শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মুসলিম বিশ্বের প্রাচীন পাঠাগার

মুসলিম বিশ্বের প্রাচীন পাঠাগার

আল-কারাউইন [ মরক্কো ]

বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রন্থাগার আফ্রিকার মরক্কোতে অবস্থিত আল-কারাউইন। হাজার বছরের বেশি পুরনো এ গ্রন্থাগার এখনো বিলিয়ে যাচ্ছে জ্ঞানের আলো। অসংখ্য মূল্যবান পান্ডুলিপির সমাহার রয়েছে এখানে। পাঠাগার নির্মাণের পর থেকে এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, পর্যটক ও ছাত্র-শিক্ষক আসতেন। ৮৫৯ সালে আরবের ধনাঢ্য নারী ফাতেমা আল ফিহরির ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফেজ নগরীতে কারাউইন নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সে বছরই মসজিদের আঙিনায় তিনি গড়ে তোলেন আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৩৫৯ সাল পর্যন্ত একটানা চালু ছিল পাঠাগারটি। তবে বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধে উপনিবেশবাদীদের দখল-বেদখলের ঘটনায় ফেজ শহর আঘাতপ্রাপ্ত হলেও আল-কারাউইন মোটামুটি অক্ষতই ছিল। কখনো কখনো বন্ধ থেকেছে বিশাল এ জ্ঞানের ভান্ডার। কয়েক প্রজন্ম ধরে পাঠাগারের রক্ষীরা এসব মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত রেখেছেন তালাবদ্ধ। কিন্তু পাঠাগারের অবকাঠামোগত সমস্যা তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পাঠাগারে প্রবেশ করায় নানা রকম ক্ষতিসাধিত হয়েছে। হঠাৎ করে আল-কারাউইনের পাটাতনের নিচ দিয়ে ধীরে ধীরে পানির স্রোত বইতে শুরু করে। ১৯১৩-৫৬ সাল পর্যন্ত ঔপনিবেশিক আমলে ফ্রান্স পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আরেকবার ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও সনদ বিতরণ বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৫৬ সালে মরক্কো স্বাধীনতা লাভ করার পর কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন বাদশাহ মুহাম্মদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত, পদার্থ, রসায়নসহ বিভিন্ন বিজ্ঞান বিভাগ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলেন। ১৯৫৭ সালে খোলা হয় নারী শিক্ষার্থী বিভাগ। ১৯৬৩ সালে কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে মরক্কোর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি আল-কারাউইন পাঠাগারকে বাঁচাতে নতুন পদক্ষেপ নেয় মরক্কোর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। পাঠাগারটিকে পুনরায় চালু করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তারা নিয়োগ দেয় আজিজা চাউনি এবং তাঁর স্থাপত্য দলকে। প্রকৌশলীরা ভবনের ভিত্তি পুনরায় স্থাপন করেছেন। সেখানে নতুন করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করেছেন এবং ভবনের সবুজ রঙের ছাদের প্রতিটি টাইলস আগের মতো দৃষ্টিনন্দন রূপে তৈরি করেছেন।

 

মাকতাবা দারুল উলুম দেওবন্দ [ ভারত ]

ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দে অবস্থিত মাকতাবা দারুল উলুম পাঠাগার। দেওবন্দ মাদরাসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বিখ্যাত এই পাঠাগারটি। মূলত মাদরাসার ছাত্রদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য মাকতাবা দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এই নিজস্ব পাঠাগারটি স্থাপন করে। মাদরাসার পুরাতন দারুল হাদিসের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দ্বিতীয় তলায় এর অবস্থান। পাঠাগারটি প্রথমে ছোট পরিসরে হলেও এখন এতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে কিতাবের সমাহার। এমন কোনো বিষয় বাদ নেই, যার অন্তত একটি কিতাব বা পান্ডুলিপি নেই এখানে। আনুমানিক লক্ষাধিক কিতাব রয়েছে পাঠাগারটিতে। বাদশাহ আলমগীরের হাতে লেখা একটি কিতাবও আছে। আছে বিভিন্ন বিষয়ের নকশাসমৃদ্ধ দেয়ালিকা।

 

রাজা লাইব্রেরি রামপুর [ ভারত ]

ভারত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থাগারটি অবস্থিত ভারতের উত্তর প্রদেশে। তখন ছিল মুসলিম নবাব সাইয়েদ মুহাম্মদ সাইদ খানের শাসনামল (১৮৪০-৫৫)। তাঁর শাসনামলে গৌরবপ্রাপ্ত রাজকীয় গ্রন্থাগারের নাম ছিল ‘কুতুবখানা রিয়াসত-ই-রামপুর।’ ওই সময় এই কুতুবখানার জন্য ১ হাজার ৪০০ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বই কেনা হয়। ১৮৭৯ সালে এই পাঠাগারে ৯ হাজার ৩৪৭টি ও ১৯২৭ সালে ২৪ হাজার ১১৭টি বই থাকার তথ্য পাওয়া যায়। বর্তমানে এখানে বইয়ের সংখ্যা লাখের কাছাকাছি। সংরক্ষিত আছে ১৫ হাজার বিরল পান্ডুলিপিও। এই সংগ্রহশালায় থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ হলো-হজরত আলী (রা.)-এর হাতে লেখা পবিত্র কোরআনের একটি কপি ও উর্দু ভাষায় পবিত্র কোরআনের প্রথম অনুবাদের পান্ডুলিপি। এ ছাড়া সংস্কৃত, উর্দু, পশতু, তামিল ভাষার বহু বই রয়েছে এই গ্রন্থাগারে। ভারত স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একটি ট্রাস্টের হাতে এই গ্রন্থাগারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালের জুলাই থেকে ভারত সরকার প্রাচীনতম এই গ্রন্থাগারের দায়িত্ব নেয়।

 

সর্বশেষ খবর