শিরোনাম
শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

বীরগঞ্জের মমতা বেওয়া

সুঁই আর সুতায় ভাগ্য বদল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

বীরগঞ্জের মমতা বেওয়া

সুঁই আর সুতায় নকশা বুনে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন গ্রামীণ জনপদের জীবন যুদ্ধে জয়ী মমতা বেওয়া। তিনিসহ অনেক নারীই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন তার হাত ধরে। গ্রামীণ জনপদের এসব নারীর কুশন কভার, সুতার ম্যাট, নকশিকাঁথা, পাটের তৈরি পাপোশ, পাটের ব্যাগ ও ড্রাম বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন নামকরা শপিং মলে। শুধু নিজের জীবনের গল্পই নয়, সুঁই-সুতার কারুকাজে বদলে দিয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের আরও সহস্রাধিক নারীর জীবন। সংসারের পাশাপাশি বুননের কাজ করে এখন তারা বাড়তি আয় করছেন। সুঁই আর সুতায় নিজের ভাগ্য বদলানো ছাড়াও অন্যের কাছে অনুকরণীয় মমতা বেওয়া দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউপির মাস্টারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে একজন সফল মানুষ মমতা বেওয়া সবার কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই তিনি এখন সবার কাছে ‘মমতা দিদি’ নামে পরিচিত। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার মতো আরও অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। ২০০৫ সালের স্বামী কালিপদ রায় স্ট্রোকে মারা যান। এ সময় তার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তিন সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাতেন। সারা দিন পাড়া-মহল্লায় হাতপাখা বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়ে চালাতেন সংসার। একদিকে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ অন্যদিকে সংসারের খরচ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সমস্যা আর হতাশা যেন পিছু ছাড়ছিল না মমতার। সে সময়ে তিনি আরডিআরএস-এর সাহায্যে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন কারুকাজ। তার এই কারুকাজই ভাগ্য বদলের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। আজ তিনি একজন ক্ষুদ্র সফল নারী উদ্যোক্তা। নিজের জীবন যেমন বদলেছেন, তেমনি স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তার মতো হাজারো নারীকে। তাই তিনি আজ বীরগঞ্জে সবার কাছে ‘মমতা দিদি’ নামে পরিচিত। ২০০৭ সালে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে শুরু করেন সুতার তৈরি ম্যাটের কাজ এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করেন। সুন্দর কারুকাজ ও মানসম্মত হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়ে যায় অর্ডার। ক্ষুদ্র ঋণ ও অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনাগুলো পরিশোধের পরের মাসে ৩০ হাজার টাকার কাজ পান মমতা। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। শুধুই এগিয়ে যাওয়ার গল্প। এ ব্যাপারে মমতা বেওয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাস্টারপাড়া গ্রাম ছাড়াও বীরগঞ্জের বাইরেও তার বুননের এই কাজ চলছে। প্রথম মাসে ১০ হাজার টাকা, এরপর থেকে ২০ হাজার আবার কোনো কোনো মাসে ৫০ হাজার টাকার কাজও করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, যারা তার ক্রেতা ছিলেন তারা কুশন কভার, সুতার ম্যাট, নকশিকাঁথা, পাটের তৈরি পাপোশ, পাটের ব্যাগ ও ড্রাম কেনার পর তার কাজের খুব প্রশংসা করতেন। ক্রেতাদের প্রশংসা তার মনোবল ও সাহস আরও বাড়িয়ে দেয়। সময়ের সঙ্গে অর্ডার বাড়তে থাকে। এর মধ্যে কিন্তু পুঁজি না থাকায় আটকে যান। কিন্তু থেমে থাকেননি। আবারও বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে শুরু করেন কাজ। চেষ্টা থাকলে যে কোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন। পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করে উদ্যোক্তা হতে। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, চাকরি করব না, চাকরি দেব। মমতার বড় ছেলে তপন রায় জানান, যেসব এলাকায় আমাদের সেলাইয়ের কাজ হয় সেখানে একজন দলনেত্রী আছেন। প্রত্যেক দলনেত্রীসহ সব নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। এ জন্য সরকার যদি আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে আরও উদ্যোক্তা বেরিয়ে আসবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর