শনিবার, ২২ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শখের বসে এখন তারা ব্যবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

শখের বসে এখন তারা ব্যবসায়ী

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার লস্করপুর এলাকার শেখ সামিয়া রহমান। সাধারণ গৃহবধূ। তবে এখন গৃহবধূ থেকে হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। প্রযুক্তির কল্যাণে ২০১৪ সালে গৃহবধূ হওয়া সামিয়া ২০২১ সালে হয়ে গেলেন ব্যবসায়ী।

সামিয়া রহমান ‘চায়ের ফাঁকে কেনাকাটা’ নামক একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে বিক্রি করেন ব্লক, বাটিক, হ্যান্ডপেইন্টেড ড্রেস, মধু, চা পাতা ও সিজনাল আচার। স্বামী, সন্তানের দেখাশোনা, গৃহস্থালির কাজ করেও এই পেইজের মাধ্যমে তিনি তার প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে প্রতি মাসে আয় করছেন ২০ হাজার টাকার উপরে।

শেখ সামিয়া রহমান বলেন, আমি একজন গৃহিণী ছিলাম। স্বামী-সন্তান নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু বরাবরই আমার মনে হতো স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। নিজের আলাদা পরিচয় থাকা প্রয়োজন। সেই তাগিদে ২০১৯ সালে ফেসবুক পেজের ‘চায়ের ফাঁকে কেনাকাটা’ মাধ্যমে ব্লক, বাটিক, হ্যান্ডপেইন্টেড ড্রেস সেইল করা শুরু করি। প্রথমে অন্যের দোকান থেকে কাপড় এনে বিক্রি করতাম। ধীরে ধীরে নিজের তৈরি পণ্য সেইল দেওয়া শুরু করি। সামিয়া বলেন, আমি কোনো পুঁজি ছাড়া একদম শূন্য হাতে কাজ শুরু করেছিলাম। আর এখন কম করে হলেও মাসে ২০ হাজার টাকা সেইল থাকে। গত রোজার ঈদে প্রায় ৬০ হাজার টাকা সেইল দিয়েছি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এই রোজার ঈদকে কেন্দ্র করেও আমি প্রায় ৫০ হাজার টাকার পণ্য সেইল দিয়েছি। সামিয়ার মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে স্বল্প পুঁজিতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন নারীরা। কোনো কোনো নারী তো আবার শূন্য থেকে হয়েছেন লাখপতি।

এরকমই একজন চমনা চৌধুরী। শুধু শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি করে হয়েছেন লাখপতি। তিনি জানান, ২০২০ সালে আগস্ট মাসে সুরুচি ঘর নামে একটি ফেসবুক পেইজ থেকে দেশীয় জামদানি শাড়ি, তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস বিক্রি শুরু করেন। চলতি বছর মে মাস পর্যন্ত তার সেইল হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সুরুচি ঘরের পরিচালক চমনা চৌধুরী বলেন, গত বছর যখন করোনা শুরু হলো তখন খুব বিপদে পড়ে যাই। স্বামী প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করেন। তার আয়ও বন্ধ প্রায়। করোনার কিছুদিন আগে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে সেটা নিয়েও বিপদে পড়ি। একদিকে ছেলের সেমিস্টার ফি জমা দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনের ভাড়া দেওয়া, আবার সংসার খরচ তো আছেই। সব মিলিয়ে অনেক সমস্যায় পড়ে যাই। তখন তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে অনলাইন ব্যবসার ব্যাপারে জানি। তারপর আমার ফেসবুক পেইজ ‘সুরুচি ঘর’ থেকে কাজ শুরু করি। তিনি বলেন, করোনা মহামারী না এলে এই আর্থিক সমস্যায় পড়তাম না আর এই অনলাইন ব্যবসাও শুরু করতাম না। এই মহামারীর সময়ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আমি ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। এই অনলাইন ব্যবসা আমাদের নারীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্যমতে, এখন দেশে ফেসবুক পেইজকে কেন্দ্র করে উদ্যোক্তা আছেন প্রায় চার লাখের উপরে। এর মধ্যে সাড়ে তিন লাখ পেজ চালাচ্ছেন নারীরা। চলমান করোনাকালে পড়ালেখা, সভা, সেমিনার, কেনাকাটাসহ বেশিরভাগ কাজই এখন হচ্ছে অনলাইনে।

সর্বশেষ খবর