সবুজ মাঠের বুকচিরে সারি সারি দুই কিলোমিটার তালগাছ। এটি এখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ দৃশ্যপট ও এক অনন্য বিনোদন কেন্দ্র। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলার সীমানা পেরিয়ে অন্য জেলা থেকে প্রতিদিন ভ্রমণপিপাসুরা আসছেন এখানে। দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। নওগাঁর নিয়ামতপুরের হাজিনগর ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কটির নাম ঘুঘুডাঙ্গা। নওগাঁ-মহাদেবপুর-শিবপুর-পোরশা সড়কের কাপাষ্টিয়া মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বয়ে গেছে সড়কটি। ওই মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে দুই কিলোমিটার জুড়ে সড়কের দুই পাশে সারি সারি রয়েছে তালগাছ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দৃষ্টিকাড়ায় ক্রমেই বাড়ছে ভিড়। ইতিমধ্যে ঘুঘুডাঙ্গার সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। কাজেই জেলার বাইরে থেকেও আসছেন দর্শনার্থীরা। প্রতিদিন হাজারো মানুষের প্রয়োজন মেটাতে বসানো হয়েছে নানা খাবারের দোকান। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। এ ছাড়া দুই কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে সারি সারি তালগাছের ফাঁকে ফাঁকে বসেছিল শুক্রবার হরেক রকমের পিঠার স্টল। সড়কের মাঝখানে চলছে লোকগান আর নৃত্য। স্টলগুলোতে থরে থরে সাজানো কানমুচড়ি, ফুলঝড়ি, মুইঠা, পুলি, পাতা নকশিসহ হরেক রকমের পিঠা। শীত আসার আগেই গানের সুরে সুরে নানা রকমের পিঠার স্বাদ নিতে মেতে উঠেছিল ঘুঘুডাঙ্গা তালতলী সড়কে হাজারো মানুষ। শুক্রবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনই এক জমজমাট তাল পিঠার উৎসব দেখা গেল ঘুঘুডাঙ্গার তালতলী সড়কে।
স্থানীয়রা জানায়, শুধু সৌন্দর্যের দিক দিয়ে নয়; তালগাছ আমাদের অনেক উপকারে আসে। তালগাছ ও তাল ফলের বহুবিধ ব্যবহার ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় দেশীয় ফলের মধ্যে তালের অবস্থান অনেক উপরে। তাল দিয়ে বিভিন্ন রকমের তাল পিঠা তৈরি করা হয়। এমনকি গরমের দিনে লোডশেডিংয়ে তাল পাখার জুড়ি নেই। তারা মনে করেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের এই উদ্যোগটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। নিয়ামতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৮৫-৮৬ সালে যখন হাজীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন তখন তিনি তাল গাছগুলোর চারা রোপণ করেছিলেন। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে সারি সারি তাল গাছের চারাগুলো লাগানো হয়েছিল সেই সময়। যা আজ বরেন্দ্র অঞ্চলের দৃষ্টি কেড়েছে। তাই তিনি এই কৃতিত্বের দাবিদার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, যেহেতু এখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের আনাগোনা। তাই বসে একটু জিরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে কয়েকটি সিমেন্টের বেঞ্চ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আর স্থানটিকে পুরোপুরি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা শিগগিরই হাতে নেওয়া হবে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমি আবেগ আপ্লুত। এত মানুষ নিজের চোখকে ধরে রাখতে পারছি না। চোখে পানি এসে গেছে। মানুষ কাঁদে এক দুঃখে, আর এক সুখে। আমার চোখে পানি এসে গেছে আজ সুখে। হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আশির দশকে হাজিনগর-ঘুঘুডাঙা দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এই তালগাছগুলো আমি লাগিয়েছিলাম। আজকে সেসব তালগাছ বড় হয়ে সড়কটিকে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। মানুষজন এই সড়ক দিয়ে যখন যায় তখন তালগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটু প্রশান্তি পায়। আমি নিজেও এলাকায় আসলে তালগাছগুলো দেখতে আসি। একটা অন্যরকম প্রশান্তি অনুভূত হয়। মন্ত্রী আরও বলেন, সড়কটি পর্যটকদের কাছে পরিচিত করতে স্থানীয় চেয়ারম্যান তালপিঠা উৎসবের যে আয়োজন করেছে এটা একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে মানুষ একটা নির্মল বিনোদন পাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রামবাংলার হারিয়ে যেতে বসা অনেক ধরনের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এ প্রজন্ম।