উড়ন্ত ট্যাক্সিতে করে চলাচল করবে সাধারণ মানুষ খুব শিগগিরই। ধরুন সকালে স্কুল বা অফিসে যাওয়ার জন্য বাইরে বের হলেন। স্মার্টফোনের ইশারায় একটি ড্রোন উড়তে উড়তে চলে এলো আপনার সামনে। তাতে উঠে উড়তে উড়তে আপনি পৌঁছে গেলেন গন্তব্যস্থলে—
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় মানুষ আজ অনেক উন্নত। তাই তো এখন মানুষ ছাড়াই বিমান থেকে শুরু করে টেক্সিক্যাব পর্যন্ত সার্ভিস দিচ্ছে ড্রোন। সম্পূর্ণ কম্পিউট করা এই যন্ত্রটি দিয়ে গবেষণাও এগিয়ে যাচ্ছে অনেকদূর। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ড্রোন কোনো বিজ্ঞানসম্মত নাম নয়। এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। তার মধ্যে ‘মনুষ্যবিহীন উড়ন্ত যান’ অন্যতম। এর জন্মই মূলত সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য। আইডিয়া আসে ক্ষেপণাস্ত্র থেকে। ১৮৫০ সালে অস্ট্রিয়ানরা যুদ্ধের সময় অনেকগুলো বেলুনে বিস্ফোরক দ্রব্য বোঝাই করে সেটাকে উড়িয়ে ভেনিসে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কয়েকটা ঠিকমতো কাজও করেছিল বটে, তবে কিছু বেলুন আবার বাতাসে ঘুরে গিয়ে অস্ট্রিয়ানদের ওপরেই পড়েছিল। সেই থেকে ভাবনা। নিকোলা টেসলা সর্বপ্রথম ১৯১৫ সালে মনুষ্যবিহীন সামরিক বিমানের ধারণা দিয়েছিলেন।
১৯৩৫ সালে প্রথম রিমোট কন্ট্রোলড উড়ন্ত যান নির্মাণে সফল হন হলিউড তারকা এবং শৌখিন নির্মাতা রেজিন্যান্ড ড্যানি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১২ সালে একটি আইন অনুমোদন করেন। আইনে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে (এফএএ) নির্দেশ দেওয়া হয় যেন ২০১৫ সালের মধ্যে আমেরিকার আকাশ ড্রোন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে আমেরিকার কয়েকটি স্থানের আকাশে ড্রোন চালানোর অনুমতি রয়েছে।
একটা সময় ছিল যখন ড্রোন বিষয়টা মানুষের কাছে অতটা পরিচিত ছিল না। তখন দুই ধরনের মানুষ ড্রোন নিয়ে কাজ করত। প্রথম দলটি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এরা মজা করে রেডিও-নিয়ন্ত্রিত বিমান ও হেলিকপ্টার ওড়াত। অপর দলটি হলো, সেনাবাহিনী। এরা জেনারেল অ্যাটমিকস প্রিডেটর-এর মতো মানুষবিহীন বিমানের সাহায্যে নজরদারির কাজ চালাত।
এরপর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেখা যায় মার্কিন বিমান বাহিনীর কাছে ড্রোন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়। প্রিডেটর এবং তার চেয়েও বড় একটি মানুষবিহীন পাহারাদার বিমানকে অস্ত্র সজ্জিত করল পেন্টাগন। তাতে বসানো হয় ক্ষেপণাস্ত্র। এর উদ্দেশ্য, নিজের জায়গায় বসেই এসব বিমানের পরিচালক হাজার মাইল দূরের কোনো লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে কিংবা কোনো কিছুর ওপর নজরদারি করতে পারা যায়। তারপরই বিভিন্ন বিমান কোম্পানিগুলোতে ড্রোন বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। এক সময় ড্রোনের আকার ছোট হতে থাকে। তাতে যোগ হতে থাকে ন্যানো প্রসেসর, আরও স্পর্শকাতর সেন্সর, হাই রেজ্যুলেশনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার এলো পেসেঞ্জার ড্রোন।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট এনগেজেটের খবরে প্রকাশ করা হয়— গত তিন বছর ধরে যাত্রীবাহী ড্রোনের নকশা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ইহ্যাং, এয়ারবাস, উবারের মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদেরই প্রচেষ্টায় গত আগস্ট মাসে দুবাইতে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে বেশ কৃতিত্বের সঙ্গেই সফল হয়েছে যাত্রীবাহী ড্রোন বা পেসেঞ্জার ড্রোন। অনেকেই এই যাত্রীবাহী ড্রোন প্রযুক্তিকে বলছে উড়ন্ত ট্যাক্সি।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ম্যাশেবলের খবরে জানা যায়, যাত্রীবাহী এই ড্রোন উড়বে ভার্টিকাল টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং প্রযুক্তিতে। অর্থাৎ ড্রোনটির ওঠানামার জন্য প্রয়োজন হবে না রানওয়ের। উলম্বভাবেই এই উড়ন্ত ট্যাক্সি সরাসরি ওঠানামা করতে পারবে। ছোট একটি গাড়ির আকারের এই উড়ন্ত ট্যাক্সির আসনের সংখ্যা মাত্র দুটি। আকাশে উড্ডয়নের জন্য এতে রয়েছে ১৬টি ইঞ্জিন এবং রটরস। তবে এই উড়ন্ত ট্যাক্সির রয়েছে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চল। মূলত আশপাশের ২০ মাইলের মধ্যে উড়তে সক্ষম প্যাসেঞ্জার ড্রোন বা উড়ন্ত ট্যাক্সি। যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫০ মাইল।
আর এই প্যাসেঞ্জার ড্রোন পরিচালনার জন্য কোনো চালক থাকবে না বা প্রয়োজন হবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি নির্দিষ্ট একটি স্থানে বসেই পরিচালনা করা সম্ভব। তবে এটি পরিচালনার জন্য চতুর্থ প্রজন্ম বা ফোর্থ জেনারেশন বা ফোরজি ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন পড়বে নিরবচ্ছিন্ন নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য। তবে আপাতত এটির পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে চালক।
উড়ন্ত ট্যাক্সিতে করে চলাচল করবে সাধারণ মানুষ খুব শিগগিরই। ধরুন সকালে স্কুল বা অফিসে যাওয়ার জন্য বাইরে বের হলেন। স্মার্টফোনের ইশারায় একটি ড্রোন উড়তে উড়তে চলে এলো আপনার সামনে। তাতে উঠে উড়তে উড়তে আপনি পৌঁছে গেলেন গন্তব্যস্থলে। তবে এই উড়ন্ত ট্যাক্সিতে বা প্যাসেঞ্জার ড্রোনে চেপে আকাশে ঘুরে বেড়াতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। কারণ এখনো প্রযুক্তিগত ও কারিগরি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে প্যাসেঞ্জার ড্রোন বা উড়ন্ত ট্যাক্সি। এই প্রযুক্তিগত ও কারিগরি উন্নয়নের জন্য আরও তিন বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সাল নাগাদ দুবাইতে চালু হতে যাচ্ছে চালকবিহীন এই উড়োযান সেবা। এর মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে ড্রোন গবেষণা, নির্মাণ ও প্রবর্তনের ভাবনা।