শিরোনাম
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
গল্প

দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল

নঈম নিজাম

দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল

প্রেম ও দ্রোহ কি একসঙ্গে বুকে ধারণ করা যায়? জীবনের কোনো কিছুতে পরোয়া ছিল না তাঁর। ছুটে বেড়াতেন বল্গাহরিণের মতো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠ। গাইতেন সাম্যের গান। বলতেন স্বাধীনতার কথা। আবার ভালোবেসে বেঁধেছিলেন ঘর। প্রেমেও পড়েছেন বারবার। পথচলায় ছিল না কোনো ক্লান্তি।

একবার ভোটেও দাঁড়ালেন। একজন কবিকে ভোট করতে দেখে উৎসাহী হলো সাধারণ ভোটাররা। দলে দলে তারা কবির পেছনে ভিড় জমাল। একজন জমিদারের বিরুদ্ধে ভোট করা মোটেও সহজ ছিল না। বল্গাহীন ছুটে চলা ঝাঁকড়া চুলের কবিকে আটকাবে কে! তিনি তো আর কোনো বাঁধন মানেন না। জাতীয় পরিষদের নির্বাচন করলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। হারলেন অল্প ভোটে। তারপর আর ভোটমুখী হননি। ভোটে কবি নজরুলের অনেক অভিজ্ঞতা হলো। বদলে যেতে দেখলেন দুই দিন আগের শুভানুধ্যায়ীদের। মানুষের মুহূর্তে চেহারা বদল তাঁকে অবাক করল। কবি ফিরলেন আবার লেখালেখিতে।

সব ধরনের লেখা লিখতেন দুই হাতে। গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, মানুষকে উজ্জীবিত করার প্রবন্ধ। কোনো কিছুই বাদ ছিল না। লেখক-জীবন মাত্র ২২ বছরের। তারপর হুট করে নির্বাক হলেন। আফসোস! আহা! তিনি আরও কিছু দিন লিখতে পারলে কী হতো? জীবনের সব অজানা দুঃখকষ্ট তাঁকে কুরে কুরে খেল। অজানা অসুস্থতা নিয়ে মানুষের পৃথিবীতে কথা বলা বন্ধ করলেন। থামিয়ে দিলেন লেখনী। কেউ প্রশ্ন করলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন। ভালোবাসার স্বপ্নচারিণী সামনে এলেও একবারের জন্য বলতেন না, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল’। গাইতেন না আর সাম্যের গান। প্রিয়ার বিরহে লিখতেন না নতুন কবিতা। হয়তো মনে মনে বলতেন-

 

‘পরজনমে দেখা হবে প্রিয়

ভুলিও মোরে হেথা ভুলিও।

এ জনমে যাহা বলা হ’ল না,

আমি বলিব না, তুমিও ব’লো না।’

 

কবি চিরতরে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন। অজানা ভয়াবহ অসুখ কবির শরীরে ভর করল। কবির কলম থেমে গেল। সভ্য দুনিয়ার মানুষের অসততা, ভণ্ডামি, নোংরামি, দ্বিচারিতা, মিথ্যাচার, হিংসা-বিদ্বেষ, মুহূর্তে রূপ বদলানো, স্বার্থপরতা স্তব্ধ করে দিল কবি নজরুলকে। তাঁর নির্বাক চাউনিতে লুকিয়ে থাকত অজানা বেদনা। ভিতরে জমিয়ে রাখা কষ্ট শেয়ার করা হতো না কারও সঙ্গে। কবি হয়তো বলতে চাইতেন অনেক কিছু, বলতে পারতেন না। এভাবে কঠিন অসুখে দীর্ঘদিন ভুগলেন। তারপর চলে গেলেন চিরতরে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট, ১২ ভাদ্র ১৩৮৩-তে কবি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন।

তখন তিনি ছিলেন ঢাকায়। ১৯৭২ সালে কবিকে নিয়ে আসেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান কবি নজরুলের লেখা চরণ থেকে নেওয়া। নেতাজি সুভাষ বসু বলতেন, ‘নজরুল আমাদের জাতীয় জীবনের সবখানে আছেন। প্রেম, দ্রোহ, কারাগার-সবখানেই নজরুল।’ আসলেই তাই। মাহে রমজান শুরু করতে হয় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আর গানের লাইন নিয়ে। আবার ঈদের খুশির আলো ঝরে তাঁর গানে। সেই নজরুলকে আমরা পাই পূজায়ও। এত শ্যামাসংগীত নজরুল ছাড়া আর কে লিখবেন?

