শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া-২০২১

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কিশোয়ারের বাজিমাত

জামশেদ আলম রনি

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কিশোয়ারের বাজিমাত

বিশ্বের রান্নাবিষয়ক জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোর মধ্যে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। দেশটির নর্দার্ন টেরিটরিতে চলছে এই প্রতিযোগিতার ত্রয়োদশ পর্ব। এবারের পর্বের সেরা আকর্ষণ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী। বাংলাদেশি হরেক রকম রান্নার জাদুতে দর্শক থেকে বিচারক, সবাইকে মাতিয়ে তুলছেন তিনি। ইতিমধ্যে দেশটির মূলধারার গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কিশোয়ার। সর্বশেষ প্রতিযোগিতায় তিনি এই আসরের সেরা ৪-এ উঠে এসেছেন। তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী দেশ-বিদেশের বাংলাদেশিরা।

গত ১৯ এপ্রিল শুরু হয় এবারের পর্ব। কিশোয়ার শুরু থেকেই বিদেশের মাটিতে তুলে ধরছেন বাংলাদেশের প্রচলিত সব খাবার। এখন পর্যন্ত হতাশ হতে হয়নি বিচারকদের কাছ থেকে। অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই বিচারকদের কাছ থেকে কুড়িয়েছেন ব্যাপক প্রশংসা, পেয়েছেন ভালোবাসা। অনুষ্ঠানের শুরুতে বরাবরের মতো কিশোয়ার ছিলেন অনেক বেশি চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। সেরা ৪-এ উঠে কিশোয়ার রেঁধেছেন জাউ ভাত। সঙ্গে ছিল লাউ চিংড়ির স্যুপ এবং সামুদ্রিক মাছের তরকারি। এ আসরে চেয়েছিলেন তার মা যেন তাকে নিয়ে গর্ব করেন। কারণ যেসব রান্না করেছেন সবকিছু তার মায়ের কাছে শেখা। তার মায়ের করা এই রান্না বেশ দুর্দান্ত। খাবার পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে বিচারকরা তার বেশ প্রশংসা করেন। কিশোয়ারের সন্তানরা তার মতো মা পেয়ে এবং তার মা কিশোয়ারের মতো মেয়ে পেয়ে অনেক সৌভাগ্যবান বলেও মন্তব্য করেন বিচারক জক জনফ্রিলো। উত্তরে কিশোয়ার অনেক আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং বলেন, ‘তার মা অত্যন্ত সরল। তাই ক্যামেরার সামনে তাকে এনে বলানো সম্ভব নয় যে তিনি সত্যি গর্বিত তার মেয়েকে নিয়ে।’ কিশোয়ারের রান্না খেয়ে দেখার পর জক তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘খাবারগুলো সত্যি অনেক সুস্বাদু এবং মসলা থেকে শুরু করে সবকিছু সুষমভাবে দেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘মসলা মেশানোর কৌশল খুবই অসাধারণ।’ একজন শেফ সারা জীবন এমন পন্থা শেখার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন এবং কিশোয়ার তা করেছেন মাত্র ৭৫ মিনিটে। যা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে তাদের কাছে। কিশোয়ার কখনো রেস্টুরেন্ট খুললে সেখানে বিচারক অ্যান্ড্রু অ্যালেন বারবার যাবেন বলেও সাহস জোগান তাকে। অন্য দুই বিচারকও এতে সায় দিয়ে কিশোয়ারকে ধন্যবাদ জানান। গত আয়োজনে কিশোয়ারের মনোবল বাড়াতে অনুষ্ঠানে ভিডিওকলে যুক্ত হয়েছিলেন তার মা ও ছেলেমেয়ে। এক পর্যায়ে মা ও সন্তানদের দেখে কিশোয়ার কেঁদে ফেলেন। তিনি কালা ভুনার রেসিপি দিয়ে মাতোয়ারা করেন মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার বিচারকদের। তারপর বিশ্বজয় করে তার রান্না মাছের ঝোল। পরবর্তীতে বাংলাদেশের কিশোয়ার চৌধুরী বিচারকদের প্রশংসা কুড়ান আলুর দমের ফুচকা, চটপটি আর সমুচা বানিয়ে। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার এবারের আসরের পুরস্কার আড়াই লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার। সেরা ৪-এ এলেও কিশোয়ারকে জিততে হলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশ-বিদেশের সব বাংলাদেশি কিশোয়ার চৌধুরীর জন্য ভালোবাসা ও শুভকামনা জানাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নের বাসিন্দা কিশোয়ার চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায়। পেশায় একজন ‘বিজনেস ডেভেলপার’। দুই সন্তানের মা কিশোয়ার সন্তানদের জন্য বাংলাদেশি খাবার রান্না করতে পছন্দ করেন। পরিবারের কাছ থেকে শিখেছেন নানা রেসিপি। কিশোয়ার তার পারিবারিক রান্নার সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত। কিশোয়ারকে নিয়ে বাংলাদেশিদের মতোই গর্বিত তার পরিবারও। এদিকে কিশোয়ার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলেও ভারতের গণমাধ্যমে সম্প্রতি তাকে ভারতীয় বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কিশোয়ার চৌধুরীর বাবা বাংলাদেশি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।  অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়া এবং পরিচিত মুখ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কামরুল হোসাইন চৌধুরী ও লায়লা  চৌধুরীর কন্যা কিশোয়ার।

সর্বশেষ খবর