শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কেট শপ্যাঁ ও দ্য স্টোরি অব অ্যান আওয়ার

কেট শপ্যাঁ ও দ্য স্টোরি অব অ্যান আওয়ার

মার্কিন ছোট গল্পকার ও ঔপন্যাসিক কেট শপ্যাঁ (ইংরেজি : Kate Chopin) এর জন্ম ১৮৫০ সালে। ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত দ্য অ্যাওয়েকনিং (The Awakening) উপন্যাসটি তার সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম। এ ছাড়াও তিনি অনেকগুলো ছোটগল্প লেখেন। ১৯০৪ সালে তার মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই তাকে তার সময়ের অন্যতম সেরা সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচনা করা হতে থাকে। বর্তমানে তাকে অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের ক্যাথলিক প্রতিবেশ থেকে উঠে আসা নারীবাদী (ফেমিনিস্ট) লেখিকাদের অন্যতম পূর্বসূরি বলে মনে করেন। তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য অ্যাওয়েকনিং’ শুরুতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যথেষ্ট বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হয়। মূলত এ উপন্যাসে তিনি যে-রকম বলিষ্ঠরূপে নারী যৌনতা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, মাতৃত্ব, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, সমসাময়িক সমাজ তা তখনো সেভাবে গ্রহণে প্রস্তুত ছিল না। বিরূপ সমালোচনায় তিনি তখন এতটাই আহত বোধ করেন যে, এরপর আর তিনি উপন্যাস না লিখে ছোট গল্পেই সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। ‘দ্য স্টোরি অব অ্যান আওয়ার’ গল্পটির প্রকাশকাল ১৮৯৬।

হ ‘দ্য স্টোরি অব অ্যান আওয়ার’ (এক প্রহরের গল্প) জীবনের এক বিড়ম্বনার গল্প। এর একটা বিদ্রƒপাত্মক সমাপ্তি রয়েছে : মিসেস ম্যালার্ড যখন বেঁচে থাকতে শুরু করেন, ঠিক তখনই মারা যান। স্বামীর মৃত্যু সংবাদটা দুঃখজনক, তা সত্য। মিসেস ম্যালার্ড খবরটি শুনে প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করেন, কিন্তু শিগগিরই তিনি এর মাঝে আনন্দ খুঁজে পান। তাই রিচার্ডসের ‘দুঃখজনক বার্তা’ যদিও রিচার্ডসের চোখে দুঃখজনক, অন্যদিকে এটি মিসেস ম্যালার্ডে জন্য একটি সুখ-বার্তা।

হ গল্পের শেষে আরেকটি বিড়ম্বনা হলো ডাক্তারদের রোগ নির্ণয়। তারা বলেন যে, তিনি ‘হৃদরোগে মারা যান-তাকে যে হত্যা করেছে, সেই ঘাতকের নাম আনন্দ।’ এক অর্থে তারা সঠিক। মিসেস ম্যালার্ড গত এক প্রহরের জন্য একটি দুর্দান্ত আনন্দ অনুভব করেছেন। তবে একটা বিষয়ে ডাক্তাররা অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে ভুল বুঝেছেন। যে আনন্দ তাকে হত্যা করেছে, সেটা তার স্বামীকে জীবিত দেখার আনন্দ নয়, বরং শেষ প্রহরে তিনি সম্ভাব্য স্বামীহীন পৃথিবীতে বাঁচবার পরিপূর্ণ মুক্ত জীবন-যাপনের যে-দুর্দান্ত আনন্দ অনুভব করেছিলেন, সেই ভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটবার শোকোঘাতই তার আকস্মিক মৃত্যুর কারণ। স্বামীর অবর্তমানে তিনি আর কারও ইচ্ছার অধীন নন। তিনি পরিপূর্ণ মুক্ত, স্বেচ্ছাধীন। যে কল্পিত ভুবনে বাঁচবার সুখস্বপ্ন তিনি বিচরণ করেছেন, সেই সাজানো জগতের রূপকল্প যখন নিমিষেই ছত্রখান হয়ে যায় তার স্বামীর ফিরে আসা তথা জীবিত থাকার মধ্য দিয়ে, তখন স্বপ্নভঙ্গের সেই আকস্মিক শোক বহনের মানসিক শক্তি তার ছিল না। এভাবে বিষাদের মাঝে অনাগত দিনের কল্পিত সুখের পলকা কাঠামো পলকেই ক্ষণিকের স্ফুলিঙ্গের মতো শূন্যে মিলিয়ে যায়, যার সঙ্গে সংগত করে মিসেস ম্যালার্ডের অকাল জীবনাবসান।

সর্বশেষ খবর