মাত্র ২২ বছর লেখালেখি করে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। জগৎকে জানিয়ে দিয়েছিলেন-নজরুল মানে বিদ্রোহ, ঘূর্ণি, প্রেম, বিরহ, ভালোবাসার সুখছাউনি। এত বর্ণাঢ্য লেখনীর বৈচিত্র্য দুনিয়ার আর কোনো লেখকের কি আছে? না ছিল? আমাদের জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে আছেন নজরুল। চলার পথে পথে নজরুল আলোর রশ্মি ছড়িয়েছেন। তিনি লিখেছেন বিদ্রোহের কবিতা ‘বল বীর’, আবার তিনিই লিখলেন, ‘আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি...’। তিনি মুগ্ধ হয়েছেন দূর দ্বীপবাসিনীকে দেখে। আবার লাইলির ফিরে আসায় মজনুর আঁখি খোলার বাসনা তাঁর কবিতায়। তিনি লিখেছেন, ‘শাওন-রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে, বাহিরে ঝড় বহে...’। মনের অব্যক্ত কথা তিনি লিখেছেন, ‘ভীরু এ মনের কলি ফোটালে না কেন ফোটালে না-/জয় করে কেন নিলে না আমারে, কেন তুমি গেলে চলি।’

দুই হাতে গান লিখেছেন। তাঁর লেখা গান ৪ হাজারের বেশি। অনেকে বলেন, আরও অনেক ছিল, যা সংরক্ষণ করা হয়নি ঠিকভাবে। নজরুলের অনেক লেখা এখনো অপ্রকাশিত। আবার অনেক লেখা আসেনি সামনে। কবি দোল-পূর্ণিমা-রাতে ‘দোলন চাঁপা বনে’ ঘুরেছেন। হেঁটেছেন ‘গঙ্গা সিন্ধু নর্মদায়’। ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে’, ‘তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন’ নিয়ে ভেবেছেন। লিখেছেন গান।

জেলখানায় পাঠিয়েও তাঁর লেখনী থামানো যায়নি। জেলেই লিখলেন, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’। প্রকৃতি আর প্রেম তাঁকে মুগ্ধ করত। ঘুরতে পছন্দ করতেন। সব ধরনের সাহিত্য লিখে গেছেন। তাঁর কবিতা ছাড়া ঈদ-পূজা-কিছুই হয় না। তাঁর লেখা শ্যামাসংগীত দুর্গা-কালী পূজায় বাজে। ভালোবেসে যুদ্ধে গেলে রণসংগীতেও আছেন নজরুল! আবার না-পাওয়ার বেদনা তাঁকে করেছিল নিঃস্ব। মনোবেদনায় লিখেছেন, ‘দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল!’ চলার পথে ক্লান্ত হতেন। থামাতেন না পথচলা। পুত্রশোকেও টাকার জন্য গ্রামোফোন কোম্পানিকে লিখে দিয়েছেন গান। দুঃখকষ্ট ছিল, তার পরও নিজের স্বকীয়তা থেকে বের হননি। ১৯১৭ সালে কবি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন মাত্র আড়াই বছর। সে সময় শুরু হয় তাঁর লেখা। ‘হেনা’, ‘মেহের নেগার’, ‘ব্যথার দান’, ‘বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী’, ‘মুক্তি’ লিখেছিলেন সেনাছাউনিতে বসে। বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দান কবির জীবন ও চিন্তা বদলে দিয়েছিল। দ্রোহ, প্রেম, বিরহ তাঁকে জাগিয়ে দিয়েছিল মানুষের হƒদয়মন্দিরে। ‘পথ চলিতে যদি চকিতে’ চোখের জলেই অজানা ডাকের আহ্বানে থাকতেন কবি। গজল ‘তৌহিদেরই মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম/ঐ নাম জপলেই বুঝতে পারি খোদায়ী কালাম’। আল্লাহর সৃষ্টি খুঁজতে গিয়ে লিখেছেন-‘এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি/খোদা তোমার মেহেরবানী’।

