই, একটু মায়ের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।’ সরিৎশেখর বেরিয়ে এলেন। পেছন থেকে অনুভা বললেন, ‘তাড়াতাড়ি ফিরবেন। কৃষ্ণপক্ষের রাত, মোড়ের লাইটপোস্টের বাল্বটা খারাপ হয়ে আছে।’

কৃষ্ণপক্ষের রাত। সরিৎশেখর হাসলেন। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এখনো মিউনিসিপালিটির আলো রাস্তায় জ্বলেনি। ছোটকুর বয়স কত? চার কিংবা পাঁচ। তা তো হবেই। নিশ্চয়ই অতসী ধরে ধরে ওকে দিয়ে লিখিয়েছে। কী জঘন্য। না, না ওদের কারোর আসবার কোনো দরকার নেই। রাস্তায় নামলেন তিনি। লাঠিটায় ভর দিয়ে হাঁটতে থাকলেন মায়ের বাড়ির দিকে। কালীবাড়িতে রোজ কথকতা হয়। কিছুক্ষণ শোনেন তিনি রোজ। এমন সময় সরিৎশেখর ওদের মুখোমুখি পড়লেন। ওরা খেলার মাঠ থেকে ফিরছে। সেই পাঁচ-ছয় জন। সারা শরীরে ধুলোমাটি মেখে ওরা চেঁচাতে চেঁচাতে আসছিল। সরিৎশেখরকে দেখে ওরা ছুটে এলো-‘দাদু, আমাদের বড়রা খেলতে দিচ্ছে না। কাল থেকে আমরা তোমাদের বাড়ির মাঠে খেলব।’

সরিৎশেখর হাসলেন, ‘আচ্ছা, আচ্ছা।’

‘আর তুমি কালকে গোলাপোস্ট পুঁতে দেবে।’ একজন বলল।

‘আর একটা চার নম্বরের বল।’

ওরা অনেক কিছু বলছিল। সরিৎশেখর ক্রমে বিহ্বল হয়ে উঠছিলেন। একটা দমকা তৃষ্ণা পাক খেয়ে উঠছিল বুকের ভিতর। এসব কচি কচি হাতের স্পর্শ পেয়ে সরিৎশেখর ক্রমে ফিরে যাচ্ছিলেন সাতটি বছর আগে। সেসব রাতের ভাবনা এসব নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল। সব চাইতে ছোট এবং সুন্দর ছেলেটাকে ডাকলেন তিনি। সন্তর্পণে চিঠিটা বের করে হাতে দিলেন ছেলেটির। ‘পড়ো তো দাদু।’ খুব অসহায় লাগছিল তাঁকে।

ছেলেটি খুব মজা পেল এ কথায়। হয়তো ওর এই প্রথম চিঠি পড়া। অনেক কষ্টে বানান করে করে চিঠিটি পড়ল সে-শ্রীচরণেষু দাদুভাই, তুমি কেমন আছো? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। প্রণাম নিও। তোমার স্নেহের ছোটকু। বাঃ বেশ পড়তে পারো তো। আস্তে আস্তে বললেন তিনি। চিঠিটা হাতে নিলেন। কেমন বিষণ্ণ লাগছিল তাঁকে।

চিঠির শব্দগুলোর মতো ছেলেটির নরম কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন-‘আমার জন্য একটা চার নম্বরের বল এনে দেবে দাদু?’ সরিৎশেখর কোনো কথা বললেন না। তাঁর অস্বাভাবিক স্তব্ধ মুখ দেখে ভয় পেল ছেলেগুলো। নিঃশব্দে ওরা মাঠ পেরিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরল। তখন বেশ অন্ধকার। একা দাঁড়িয়েছিলেন সরিৎশেখর। সেই সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হওয়া সময়টায় সরিৎশেখর পিছু হেঁটে হেঁটে শৈশবে ফিরে যেতে চাইলেন, যৌবনে যেতে চাইলেন, প্রৌঢ়ত্বে যেতে চাইলেন। এবং শেষ পর্যন্ত কোথাও মনঃপূত না হওয়ায় সেই নরম কণ্ঠস্বরের লোভ হৃদয়ে লালন করতে করতে স্পোর্টসের দোকানের দিকে ছড়ি ঘুরিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করলেন।

 

-সমাপ্ত

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর