শিরোনাম
শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ডা. রুহুল আমিনের উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন নওগাঁর সাপাহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

বাহারি ফুলে সাজানো অন্যরকম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

♦ সিঁড়ির ধাপ, দেয়াল ও করিডোরে লেখা রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবার্তা ♦ খেলনা দিয়ে সাজানো শিশু কর্নার

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

বাহারি ফুলে সাজানো অন্যরকম  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার। এ উপজেলার সেবার মান নিশ্চিত করতে ১৯৮২ সালে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১৯৮৮ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হয়। পরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট শিশুবান্ধব হাসপাতাল নামে পরিচিতি অর্জন করে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন উন্নয়নের মাঝে স্থান পেয়েছে হাসপাতালের চারপাশে মিনি পার্কের আদলে তৈরি ফুল বাগিচা। যা সাধারণ রোগীসহ পর্যটকদেরও মন কাড়ছে। হাসপাতালের পুরো চত্বরজুড়ে বাহারি ফুল আর সবুজের সমারোহ। ঝকঝকে তকতকে হাসপাতালটির ভিতরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনের বারান্দায় টবে ও গ্রিলে এবং ভবনের ছাদেও শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুল, পাতাবাহার ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী বিভিন্ন গাছ। এ ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে মিনি শিশু পার্ক ও শিশু ওয়ার্ডের পাশে রয়েছে শিশুদের খেলার স্থান কিডস জোন। হাসপাতালটিতে সেবা নিয়েও এলাকার মানুষ সন্তুষ্ট। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিত্র কিছুদিন আগেও ছিল অন্যরকম। হাসপাতাল চত্বরে খোলা জায়গা পতিত অবস্থায় পড়েছিল। ওইসব স্থানে সারা বছর ময়লা-আবর্জনা ও কাদা-পানিতে ভরে থাকত। তবে এখন হাসপাতালের পতিত জায়গাগুলো যেন হেসে উঠেছে। হাসপাতালের ভিতরে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বারান্দা প্রায় সময়ই অপরিচ্ছন্ন থাকত। আর এখন ঝকঝকে ও তকতকে। এই পরিবর্তনের জন্য যে মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে পরিষ্কার রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে নানা ধরনের ফুল গাছ। একটু ভিতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে মিনি পার্কের আদলে গঠিত সুসজ্জিত ফুল বাগিচা। হরেক রকম বাহারি ফুলের গাছ। ফুটে আছে লাল, নীল, হলুদসহ নানান রং-বেরঙের ফুল। একদিকে ঝরনার পানি সংরক্ষিত রাখার ছোট একটি চৌবাচ্চা। লম্বা হয়ে নেতিয়ে পড়েছে বাহারি ফুলের ডাল। চারদিকে ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। এ যেন মুগ্ধতার এক অপরূপ দৃশ্য যা সত্যিই যেন মন কাড়ার মতো। আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে দৃষ্টি পড়ে বনজ ও ঔষধি গাছের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাগান। এখানে শোভা পাচ্ছে নানা রকম বনজ ও ঔষধি গাছ। এর পাশেই শোভা পাচ্ছে শান বাঁধানো দৃষ্টিনন্দন পুকুর ঘাট। অপরদিকে দৃষ্টি ফেরাতেই চোখে পড়বে কয়েকটি দোলনা। যাতে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিশুরা মনের আনন্দে দোল খাচ্ছে। কোয়ার্টারের দেয়ালগুলোতে নানা রকম চিত্রকর্মও যেন নজর কাড়ার মতো। একদিকে টবে সাজানো নানা রকম পাতা বাহারের গাছ। একই টবে রোপণ করা হয়েছে নানা রকম শাক পাতার গাছ। একদিকে যেমন সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে অপরদিকে স্বাস্থ্যসম্মত শাক পাতাও পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এ যেন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে শিশু কর্নার। বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য নানাবিধ খেলনা দিয়ে সাজানো হয়েছে এই শিশু কর্নার। হাসপাতালের ভিতরে রোগী ও পর্যটকদের গাড়ি রাখার সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি গ্যারেজ। এখানে নিরাপদে গাড়ি রেখে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে সাধারণ রোগীরা। এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। মনমতো চিকিৎসাসেবা পাওয়ার পরে অনেকে ফুল গাছের সঙ্গে মেতে ওঠেন ছবি উঠানোর জন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ডা. রুহুল আমিন ও তার টিম। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আজকের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পরিবেশগত উন্নতি ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা অনন্য অবদান রেখে চলেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেই সেবার ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাসিক প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ রেটিংসে এই কমপ্লেক্সটি গত ডিসেম্বরে রাজশাহী বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। স্বাভাবিক প্রসব, সিজারিয়ান অপারেশন, প্রসব পূর্ব ও পরবর্তী সেবা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য সেবা দেওয়ার জন্য এ রেটিং অর্জন করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর সারা দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে বিভিন্ন ইনডিকেটর বা পরিমাপক দ্বারা পর্যালোচনা করে এই রেটিং করে থাকে। জরুরি বিভাগের সামনে লেখা শিশুবান্ধব হাসপাতাল। তার পাশেই বিশাল এক মানচিত্রে পুরো সাপাহার উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র দেওয়া রয়েছে। উপজেলার কোথায় কোন ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক সেই তথ্য ও জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে ওই মানচিত্রে। ৫০ শয্যার হাসপাতালের মূল ভবনের ভিতরেও পরিচ্ছন্নতার ছাপ। প্রতিটি ভবনের বারান্দায় টবে ও গ্রিলে শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ। সব কক্ষ, বারান্দা, ওয়ার্ড ও টয়লেটের মেঝে ও দেয়াল ঝকঝকে-তকতকে। হাসপাতালের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ, দেয়াল ও করিডোরে লেখা রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবার্তা। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কক্ষের দেয়াল এবং করিডোরের দেয়ালে আলপনা আর প্রাসঙ্গিক চিত্রকর্ম পুরো হাসপাতালের পরিবেশকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। প্রতিটি ওয়ার্ডের সামনে খাবার জন্য নির্দিষ্ট স্থান করা হয়েছে। যেখানে টেবিল-চেয়ারে বসে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে।

হাসপাতালের এই পরিবর্তন সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন আমি এখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেই তখন থেকেই আমি ও আমার টিম তিনটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করি। সেগুলো হলো- সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ তৈরি, অচল, অর্ধসচল যন্ত্রপাতি ও লজিস্টিক্সের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং মানসম্মত চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার। আমাদের হাসপাতালের পরিবেশ উন্নত করতে আমি যোগদানের প্রথম দিন থেকেই কাজ করি। এ ছাড়া ধাপে ধাপে অন্যান্য লক্ষ্য অর্জন করার চেষ্টা করেছি। হাসপাতালে আসার পর থেকে দেখি নানান রকম জিনিস-পত্রাদির অভাব রয়েছে। কিছু জায়গা অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। আমি সে জায়গাগুলো লোক লাগিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফুলের গাছ লাগানোসহ একটা সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি।  হাসপাতালের চিকিৎসাসেবাসহ বাইরের সব দৃশ্য সর্বস্তরের মানুষের নজর কাড়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের দেখে অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।  বর্তমানে একটি পরিত্যক্ত জায়গা পরিষ্কার করে নানা রকম ফলের  বাগান করার কাজ চলছে।

সর্বশেষ খবর