সেনাবাহিনী ছেড়ে কবি চলে যান কলকাতায়। ৩২ কলেজ স্ট্রিটে বসবাস শুরু করেন। থাকতেন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করেন সাহিত্যজগতে। ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি লেখেন ‘রবিহারা’।

১৯২০ সালে তিনি শেরেবাংলা সম্পাদিত ‘নবযুগ’ পত্রিকায় যোগ দেন। শুরু করেন সাংবাদিকতা। সে সময় শরৎচন্দ্রসহ তৎকালীন সব সাহিত্যিক, সাংবাদিকের সঙ্গে কবির ব্যক্তিগত অসাধারণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। নজরুল পত্রিকায় যোগদানের পর তাঁকে উৎসাহিত করেন রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র লেখা দিয়ে।

১৯২২ সালে নজরুল প্রকাশ করেন ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা। এ পত্রিকায় তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু। আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন’। কবি বিজয়কেতন উড়িয়েছিলেন। ব্রিটিশদের ভালো লাগেনি সেই কেতন। তাঁর লেখনীর ওপর খড়্গ নেমে আসে। আটক হন কবি। তারপর পত্রিকা বন্ধ। তাঁর ‘যুগবাণী’ প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত হয়। কুমিল্লা থেকে আটক করে কবিকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়। আটকের পর আদালতে জবানবন্দি দেন। সাহিত্যের পাতায় যা এখন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ হিসেবে খ্যাত। এ জবানবন্দিতে কবি তুলে ধরেছিলেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিজেকে। কবির সেই জবানবন্দি আলোড়িত করেছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকারীদের।

বঙ্গীয় মুসলমানদের দুটি গ্রুপ ছিল নজরুলকে ঘিরে। এক গ্রুপ তাঁকে পছন্দ করত, আরেক গ্রুপ ছিল বিরোধী। এখন মুসলিম সমাজ কবিকে নিজেদের লোক দাবি করে কান্নাকাটি করে। সে সময় মুসলমানের একটি অংশই হইচই শুরু করল যখন কবি লিখলেন, ‘মোরা একটি বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান। মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তার প্রাণ’। আবার গোঁড়া হিন্দুরা খুশি ছিল না তাঁর ওপর। তারা খেপল কবির লেখা ‘মন্দির ও মসজিদ’ প্রকাশের পর। বাস্তব জীবনে কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার। তাঁর বাড়িতে পূজা হতো, আবার নামাজও হতো। এক পুত্রের নাম রাখলেন কৃষ্ণ, আরেকজনের মুহাম্মদ। এভাবে সবাই সব কিছু পারে না। নজরুল পেরেছেন। জয় করেছেন। এক ছেলেকে নিয়ে প্রমীলা দেবী বসতেন পূজায়। আরেকজনকে নিয়ে নজরুল যেতেন নামাজে। কোনো সমস্যা ছিল না। কবি দুই হাতে গজল লিখেছেন। খোদা ও নবীর বন্দনায় তাঁর লেখা গজলের অভাব নেই। আবার তিনিই লিখেছেন পূজার গান।

সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবি লড়েছেন সারাটা জীবন। এ কারণে অনেক ভোগান্তি ও সমালোচনায় পড়তে হয়েছিল। কবি সব চ্যালেঞ্জ সামলে নিয়েছিলেন। শির উঁচু করে লিখেছেন, ‘গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান’। কবি সারাটা জীবন লড়েছেন অধিকারবঞ্চিত মানুষের জন্যই। মানুষের কথা বলতে গিয়েই কারাভোগ করেছেন। জেলের ভিতরেও লেখনী থামেনি। লিখেছেন। ভারতবর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন সমর্থন করতেন। বিদ্রোহী, বিপ্লবীরা পছন্দ করত কবি নজরুলকে। নেতাজি সুভাষ বসু বলতেন, নজরুল আমাদের অনুপ্রেরণা। ফেনীর হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ও তাঁর বোন শামসুন নাহার মাহমুদ তখন ছিলেন শিক্ষায়-কর্মে পূর্ব বাংলার অগ্রসর মানুষ। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত এ পরিবারের সঙ্গেও কবির সম্পর্ক ছিল। কবি এ দুজনকে নিয়েও লিখেছেন কবিতা। যেতেন তাঁদের বাড়িতেও।

