শনিবার, ১৪ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
অনুপ্রেরণীয়

প্রতিবন্ধীদের জন্য লাভলুর যান্ত্রিক হাত

♦ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন তারা ♦ বিভিন্ন দেশ থেকে মিলছে সাড়া

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

প্রতিবন্ধীদের জন্য লাভলুর যান্ত্রিক হাত

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামের তরুণ জয় বড়–য়া লাভলু। যার উদ্ভাবন প্লাস্টিক আর সিলিকনের তৈরি কৃত্রিম হাতের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখছে দেশ-বিদেশের অনেক জন্ম প্রতিবন্ধী মানুষ। জয়ের তৈরি এ হাত সাড়া দেয় মানুষের স্নায়বিক আবেদনে। কৃত্রিম হাতটি বিভিন্ন নার্ভের সঙ্গে যুক্ত করে দিলেই কাজ করে অনেকটা স্বাভাবিক হাতের মতোই। যার ফলে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে আগ্রহ দেখিয়েছে জয়ের কৃত্রিম হাত নিয়ে। এরই মধ্যে হাত রপ্তানি হয়েছে তুরস্কে। ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর সাড়া মিলেছে। জয়ের দাবি- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলেই কৃত্রিম হাতে বিশ^ জয় করবে বাংলাদেশ। প্রতিবন্ধী জীবন থেকে মুক্ত হবে লাখো মানুষ।

জয় বড়–য়া লাভলু বলেন, ভয়েস কন্ট্রোলিং, লেগ কন্ট্রোলিং, অটো টাচ কন্ট্রোলিং, ইএমজি কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে কাজ করে এ হাত। এরই মধ্যে তার উদ্ভাবন দেশ ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে দেশে পাঁচজন মানুষকে রোবটিক হাত দিয়েছেন। দেশের বাইরে তুরস্কে একটি রোবটিক হাত রপ্তানি করেছেন। এ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও সাড়া মিলেছে। এ হাতের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী জীবন থেকে মুক্ত হবে লাখ লাখ মানুষ।’

স্কুলে পড়াকালে ঘরের রেডিও বা ইলেকট্রনিক কোনো যন্ত্র নষ্ট হলে নিজেই ঠিক করার চেষ্টা করতেন জয়। এ সময় তাকে সহায়তা করতেন তার বাবা। জোবরা পি পি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন রোবট তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর থেকে স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী সবার কাছে ‘বিজ্ঞানী নিউটন’ হিসেবে পরিচিত পান। ‘নিউটন’ পরিচিতিই তাকে জোগায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার রসদ। এরই মাঝে তিনি লক্ষ্য করলেন এক প্রতিবেশীর হাত নেই। কাটা হাত তিনি গামছা দিয়ে ঢেকে রাখেন। যা দেখে মনে দাগ কাটে জয়ের। তখনই মাথায় আসে কৃত্রিম হাত তৈরি করার। ২০১৭ সালে নেমে পড়েন কৃত্রিম হাত উদ্ভাবনে। জয় ও তার টিমের প্রচেষ্টায় উদ্ভাবন হয় রোবটিক হাত। কৃত্রিম এ হাত যে কোনো দিকে ঘোরানো, মুষ্টিবদ্ধ করা, যে কোনো জিনিস ধরে ওপরে তোলার কাজ করা যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে পানি তুলেও খাওয়া যায়। জয় বড়–য়ার তৈরি হাতের জন্য ব্যয় হবে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। হাতের পাশাপাশি রোবটিক নিয়ে আছে তার অসংখ্য কাজ। এরই মধ্যে বানিয়েছেন হোম ক্লিনিং রোবট। কৃষক সহায়তায় উদ্ভাবন করেছেন উভচর রোবট, রোবটিক হ্যান্ড, ওয়্যারলেস হ্যান্ড, ইএমজি কন্ট্রোল রোবটিক হ্যান্ড, হেড মেসেজ ডিভাইজ, এলিন ওয়ান ফিউচার কার, রোপ ক্যামেরা, ওয়্যারলেস ক্যামেরা, কথা বলা রোবট, রোবটিকস মুখ ইত্যাদি।

জয় বড়–য়া লাভলু বলেন, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কিংবা বিপজ্জনক ফ্যাক্টরিতে কাজ করার জন্য তৈরি করেছেন ওয়্যারলেস রোবটিক হাত। মূলত বিপজ্জনক কাজের সময় এ রোবটিক্স ওয়্যারলেস হাত মানুষ ব্যবহার করতে পারবে। যেটা কন্ট্রোল করা হবে মানুষের হাতের সঙ্গে লাগানো একটি ট্রান্সমিটারের সাহায্যে। এর ফলে যে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে শ্রমিকরা তাদের হাতকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।

২০১৯ সালে নাসা স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জে চট্টগ্রাম থেকে প্রথম স্থান অর্জন করে জয় বড়–য়া ও তার দল। এসো রোবট বানাই টিভি শোতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন লাভলু। ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘আবিষ্কারের খোঁজে’ প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট রানার্স আপসহ নানান উদ্ভাবনী পুরস্কার পান জয়। গুগল ভেরিফাইড ওয়েবসাইট (Analytics Insight) বিশ্বের দশজন তরুণ রোবটিক্স গবেষকদের তালিকায় উঠে এসেছে জয় বড়–য়া লাভলুর নাম। এতে লাভলু ছাড়া বাকি নয়জনই উন্নত বিশ্বের রোকটিক্স গবেষক।

সর্বশেষ খবর