শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
অনুপ্রেরণীয়

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সাফল্যে...

আবদুল কাদের

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সাফল্যে...

নাম ধরে ডাকলে এরা সাড়া দেয় না। ভাবের আদান-প্রদান এদের কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। অনেকটা নিস্তব্ধ এদের পারিপার্শ্বিক আবহ। পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করা, একই কাজ বারবার করা, একই খেলা বারবার খেলা এদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক কল্পনা সবকিছু অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এদের জীবনে। সমাজে এ ধরনের শিশুদের ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু’ বলে থাকে। এরা সমাজেরই একজন, এবং এদেরও আছে ভবিষ্যৎ।

বিশেষজ্ঞরা শিশুদের এ ধরনের সমস্যাকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বলেন। মূলত মায়ের গর্ভ থেকে অটিজমের বৈশিষ্ট্য নিয়েই একটা শিশু জন্ম নেয়। অর্থাৎ অটিজম একটা জন্মগত ব্যাপার। তাই শিশুর বয়স একটু একটু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পেতে থাকে এই লক্ষণগুলো। আর এসব শিশু যত বড় হতে থাকে, মা-বাবার কপালে ততই পড়ে চিন্তার ভাঁজ। এ ধরনের শিশুদের জীবন রাঙাতে, চলার পথকে সহজ আর ছন্দময় করে তুলতে প্রয়াসী ‘স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুল’। সেল্ফ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নিরন্তর নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলটি প্রি স্কুল থেকে মেন স্ট্রিম স্কুলে পড়ার সুযোগ করে দেয়। সমাজের নানা স্তর থেকে ছেলেমেয়েরা আসে এই স্কুলে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ফিরে পেতে, অন্য ১০টি ছেলেমেয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে, নানা বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে।

প্রতি একটি শিশুর জন্য এই স্কুলে একজন শিক্ষক নির্ধারিত। নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটি, গেম ও বিভিন্ন সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার শুরু। ক্লাসে মেন স্ট্রিম স্কুলের কারিকুলাম মেনে চলা হয় ও সে অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক ব্যবহৃত হয়। স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুলের নিরলস চেষ্টায় এখন পর্যন্ত বহু শিশু প্রি স্কুলে পাঠ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। যাদের মধ্যে বোর্ডের পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীও রয়েছে। কথা বলতে না পারা শিশুটি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের শিশুদের প্রতিযোগিতার মঞ্চে গানও পরিবেশন করেছে। এমনকি উক্ত প্রতিযোগিতায় পরপর তিন বছর প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পুরস্কারও অর্জন করেছে। এভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলছিলেন স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুলের প্রিন্সিপাল মাহমুদা আকতার। ২০১০ সালে মাত্র পাঁচটি ছেলেমেয়ে নিয়ে স্কুলটির যাত্রা। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি এক যুগে পা রেখেছে। শিশুদের পাড়াশোনা, বিকাশমূলক থেরাপি ও কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি আর্ট, হোম ওয়ার্ক, ইন্টারস্কুল মিট, এডুকেশনাল ট্রিপেরও ব্যবস্থা করে এই স্পেশাল স্কুলটি। স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুলের প্রিন্সিপাল মাহমুদা আকতার বলেন, আমরা মূলত আর্লি ইন্টারভেশন নিয়ে কাজ করি। আড়াই থেকে ছয় বছরের বাচ্চাদের ডেভেলপমেন্ট দ্রুত সম্ভব। মোটিভেশন একটাই- শিশুটি যেন মেন স্ট্রিম স্কুলে যেতে পারে। ফিরে পায় সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন।

গবেষণায় দেখা গেছে, আর্লি ইন্টারভেশন নেওয়া গেলে অটিজম নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশু প্রাপ্তবয়সে অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পারে। এ ধরনের শিশুর প্রধান চিকিৎসা স্পিচ থেরাপি, নিওরোবিহেভিওরাল থেরাপি। সে ধারা মেন স্পেশাল স্কুলটি অকোপেশন থেরাপি, স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ থেরাপি, সাইকো থেরাপি এবং ডাক্তারের সহায়তায় শিশুদের বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন, কাউন্সেলিং করেন। তাদের শেখানো হয় ডেইলি হেলদি লাইফস্টাইল, ম্যানারিজমসহ নানারকম ভোকেশনাল ট্রেনিং। স্পেশাল শিশুদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এত আয়োজনের জন্য প্রয়োজন লজিস্টিক ও ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট, এমনটাই মনে করেন স্পেশাল স্কুলটির অধ্যক্ষ মাহমুদা আকতার। একই কথা বললেন স্পেশাল স্কুলটির একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর সবুজ মিয়া।

সর্বশেষ খবর