চলার পথে প্রেমের কবির স্বপ্নমিনারের বড় অংশ ছিল কুমিল্লা। তিনি লিখেছেন, ‘আমি যার নূপুরের ছন্দ বেণুকার সুর-কে সেই সুন্দর কে!’ কবির প্রেম ও দ্রোহের শহর তখনকার ত্রিপুরার কুমিল্লা। বাবুদের তালপুকুর দেখে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লিখেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছেন কান্দিরপাড়, রাণীর দীঘির তীরে। শচীন দেববর্মণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রথম তৈরি হয় কুমিল্লা শহরে। দুজন মিলে তৈরি করতেন সুরের ঝংকার। কুমিল্লায় নজরুলের হাজারো স্মৃতি। ফরিদা বিদ্যানিকেতনের বিপরীতের সেই স্মৃতির ঘরগুলো হয়তো নেই। ঐতিহ্যের কুমিল্লার বাতাস এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে নজরুলের নিঃশ্বাসের শব্দ। গবেষকদের লেখনীতে সব কিছু ভালোভাবে উঠে আসেনি। এসেছে প্রেম ও বিয়ের বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কুমিল্লার অংশ নিয়ে আরও গবেষণা হতে পারে। নজরুল কুমিল্লায় সাম্যের গান গেয়েছেন। মানুষকে শুনিয়েছেন স্বাধিকারের কথা।

কবি নজরুল অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। আটক হয়েছিলেন কুমিল্লা থেকে। সেসব নিয়ে কবির কোনো আক্ষেপ ছিল না। বরং কুমিল্লার প্রতি কবির মোহ ছিল। ভালোবেসে কুমিল্লায় বেঁধেছিলেন ঘর। পড়েছিলেন কুমিল্লার মেয়েদের প্রেমে। বিয়ের আসরে মোহরানা আর ঘরজামাই থাকার বিরোধ তাঁকে থামাতে পারেনি। দুঃখের গহিন বনে আবারও ভালোবাসার সূত্র খুঁজেছেন কুমিল্লায়। বের করেছেন নিজের হƒদয়ের স্পন্দন। কবি নজরুলের ‘এই আঁখি জল মোছো প্রিয়া’ -কুমিল্লার তখনকার নাম ছিল ত্রিপুরা।

মুরাদনগরের দৌলতপুর কবির বিরহের গ্রাম। শহর ছিল স্বস্তি ও ক্লান্তিহীন প্রেম। রাণীর দীঘির জলছায়ায় কবি নিজেকে খুঁজতেন। দৌলতপুরের সেই রাতের কষ্ট ভুলতে কবি লিখেছেন প্রেম-বিরহের অনেক কবিতা। কলকাতার প্রকাশক বন্ধু আলী আকবর খানের আমন্ত্রণে দৌলতপুরে গিয়েছিলেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। গ্রামে সবার সঙ্গে মিশে গেলেন। আনন্দ-উচ্ছলতায় কবি বাজালেন বাঁশের বাঁশরী। একদিন পুকুরঘাটে লম্বা খোলা চুলের তরুণীর ছায়া দেখলেন নজরুল। বিস্মিত নয়নে তাকালেন। দুজনের চোখাচুখি হলো। দৃষ্টিবিনিময়েই নজরুল নাম দিলেন নার্গিস। সৈয়দা খাতুন নামের মেয়েটি ছিল আলী আকবরের ভাগনি। নজরুল তাঁর ভালো লাগার কথা জানালেন। সিদ্ধান্ত হলো-নজরুলের সঙ্গে বিয়ে হবে সেই তরুণীর। বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন নজরুল। সৈয়দা খাতুনেরও আপত্তি নেই। নজরুলের বাঁশি মুগ্ধ করেছে তাঁকে। বিয়ে পড়ানোর পর সবাই মত দিলেন, চালচুলাহীন কবিকে ঘরজামাই থাকতে হবে। কোনোভাবে মুরাদনগর ছাড়া যাবে না। লেখালেখি এখানে বসেই করতে হবে। কবি সব শুনলেন। তারপর বললেন, সৈয়দা খাতুনকে নিয়ে ফিরতে চান কলকাতায়। কেউ সম্মত হলেন না। এমনকি আলী আকবর খানও না।

[চলবে]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর