শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
কোথাও

কবিতা

কাজী মাহমুদুর রহমান

কবিতা

কেউ কি বলতে পারো কোথাও যাবার পথ কোনখানে, কোথাও- কোথাও?

আমি শুনেছি এমন একটা জায়গা আছে যার নাম- কোথাও।

কিন্তু আমি জানি না এটা কোনখানে কোথায়?

 

আমি শুধু সে পথের খোঁজে হেঁটে চলি ক্লান্ত পায়ে।

অবিরাম হেঁটে চলি রূপকথার গল্পের মতো।

বাউল কিংবা পথ গাহকের গানে শুনেছি সে এক নিশ্চিন্তপুর,

সেখানে ছোট এক বাড়ি আছে, আছে একটি মাত্র ঘর, দাওয়া আর উঠোন।

এলোমেলো দূর্বাঘাসের জঙলা,

শ্যাওলা সবুজ উঠোনে ক্লান্তিভরে শুয়ে থাকে একটা বিষণ্ণ কুকুর,

সোঁদালিগন্ধা মাটির দাওয়ায় একটা বিড়াল সেও আলস্যে ঘুমায়,

শুধু ছুটোছুটি করে একটা ক্ষুধার্ত ইঁদুর।

সে খুঁজে খুঁজে মাটি পোকা খায় বিড়ালটাকে পাত্তা দেয় না এতটুকুও।

 

বাড়িটার চালে কবেকার সাদা চালকুমড়ো

হাড়কেঠো শবের মতো শুয়ে আছে কতকাল,

তুলসী গাছটাও কঙ্কাল,

পাতকুয়োটাও শব্দহীন, পানি আছে কি নেই কিছু জানা নেই,

ভাঙা উনুনে আগুন নেই, হাঁড়িকুড়ি নেই,

শূন্য মাটির কলস পড়ে আছে একা স্মৃতি হয়ে সর্বজয়ার ভাঙা বসতে।

 

কতকাল শোনা যায় না হরিহরের ফিরে আসা,

তার আচমকা ডাক, ওগো কোথায় গেলে?

শোনা যায় না অপুর কোমরের ঘণ্টির শব্দ, তার আনন্দ উল্লাস,

শোনা যায় না হতচ্ছাড়ি, চঞ্চলা দুর্গার পায়ের আওয়াজ।

তবুও যেন আমি বাতাসে শুনতে পাই দুর্গার বিষাদ সংগীত ধ্বনি,

রোগশয্যায় শুয়ে অপুকে বলে,

“আমি সেরে উঠি তারপর দুজনে আবার দেখতে যাবো

সেই চলন্ত রেলগাড়িটা সাদা কাশবনের ওই পারে।’’

স্বপ্নের রেলগাড়িটা তার আর দেখা হয় নাই,

চলে গেছে সে একা, চিরতরে কোথাও অন্য কোনোখানে।

 

আমি রোদ, বৃষ্টিতে হাঁটি, শীত, গ্রীষ্মে হাঁটি, অবিরাম হেঁটে চলি স্বপ্নের ভেতর।

কেন? কীই বা কারণ- আমি জানি না উত্তর।

তবু খুঁজে পেতে চাই সেই মেটে পোড়োবাড়ি, দাওয়া আর উঠোন-

যেখানে আমার অপেক্ষায় আছে সর্বজয়া, দুর্গা এবং অপুর সংসার।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর